উত্তরবঙ্গে অভিষেক-পিকে, চলছে ক্ষত মেরামত, চাঙ্গা হচ্ছে তৃণমূল

বিধানসভা ভোটে দলকে একজোট করে লড়াইয়ের অঙ্গীকার। আর এই ‘মিশন’ নিয়ে সোমবার উত্তরবঙ্গে এসেছেন যুব তৃণমূল সভাপতি, সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং সঙ্গে অবশ্যই ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। উত্তরবঙ্গে দলের মধ্যে কোথাও কোথাও ফাটল দেখা গিয়েছে, মনোমালিন্যও রয়েছে। সেই সব মান-অভিমান-অভিযোগ পর্বকে মেরামত করে একযোগে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতেই অভিষেকের এই সফর। সোমবার বিকেল থেকে রাত অবধি টানা বৈঠক করেন দুজনে। আজ, মঙ্গলবারও সেই বৈঠক অব্যাহত থাকবে।

বৈঠকে বিধায়ক, জেলা সভাপতি, যুব সভাপতি, দলের রাজ্য কমিটির সদ্যদের বাইরে আরও কয়েকজন নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন অভিষেক। দীর্ঘ আলোচনা হয় দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারের নেতাদের সঙ্গে। অন্তরালে থেকে দলকে ঢেলে সাজানো এবং নেতিবাচক দিকগুলি মেরামত করার চেষ্টা বহুদিন থেকে করছেন অভিষেক। এক্ষেত্রে অভিষেক-পিকে জুটির কাছে জেলাভিত্তিক যে রিপোর্ট রয়েছে, তার ভিত্তিতেই আলোচনা এগোয়। উত্তরবঙ্গে দলের সাংগঠনিক ত্রুটি তো রয়েইছে। সেইসঙ্গে একের বিরুদ্ধে অন্যের অভিযোগ, একসঙ্গে কাজ না করার প্রবণতা এবং দলত্যাগের শঙ্কা কীভাবে দূর করা যায়, তা নিয়ে আলোচনায় অভিষেক প্রত্যেকের মত শোনেন। এর মাঝে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ১৭ অক্টোবর আসছেন উত্তরবঙ্গে। প্ররোচনা ও প্রলোভন থাকবে। থাকবে চক্রান্তও। তাই অমিতের সফরের আগে দলকে একজোট রাখাই আপাতত দলের ‘মিশন ফার্স্ট’।

অভিষেক-পিকে জুটিকে সবচেয়ে ভাবিয়েছে ভোটের আগে দলত্যাগের সম্ভাবনা। কয়েকজন নেতাকে নিয়ে নানা মহলে গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। অভিষেক অবশ্য এই গুঞ্জনকে বিশেষ ধর্তব্যে আনতে চাইছেন না। তবে সতর্ক তিনি। গুঞ্জন যাতে সমূলে উৎপাটিত করা যায়, তারজন্য সমস্যা বোঝার চেষ্টা করে কর্মসূচি তৈরি করে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিতে বলেছেন।

বৈঠকে অসুস্থতার কারণে ছিলেন না রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। ছিলেন না বিধায়ক মিহির গোস্বামী। কেন আসেননি, সে নিয়ে কথা হচ্ছে। ছিলেন কোচবিহারের উদয়ন গুহ, পার্থপ্রতিম রায়, বিনয়কৃষ্ণ বর্মন, অর্ঘ্য রায় প্রধান, হিতেন বর্মন সহ নেতারা। জলপাইগুড়ির কিসান কল্যাণী, সৈকত চট্টোপাধ্যায়। দার্জিলিঙয়ের গৌতম দেব, কুন্তল রায়, রঞ্জন সরকার, বিকাশ সরকার প্রমুখ। আজ বৈঠকের দ্বিতীয় দিনে মালদহ থেকে আসছেন মৌসম নূর, কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীরা।

অভিষেক মূলত জানতে চান, ১. কেন একে অন্যের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিচ্ছেন? ২. কেন প্রকাশ্য বক্তব্যে অস্বস্তিকর মন্তব্য করা হচ্ছে? ৩. একসঙ্গে চলার ক্ষেত্রে বাধা কোথায়? প্রত্যেকের কাজ নির্দিষ্ট থাকলে সমস্যা হচ্ছে কোথায়? ৪. বিজেপির দল ভাঙার চক্রান্ত রুখতে কী কী পদক্ষেপ করা উচিত? ৫. সরকারি প্রকল্পের প্রচার আরও কীভাবে তৃণমূল স্তরে পৌঁছে দেওয়া যায়? ৬. সরকারের বকেয়া কাজ আগামী তিন মাসে শেষ করতে কী কী পদক্ষেপ করা উচিত? ৭. পুজোর পর থেকে একটানা কর্মসূচি সাজিয়ে মানুষের দরজায় দরজায় যাওয়া। যা পেরেছি তা বলা, যা পারিনি, কেন পারিনি তা স্পষ্টভাবে মানুষকে জানানো।

সমস্যার গভীরে ঢুকে ক্ষত মেরামত যে অনেকটাই করা সম্ভব হচ্ছে, তা দলের নেতারাই বৈঠক শেষে জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, প্রতি মাসে অভিষেক-পিকে টিম এই বৈঠক করলে অচিরেই উত্তরবঙ্গের চেহারা পাল্টে যাবে। তৃণমূল আবার স্বমহিমায় ফিরবে উত্তরে।

আরও পড়ুন:হাথরসের গণধর্ষণ-খুনের ঘটনা নিয়ে নীরবতা ভাঙুন, মোদিকে তীব্র কটাক্ষ অভিষেকের

 

Previous articleবিধি ভেঙ্গেই দুর্গাপুজোর যাত্রা শুরু
Next articleবেলেঘাটায় ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ, উড়ে গেল ক্লাবের ছাদ! তারপর?