Thursday, December 4, 2025

করোনা আবহে পুজো নিয়ে কী কথা লিখলেন শ্রীজাত?

Date:

Share post:

বাড়ির সামনে নানান রঙের ঝলমলে আলোর মালা দিয়ে সাজিয়েছে। মিথ্যে বলব না, হঠাৎ চলতে ফিরতে জানলার বাইরে চোখ চলে গেলে দিব্যি লাগছে। কেমন একটা খুশি ভাব যেন, যার কোনও ব্যাখ্যা নেই। গত বছরের পুজো দূর্বা আর আমি আলাদাই কাটিয়েছি। পেশার দায়ে অন্য মহাদেশের শহরে শহরে টহল দিচ্ছিলাম আমি, আর দূর্বা কলকাতার মণ্ডপসজ্জা ঝালিয়ে নিচ্ছিল। কথা ছিল, পরের পুজোয় আলো ভাগ করে নেব পাশাপাশি হেঁটে।

বেরনো যে যাবেই না বাড়ি থেকে, এতে দূর্বা এমনিতেই ভারী মুষড়ে পড়েছিল এ-বছর। তবু, ঠিক করেছিলাম, একসঙ্গে গান শুনে, ছবি দেখে, ভালমন্দ খাওয়াদাওয়া করে বাড়িতেই ঠেসাঠেসি কাটাব এবারের পুজো। মনখারাপ করলে মাঝেমধ্যে দু’জনে মিলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছাতিমের গন্ধ নেব, আর জানলা দিয়ে দেখব লাল-নীল-সবজে আলোর ঝিকমিক। কিন্তু সেটাও যে হবার জো থাকবে না, সে আর কে জানত।

আপাতত করোনায় আক্রান্ত হয়ে সে একটু কাবু। তবে, ওই একটুই। ক্লান্তি ছাড়া বিশেষ কিছু নেই। কিন্তু সবদিক বিবেচনা করে ঠিকানা বদলে নিয়ে আজ থেকে দূর্বা দক্ষিণ কলকাতার এক হাসপাতালে ভর্তি। ছ’তলার ঘরের জানলা দিয়ে নীচের আলো ঝলমল কলকাতা ওর মনখারাপ বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে, জানি। আর আমারও মন নিভে আসবে আলো দেখলে, পাড়ার মাঠে মাইক বাজতে শুনলে। একা একা ছাতিমগন্ধ এ-বয়সে আর ভাল লাগে না। দূরত্বের সুতো দিয়ে পুজো সেলাই করার বছর যে এটাও, আগে বুঝতে পারিনি। বাড়িতে আমরা কয়েকজন এখনও ঠিকই আছি, কিন্তু সাবধানের মার নেই বলে, একবার পরখ করে নেব।

এ-কথা বলতে দ্বিধা নেই, আমার এই মধ্যচল্লিশের সফরে, দূর্বা’র মতো লড়াকু মানুষ আমি খুব কম দেখেছি। গত দেড় দশকে যে-কোনও বিপন্নতায় বা বিপদে ওকে যেভাবে লড়ে যেতে দেখেছি, আমি তার অনেকটাই পারতাম না হয়তো। তাই আমি অন্তত নিশ্চিত, পুজোর ক’দিনে করোনাসুরকেই কাবু করে ছাড়বে ও। তাছাড়া যে-মানুষ খোদ আমার সঙ্গে এতগুলো বছর পার করেছে, করোনা তার কাছে নস্যি!

কেমন এক অসুখ এল আমাদের পৃথিবীতে, যেখানে প্রিয় মানুষের কাছে যাবার উপায় নেই, তার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে আদর করার উপায় নেই, তার হাত মুঠোয় চেপে ধরে এই আশ্বাস দেবার উপায় নেই যে, ‘সব ঠিক হয়ে যাবে, আমি তো আছি পাশে’। তাই যেটুকু আস্থার বাতাস হাত নেড়ে পাঠানো যায়, যেটুকু স্পর্শের আদল ইশারায় বোঝানো যায়, সেটুকুই ওর জন্য রেখে ফিরে এলাম বাড়ি।

আমার পুজো, আমাদের পুজো এবার পিছিয়ে দিলাম ক’দিন। সারা শহরের আলোর রোশনাই চেহারায় নিয়ে দূর্বা যেদিন বাড়ি ফিরবে, সেদিনই বোধন, সেদিনই পুজো শুরু।

আরও পড়ুন- মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি আস্থা রেখে বিজেপি-সঙ্গ ত্যাগ করায় গুরুংকে স্বাগত তৃণমূলের

spot_img

Related articles

বিজাপুরে বড়সড় অভিযান, সংঘর্ষে মৃত মাওবাদীর সংখ্যা বেড়ে ১৮

ছত্রিশগড়ের বিজাপুরে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘ গুলিযুদ্ধের পরে উদ্ধার হল আরও ছয় মাওবাদীর দেহ। বৃহস্পতিবার পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে,...

ক্ষমতার অপব্যবহার! বিজেপি নেত্রীর ফ্ল্যাটে যৌনচক্র

বারাণসীতে বিজেপি নেত্রীর বিরুদ্ধে যৌনচক্র চালানোর অভিযোগ ঘিরে রীতিমত অস্বস্তিতে শীর্ষ নেতৃত্ব। সোমবার বিজেপি নেত্রীর ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে...

অমানবিক! অভিযোগ অসুস্থ BLO-র স্ত্রীকে দিয়েই কাজ করাল কমিশন

নির্মমতার চূড়ান্ত নিদর্শন! শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কথা জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের (Election Commission) কাছে SIR-এর কাজ থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলেন কিন্তু...

স্কুল পড়ুয়াদের নিরাপত্তায় নতুন কড়াকড়ি, কঠোর নিয়ম আনছে পরিবহন দফতর 

রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রতিক পুলকার দুর্ঘটনায় উদ্বেগ বেড়েছে প্রশাসনের শীর্ষমহলে। এর পরেই স্কুলবাহি গাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর...