Saturday, July 12, 2025

বিধি ভেঙ্গেই দুর্গাপুজোর যাত্রা শুরু

Date:

Share post:

Morning shows the day.

বিধি লঙ্ঘন করেই ২০২০ সালের দুর্গাপুজোর তথাকথিত ‘বোধন’ হলো সোমবার!

আশঙ্কা এমনই তো ছিলো৷ পুলিশ ও প্রশাসনের জারি করা দুর্গাপুজো- প্রোটোকল থাকবে কাগজে, আর পুজো উদ্যোক্তারা সেই বিধিকে ফাঁটা বাঁশে ঝুলিয়ে পুজো করবেন নিজেদের ইচ্ছা-স্বাধীনভাবেই৷ আর সবাই থাকবো দর্শক হয়েই৷ এই তো সবে শুরু, এবার টানা চলবে বিধি তোয়াক্কা না করার মহোৎসব৷ কোভিড- বেডের সংখ্যা বৃদ্ধি করেই কি মহাপ্রলয় ঠেকানো যাবে ? আমরা চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েই যাবো, আর সংকট নিয়ন্ত্রণের গেলে সরকারের সমালোচনা করবো, রাজ্যে এটাই কি কোভিড মোকাবিলার একমাত্র পথ ?

সঙ্কটের বছরের মহাপুজোর শুরুটা এভাবেই হলো৷ দিন যত এগোবে, ততই বৃদ্ধি পাবে পুজো-সংক্রান্ত বিধি ভঙ্গ করার ঘটনা৷ ভোটের বছরে স্পর্শকাতর পুজো-ইস্যুতে কঠিন পদক্ষেপ করা হয়তো পুলিশের পক্ষে সম্ভব হবেনা৷
ওদিকে সবাই জানি, কেরলের ওনাম উৎসবের পর ওই রাজ্যে দুরন্ত গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে আক্রান্তের সংখ্যা৷ আগস্টের মাঝামাঝি ওই রাজ্যে দৈনিক করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো গড়ে ১৫০০-১৬০০ জন৷ কেরলে ওনাম পালিত হয় ৩১ আগস্ট ৷ সেপ্টেম্বরের ১ তারিখে কেরলে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো ১,৫৪৫ জন৷ ১৫ তারিখে তা দাঁড়ায় ৩,৪১৫ জনে৷ ১ অক্টোবরে দাঁড়ায় ৮,২৮২ জন৷ ১০ অক্টোবরে এই সংখ্যা পৌঁছে গিয়েছে ১১, ৭৫৫ জনে৷ কেরলের এই চিত্র বা তথ্য জানার পরেও কার্যত হেলদোল নেই এ রাজ্যের৷ পুজো সংক্রান্ত ৩৪৮ পাতার এক নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে কলকাতা পুলিশ৷ দুর্গাপুজোকে নিরাপদ করতে চেষ্টার ক্রটি রাখা হচ্ছেনা৷ একের পর বিধি ঘোষিত হচ্ছে প্রশাসনের তরফে৷ কিন্তু এই সব বিধি কী শুধুই দায় এড়ানোর জন্য ? শারদোৎসবে বিধিভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারার স্বাধীনতা পুলিশের আছে তো ? না’কি গোটাটাই নিয়ন্ত্রণ করছে ভোট-রাজনীতি ?

সাত সকালে এত কথা বলার কারন একটি ছবি, যেটি কলকাতার এক বাংলা সংবাদপত্রে মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে ৯-এর পাতায়৷ পুলিশ বা প্রশাসনকে এবং তাদের জারি করা পুজো-বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখানো কি এটাই শুরু ?

কি আছে মঙ্গলবার প্রকাশিত ওই ছবি তথা সংশ্লিষ্ট সংবাদে ?
লেখা হয়েছে, “এ বার কুমোরটুলিতে ঠাকুর আনতে ক্লাবের ৩ জনের বেশি যেতে পারবে নি, সে কথা ক’দিন আগেই সাফ জানিয়েছিল প্রশাসন৷ অথচ সোমবার সন্ধ্যায় উত্তর কলকাতারকাশী বোস লেনের ঠাকুর আনতে রীতিমতো মিছিল করে শ্যামবাজারের স্টুডিয়ো গেলেন প্রায় জনা পনেরো সদস্য ৷ লরিতে নয়, ক্লাব সদস্যদের হাততালি আর ছবি তোলার হিড়িকের মধ্যে রাত ১১টা নাগাদ প্রতিমা আনা হলো লোহার কাঠামো বসিয়ে, রাস্তা দিয়ে টেনে৷ সবারই সাফাই, মুখে মাস্ক আছে, সঙ্গে স্যানিটাইজারও৷ কিন্তু প্রশাসনের বারণ যে ? এক সদস্যের উত্তর, ” তাই বলেছে নাকি, জানি না তো ?”
কলকাতা পুলিশ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে, ১৬ অক্টোবর দুপুর থেকে করোনা-বিধি মেনে মণ্ডপে প্রতিমা নিয়ে যেতে পারবেন উদ্যোক্তারা ৷ কোন কোন রাস্তা দিয়ে প্রতিমা মণ্ডপের দিকে নিয়ে যাওয়া যাবে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সোমবার নির্দেশিকাও জারি করেছে কলকাতা পুলিশ ৷ এক একটি পুজো কমিটি যাতে ৩ থেকে ৬ জনের বেশি সদস্যকে প্রতিমা আনতে না পাঠায়, সে কথাও বলা হয়েছে পুলিশের বিধিতে৷ লালবাজার ওই নির্দেশিকাতে বলেছে, ১৬ অক্টোবর দুপুর ২টো থেকে ২২ অক্টোবর ভোর ৪টে পর্যন্ত মৃৎশিল্পীদের স্টুডিও থেকে প্রতিমা নেওয়া যাবে৷

