চিরাগ-অস্ত্রেই মাঠের বাইরে নীতীশ কুমার, কণাদ দাশগুপ্তর কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারই বিহার ভোটে ক্ষমতাসীন NDA-র মুখ। কিন্তু গণনা যত এগোচ্ছে,দেখা যাচ্ছে ওই মুখ ততই ঢাকা পড়ে যাচ্ছে শরিক বিজেপির ছায়ায়৷ ভোট গণনার সর্বশেষ ট্রেন্ড বলছে, বিজেপি মঙ্গলবারই বিহারের বৃহত্তম দল হিসেবে হিন্দি-বেল্টের শেষ রণাঙ্গনে উদিত হতে চলেছে৷ এবং এটাও অস্বাভাবিক হবে না, ‘নীতীশ’ই মুখ’ এই স্লোগান থেকে সরে এসে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর আসনের দখল নিতে পারে বিজেপিই৷ সেক্ষেত্রে নীতীশ কুমারকে দিয়েই বলানো হবে, ” এই ফলের পর বিজেপিই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসুক”৷

ফলপ্রকাশের মাঝামাঝি এমন ছবিই উঠে আসছে বিহার থেকে৷ এবং এমন ভাবনা অমূলক নয়, এই পরিস্থিতিই তৈরি করতেই রামবিলাস পাসোয়ানের পুত্র চিরাগ পাসোয়ানকে অসম্ভব কুশলতার সঙ্গে ব্যবহার করেছে গেরুয়া শিবির৷ নাহলে বিহার ভোটে NDA-র বিরোধিতা করতে নেমেও চিরাগের দল LJP কেন বেছে বেছে নীতীশের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে লড়তে নামলো, কেনই বা বিজেপির বিরুদ্ধে প্রার্থী দিলো না এবং কেনই বা বিজেপির প্রচারের তোপের বাইরেই থেকে গেলেন চিরাগ পাসোয়ান ? চিরাগ পাসোয়ানও সর্বত্র তাঁর ভাষণে বলেছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রতি অনুগত৷ কিন্তু নীতীশে তাঁর প্রবল আপত্তি ৷ চিরাগের ভাষণে তাঁর নিজের দল ‘লোক জনশক্তি পার্টি’ বা LJP-র পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী মোদিকেও সমর্থন করার কথা বলতেও শোনা যায়৷

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদে বিজেপি ছিলো না৷ ক্ষমতাসীন জোট প্রত্যাবর্তন করলে শরিক JDU-কে এবারও মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার ছাড়বে, অনেক আগেই এই ঘোষণা করেছে বিজেপি৷ NDA-র মুখ ওই রাজ্যের পাঁচবারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার হলেও ভোট গণনার সর্বশেষ হিসেব বলছে, মুখ্যমন্ত্রীর দল JDU-কে এবার অনেক পিছনে ফেলবে বিজেপি৷ ভোটের চূড়ান্ত ফল এমনই হলে, মুখ্যমন্ত্রীর গদি আদৌ নীতীশ কুমারকে এ বার ছাড়া হবে কি’না, বিহার বিজেপির একাংশ ইতিমধ্যেই সেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে৷ গণনার শেষ চিত্র, নীতীশের NDA জোট, তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলের মহাজোটের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে৷ তবে এই এগিয়ে যাওয়ার পুরো কৃতিত্বই বিজেপির৷ এ বার JDU এখনও পর্যন্ত হালে পানির সন্ধান পায়নি৷ না পাওয়ারই কথা ছিলো৷ বিজেপির প্রচ্ছন্ন মদতে সে পথ রুখে দিয়েছিলেন চিরাগ পাসোয়ান৷ বিজেপি সবসময়ই নীতীশ কুমারকে সামনে দাঁড় করিয়ে বিহারের মাঠে নেমেছে৷

রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, NDA- জোটে ‘বড়ভাই’ হিসাবে এবার বিজেপির যা ফল করতে চলেছে, তাতে এটা ক্রমেই বদ্ধমূল হচ্ছে, সামান্য আসন নিয়ে নীতীশ যদি ক্ষমতার করিডোরে ঘুরঘুর করে, তাহলেও হয়তো নীতীশকে এবার শীর্ষ আসনে বসার সুযোগই দেবেনা বিজেপি৷ যদিও বা শেষ মুহুর্তে এসে নীতীশকে ‘কনসিডার’ করে, তাহলে এই তথাকথিত ‘বিপ্লবী’ নীতীশকে বিজেপির হাতের পুতুল হয়ে থাকতেই হবে৷

ন্যূনতম আত্মমর্যাদা থাকলে এবার নীতীশের মুখ্যমন্ত্রী পদ গ্রহণ করা উচিত হবে না৷ বরং তিনি “জুনিয়র পার্টনার” হিসেবে শাসন ব্যবস্থার শরিক হলে, বিহার কিছুটা মর্যাদা আদায় করতে পারবেন৷

আরও পড়ুন-ফের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারই, গণনার মুখে দাবি বিজেপি-র কেন্দ্রীয় মুখপাত্রের

Previous articleবিতর্ক এড়াতে দীপাবলির বিজ্ঞাপন তুলে নিল তানিশক
Next articleভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ দিয়েই ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ফিরছে দর্শক