বিধি ভেঙ্গেই দুর্গাপুজোর যাত্রা শুরু

কণাদ দাশগুপ্ত

প্রশাসন ঘোষিত নির্দিষ্ট তারিখের ৪ দিন আগেই মণ্ডপের পথে কাশী বোস লেনের প্রতিমা, সোমবার রাতে

Morning shows the day.

বিধি লঙ্ঘন করেই ২০২০ সালের দুর্গাপুজোর তথাকথিত ‘বোধন’ হলো সোমবার!

আশঙ্কা এমনই তো ছিলো৷ পুলিশ ও প্রশাসনের জারি করা দুর্গাপুজো- প্রোটোকল থাকবে কাগজে, আর পুজো উদ্যোক্তারা সেই বিধিকে ফাঁটা বাঁশে ঝুলিয়ে পুজো করবেন নিজেদের ইচ্ছা-স্বাধীনভাবেই৷ আর সবাই থাকবো দর্শক হয়েই৷ এই তো সবে শুরু, এবার টানা চলবে বিধি তোয়াক্কা না করার মহোৎসব৷ কোভিড- বেডের সংখ্যা বৃদ্ধি করেই কি মহাপ্রলয় ঠেকানো যাবে ? আমরা চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েই যাবো, আর সংকট নিয়ন্ত্রণের গেলে সরকারের সমালোচনা করবো, রাজ্যে এটাই কি কোভিড মোকাবিলার একমাত্র পথ ?

সঙ্কটের বছরের মহাপুজোর শুরুটা এভাবেই হলো৷ দিন যত এগোবে, ততই বৃদ্ধি পাবে পুজো-সংক্রান্ত বিধি ভঙ্গ করার ঘটনা৷ ভোটের বছরে স্পর্শকাতর পুজো-ইস্যুতে কঠিন পদক্ষেপ করা হয়তো পুলিশের পক্ষে সম্ভব হবেনা৷
ওদিকে সবাই জানি, কেরলের ওনাম উৎসবের পর ওই রাজ্যে দুরন্ত গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে আক্রান্তের সংখ্যা৷ আগস্টের মাঝামাঝি ওই রাজ্যে দৈনিক করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো গড়ে ১৫০০-১৬০০ জন৷ কেরলে ওনাম পালিত হয় ৩১ আগস্ট ৷ সেপ্টেম্বরের ১ তারিখে কেরলে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো ১,৫৪৫ জন৷ ১৫ তারিখে তা দাঁড়ায় ৩,৪১৫ জনে৷ ১ অক্টোবরে দাঁড়ায় ৮,২৮২ জন৷ ১০ অক্টোবরে এই সংখ্যা পৌঁছে গিয়েছে ১১, ৭৫৫ জনে৷ কেরলের এই চিত্র বা তথ্য জানার পরেও কার্যত হেলদোল নেই এ রাজ্যের৷ পুজো সংক্রান্ত ৩৪৮ পাতার এক নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে কলকাতা পুলিশ৷ দুর্গাপুজোকে নিরাপদ করতে চেষ্টার ক্রটি রাখা হচ্ছেনা৷ একের পর বিধি ঘোষিত হচ্ছে প্রশাসনের তরফে৷ কিন্তু এই সব বিধি কী শুধুই দায় এড়ানোর জন্য ? শারদোৎসবে বিধিভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারার স্বাধীনতা পুলিশের আছে তো ? না’কি গোটাটাই নিয়ন্ত্রণ করছে ভোট-রাজনীতি ?

সাত সকালে এত কথা বলার কারন একটি ছবি, যেটি কলকাতার এক বাংলা সংবাদপত্রে মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে ৯-এর পাতায়৷ পুলিশ বা প্রশাসনকে এবং তাদের জারি করা পুজো-বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখানো কি এটাই শুরু ?