এই বিধি লালবাজার যেদিন ঘোষণা করেছে, সেদিন মহা উৎসাহে সেই বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঘোষিত তারিখের ৪দিন আগে, ১২ তারিখেই মণ্ডপে প্রতিমা নিয়ে গেলো কাশী বোস লেন৷ বিধিতে বলা আছে ৩-৬ জন প্রতিমা নিয়ে যেতে পারবেন, কাশী বোস লেনের প্রতিমা নিয়ে গেলেন জনা পনেরো সদস্য ৷ এবং কোনও লরি বা অন্য কোনও বাহনে নয়, প্রতিমা মণ্ডপে গেলো লোহার কাঠামোয় বসিয়ে, হাতে টেনে৷

সুতরাং ২০২০-এর দুর্গাপুজো শুরুই হলো প্রকাশ্যে বিধি ভেঙ্গে, পুলিশ প্রশাসনের জ্ঞাতসারেই৷ এবার মঙ্গলবার থেকেই কাশী বোস লেনের মণ্ডপে জমবে ভিড়, সোশ্যাল ডিসট্যান্সের তোয়াক্কা না করেই৷
গত কয়েকদিন ধরে এই আশঙ্কাই প্রকাশ করা হচ্ছিলো৷ বিধি থাকবে কাগজে আর বক্তৃতায়, এ বছরও যে যার খুশি মতো ‘মায়ের আরাধনা’ করবেন৷ প্রশাসন সেভাবে কিছুই করতে পারবে না স্পর্শকাতর এই ইস্যুতে এবং নির্বাচনের প্রাক্কালে৷

ক্রমশই স্পষ্ট হচ্ছে, কেরলের ওনাম উৎসব এবং তার পরের করোনা-সুনামি থেকে বাংলার দুর্গাপুজো কোনও শিক্ষা নিতেই রাজি নয়৷

আমরা বরং ‘সাগ্রহে এবং আন্তরিকতা’র সঙ্গে এবারের পুজোয় বরণ করি করোনা-কেই৷

কেরলের থেকে সম্ভবত আমরা অনেক এগিয়ে সব দিক থেকে৷ তাই ভাইরাস আমাদের ত্রিসীমানায় আসবে না, আমরা নিশ্চিত৷

হয়তো ওই ভাইরাস -ই এমন কথা দিয়েছে, কে জানে!

আরও পড়ুন:দশভুজার আগমন লগ্নে মুখ্যমন্ত্রীর কথা ও সুরে প্রকাশিত নতুন গানের সংকলন ‘সৃষ্টি’

spot_img

Related articles

ঘরে বাবার মৃতদেহ, কর্তব্যে অবিচল চুঁচুড়ার চিকিৎসক

তাঁর কর্তব্যপরায়ণতা মনে করিয়ে দিল অগ্নিশ্বরকে। বরাবরই তিনি ব্যতিক্রমী, তবে শুক্রবার তাঁকে একেবারে ভিন্ন রূপে দেখলেন তাঁর রোগী...

৩০ বছরের পথচলার উৎসব: চারদিন রবীন্দ্র সরণিতে ‘দুর্বার’

যৌনকর্মীদের অধিকারের পক্ষে তিন দশকের নিরবচ্ছিন্ন লড়াইয়ের স্মারক অনুষ্ঠান। ১২ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত উত্তর কলকাতার রবীন্দ্র...

এক দেশ এক ভোট উপহাসে পরিণত হতে পারে: দাবি দুই প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির

এক দেশ এক ভোট- কেন্দ্রীয়  সরকারের  ভাবনায় অনেক আইনি জটিলতা আছে।  এই পদক্ষেপ দেশের সাংবিধানিক নির্বাচনী পরিকাঠামোকে উপহাসে...

নতুন ঘাস বারাসত ময়দানে: পরিদর্শনে ক্রীড়ামন্ত্রী

খুব শীঘ্র খুলে যাবে বারাসত স্টেডিয়াম (Barasat Stadium)। প্রস্তুতি তুঙ্গে। কেমন চলছে উত্তর চব্বিশ পরগণার গুরুত্বপূর্ণ এই ময়দানের...