বেআব্রু বিজেপির ঘর সামলাতে উত্তরবঙ্গের মাঠে নামছেন রাজ্যপাল

কিশোর সাহা

দলের আসল চেহারা উত্তরবঙ্গে ক্রমশ বেআব্রু হয়ে পড়ছে বলে এবার পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালকে মাঠে নামাতে চাইছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। দলীয় সূত্রের খবর, সম্প্রতি জে পি নাড্ডার সফরের সময়েই নানা সূত্রে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হন বিজেপি নেতৃত্ব। এর পরেই আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রায় এক মাস উত্তরবঙ্গে থাকার কর্মসূচি নিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। শুধু তাই নয় যাওয়ার আগে আজ, বুধবার দিল্লি যাচ্ছেন রাজ্যপাল। কাল, বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠক করবেন। তারপর রাজ্যে ফিরে আসবেন পাহাড়ে।

তাতেই দুয়ে-দুয়ে চার করছে বিরোধী শিবির। যদিও বিজেপির প্রদেশ ও উত্তরবঙ্গের নেতারা অনেকেই তা মানতে নারাজ।
তবে সরকারি সূচি অনুযায়ী, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে সফর শুরু হলে রাজ্যপাল দার্জিলিঙের রাজভবনেই থাকবেন। তবে সেখান থেকে উত্তরবঙ্গের যে কোনও প্রান্তে যে কোনওদিন যেতে পারেন। তাই রাজ্যপালের সফর ঘিরে গোটা উত্তরবঙ্গেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।

হঠাৎ খোদ রাজ্যপালকে কেন আসরে নামানো হচ্ছে তা নিয়ে বিজেপির অন্দরেই নানা আলোচনা চলছে। কারণ, সাধারণত, রাজ্যপালদের দার্জিলিং সফর গ্রীষ্মকালেই হয়ে থাকে। সে সময়ে দীর্ঘ সময় রাজ্যপাল পাহাড়ে বসবাস করেন বলে অতীতে দেখা গিয়েছে। এবার শীতের শুরুতেও তার পরেও রাজ্যপাল কেন পাহাড়ে দীর্ঘ সময় থাকতে চান তা নিয়ে নানা মত রয়েছে।

যেমন, প্রথমেই উঠে আসছে বিমল গুরং প্রসঙ্গ। কারণ, বিমল সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হিুসেবে দেখতে চান বলে বিবৃতি দিয়েছেন, তাও কলকাতায় বসে। ওই প্রেস কনফারেন্সের সিডি আদালতে জমা দিলে বিমল গুরুংকে যে রাজ্য পুলিশ খুঁজছে না তা প্রায় প্রমাণ হয়ে যাবে বলে তাঁর অনুগামীরা মনে করছেন। সে ক্ষেত্রে গুরুংয়ের পাহাড়ে ফেরাটা সময়ের অপেক্ষা। এমন একটা সময়ে পাহাড়ে থেকে পরিস্থিতির কিছুটা বিজেপির নিয়ন্ত্রণে আনার জন্যই বিজেপি সক্রিয় বলে বিরোধীদের ধারণা।

শুধু তা-ই নয়, গত লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে বিজেপির আসন রেকর্ড সংখ্যক হলেও সাংসদের একাংশের ভূমিকা নিয়ে এলাকায় ও দলে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। বালুরঘাট টু কুমারগ্রাম, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি কিংবা রায়গঞ্জ, সর্বত্রই সাংসদের একাংশ এলাকার উন্নয়নে কতটা আগ্রহী, নিজেদের পদ ধরে রাখতে কতটা আগ্রহী, অথবা তাঁর অনুগামীদের একাংশ টাকা তুলতে কতটা ঐকান্তিক তা নিয়েই আলোচনা তুঙ্গে।

এমনকী, ডুয়ার্স এলাকার সাংসদ জন বার্লার ভূমিকা আদিবাসী সমাজের অনেকেই হতাশ ও ক্ষুব্ধ। চা বলয়ের অনেকেই জানান, জন নিজের উন্নতির জন্য যতটা চেষ্টা করেন, এলাকার জন্য ততটা যে করেন না তা বোঝাই গেল গত এক বছরে। উপরন্তু,. জনের ব্যক্তিগত সম্পত্তির বহর বৃদ্ধি নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।

দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তের ভূমিকা নিয়েও কম সমালোচনা হচ্ছে না। সমতল শিলিগুড়িতে রাজু ভোটে এগিয়ে থাকলেও এখন তাঁর সমালোচনায় সরব ফাঁসিদেওয়া, শিলিগুড়ি, মাটিগাড়া ও নকশালবাড়ি। কারণ, রাজু সংসদে দাঁড়িয়ে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে সওয়াল করেছেন।

বস্তুত, উত্তরবঙ্গের ৯ জেলায় ৭টি আসন পেলেও গত এক বছরে বিজেপির পায়ের তলার মাটি যে নড়ে গিয়েছে তা দলের অনেকেই বুঝেছেন। সেই জন্য দলের নেতা-কর্মীদের একাংশের তোলাবাজির মনোভাবকে দমনের জন্য বার্তা পাঠিয়েও খুব লাভ হয়নি।

বিজেপির অন্দরের খবর, সম্প্রতি দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাকে পাঠিয়ে অবস্থার পরিবর্তনের চেষ্টা হয়েছে। দলের এক নেতা দাবি করেন, রাজ্যপাল হল সাংবিধানিক পদ, তিনি যে কোনও জায়গাতে যেতে পারেন। তাঁর কথা, মতামতের একটা গুরুত্ব রয়েছে। এর আড়ালে কোনও রাজনীতি খোঁজা হলে তা দুঃখজনক।

তবে শীতের মরসুমে রাজ্যপালের পাহাড় সফর সাধারণত অতীতে দেখা যায়নি। তাই রাজ্যপাল ও রাজ্য রাজনীতি নিয়ে সরগম হতেই পশ্চিমবঙ্গ।

Previous articleকরোনা আবহে বিহারে ভোট, অসতর্ক ভোটাররা
Next articleদিল্লি যাচ্ছেন রাজ্যপাল, গুরুবারে বৈঠক অমিতের সঙ্গে