কি আছে মঙ্গলবার প্রকাশিত ওই ছবি তথা সংশ্লিষ্ট সংবাদে ?
লেখা হয়েছে, “এ বার কুমোরটুলিতে ঠাকুর আনতে ক্লাবের ৩ জনের বেশি যেতে পারবে নি, সে কথা ক’দিন আগেই সাফ জানিয়েছিল প্রশাসন৷ অথচ সোমবার সন্ধ্যায় উত্তর কলকাতারকাশী বোস লেনের ঠাকুর আনতে রীতিমতো মিছিল করে শ্যামবাজারের স্টুডিয়ো গেলেন প্রায় জনা পনেরো সদস্য ৷ লরিতে নয়, ক্লাব সদস্যদের হাততালি আর ছবি তোলার হিড়িকের মধ্যে রাত ১১টা নাগাদ প্রতিমা আনা হলো লোহার কাঠামো বসিয়ে, রাস্তা দিয়ে টেনে৷ সবারই সাফাই, মুখে মাস্ক আছে, সঙ্গে স্যানিটাইজারও৷ কিন্তু প্রশাসনের বারণ যে ? এক সদস্যের উত্তর, ” তাই বলেছে নাকি, জানি না তো ?”
কলকাতা পুলিশ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে, ১৬ অক্টোবর দুপুর থেকে করোনা-বিধি মেনে মণ্ডপে প্রতিমা নিয়ে যেতে পারবেন উদ্যোক্তারা ৷ কোন কোন রাস্তা দিয়ে প্রতিমা মণ্ডপের দিকে নিয়ে যাওয়া যাবে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সোমবার নির্দেশিকাও জারি করেছে কলকাতা পুলিশ ৷ এক একটি পুজো কমিটি যাতে ৩ থেকে ৬ জনের বেশি সদস্যকে প্রতিমা আনতে না পাঠায়, সে কথাও বলা হয়েছে পুলিশের বিধিতে৷ লালবাজার ওই নির্দেশিকাতে বলেছে, ১৬ অক্টোবর দুপুর ২টো থেকে ২২ অক্টোবর ভোর ৪টে পর্যন্ত মৃৎশিল্পীদের স্টুডিও থেকে প্রতিমা নেওয়া যাবে৷

এই বিধি লালবাজার যেদিন ঘোষণা করেছে, সেদিন মহা উৎসাহে সেই বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঘোষিত তারিখের ৪দিন আগে, ১২ তারিখেই মণ্ডপে প্রতিমা নিয়ে গেলো কাশী বোস লেন৷ বিধিতে বলা আছে ৩-৬ জন প্রতিমা নিয়ে যেতে পারবেন, কাশী বোস লেনের প্রতিমা নিয়ে গেলেন জনা পনেরো সদস্য ৷ এবং কোনও লরি বা অন্য কোনও বাহনে নয়, প্রতিমা মণ্ডপে গেলো লোহার কাঠামোয় বসিয়ে, হাতে টেনে৷

সুতরাং ২০২০-এর দুর্গাপুজো শুরুই হলো প্রকাশ্যে বিধি ভেঙ্গে, পুলিশ প্রশাসনের জ্ঞাতসারেই৷ এবার মঙ্গলবার থেকেই কাশী বোস লেনের মণ্ডপে জমবে ভিড়, সোশ্যাল ডিসট্যান্সের তোয়াক্কা না করেই৷
গত কয়েকদিন ধরে এই আশঙ্কাই প্রকাশ করা হচ্ছিলো৷ বিধি থাকবে কাগজে আর বক্তৃতায়, এ বছরও যে যার খুশি মতো ‘মায়ের আরাধনা’ করবেন৷ প্রশাসন সেভাবে কিছুই করতে পারবে না স্পর্শকাতর এই ইস্যুতে এবং নির্বাচনের প্রাক্কালে৷

ক্রমশই স্পষ্ট হচ্ছে, কেরলের ওনাম উৎসব এবং তার পরের করোনা-সুনামি থেকে বাংলার দুর্গাপুজো কোনও শিক্ষা নিতেই রাজি নয়৷

আমরা বরং ‘সাগ্রহে এবং আন্তরিকতা’র সঙ্গে এবারের পুজোয় বরণ করি করোনা-কেই৷

কেরলের থেকে সম্ভবত আমরা অনেক এগিয়ে সব দিক থেকে৷ তাই ভাইরাস আমাদের ত্রিসীমানায় আসবে না, আমরা নিশ্চিত৷

হয়তো ওই ভাইরাস -ই এমন কথা দিয়েছে, কে জানে!

আরও পড়ুন:দশভুজার আগমন লগ্নে মুখ্যমন্ত্রীর কথা ও সুরে প্রকাশিত নতুন গানের সংকলন ‘সৃষ্টি’

Previous articleমুক্তি পেলেন লিবিয়ায় অপহৃত সাত ভারতীয়
Next articleউত্তরবঙ্গে অভিষেক-পিকে, চলছে ক্ষত মেরামত, চাঙ্গা হচ্ছে তৃণমূল