নারায়ণী, গোর্খা ব্যাটালিয়ন গড়ছেন মমতা, উচ্ছ্বসিত দার্জিলিং টু কোচবিহার

কিশোর সাহা

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য পুলিশে নারায়ণী ব্যাটালিয়ন ও গোর্খা ব্যাটালিয়ন তৈরির ঘোষণা করতেই উত্তরবঙ্গের কোচবিহার ও দার্জিলিং পাহাড় ও গোর্খা জনজাতি অধ্যুষিত এলাকার বাসিন্দারা উচ্ছ্বসিত।
কারণ, দীর্ঘদিন ধরে গ্রেটার কোচবিহারের আন্দোলনকারীরা ভারতীয় সেনাবাহিনীকে নারায়ণী সেনা রেজিমেন্ট চালুর দাবি করছেন। তা নিয়ে বিজেপির তরফে গত লোকসভা ভোটে প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। পাহাড়ের গোর্খাদের অনুভূতি, দাবিকে মর্যাদা দেওয়ার কথা বলেও গত লোকসভা ভোটের ফের আশ্বাস দেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু, মোদির রাজত্বের ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও কাজের কাজ না হওয়ায় হতাশা ও ক্ষোভ বাড়ছে কোচবিহার, পাহাড় ও লাগোয়া এলাকায়।

সম্প্রতি গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতা বিমল গুরুং বিজেপির সংস্রব ছেড়ে তৃণমূলের সঙ্গে থেকে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন।

এই অবস্থায়, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল প্রায় এক মাসের জন্য উত্তরবঙ্গে রয়েছেন। তৃণমূলের অভিযোগ, উত্তরবঙ্গের পাহাড়ে বসে বিজেপির হয়ে প্রকারান্তরে প্রচার চালাচ্ছেন জগদীপ ধনকড়। শুধু তাই নয়, গত লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে বিজেপির যে সাংসদরা জিতেছেন তাঁরাও এলাকায় গিয়ে স্থানীয় দাবি-দাওয়া পূরণের ব্যাপারে ফের আশ্বাস দিচ্ছেন। আগামী বিধানসভা ভোটে বিজেপি বাংলার মসনদে বসলে সব দাবি পূরণ হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন- দিনহাটায় দিলীপের স্লোগান, এবার বাংলা, পারলে সামলা

বিজেপির সেই প্রতিশ্রুতি যেন ঢেকে দিয়েছে রাজ্যে পুলিশে আরও দুটি ব্যাটালিয়নের ঘোষণা। গ্রেটার কোচবিহবার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের নেতা বংশীবদন বর্মন জানিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় ও কাজে মিল রয়েছে বলেই তাঁকে মানুষ বিশ্বাস করেন। তিনি জানান, কোচবিহারের রাজার আমলে নারায়ণী সেনা ছিল। কোচবিহারের ভারতভুক্তির পরে নারায়ণী সেনার আদলে নারায়ণী রেজিমেন্ট গঠনের বিষয়টি চুক্তিতে থাকলেও তা ভারত সরকার রূপায়ণ করেনি বলে তাঁদের অভিযোগ। সে জন্য নারায়ণী সেনা গঠনের দাবি করে চলেছেন তাঁরা। বিজেপির পক্ষ থেকে আশ্বাস মিললেও কাজের কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। তাই তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নারায়ণী ব্যাটালিয়ন গড়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল করা হবে বলেও খবর।

দার্জিলিং পাহাড়েও খুশির আবহ। বিমল গুরুংপন্থী থেকে শুরু করে বিনয় তামাং, অনীত থাপার অনুগামীরাও মুক্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। কারণ, ওই ব্যাটেলিয়ন হলে প্রায় ৩ হাজার জনের চাকরি হবে। জিএনএলএফ, গোর্খা লিগের সাধারণ সমর্থকদের অনেকেই গোর্খা ব্যাটেলিয়নে স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের আরও সুযোগ তৈরি হওয়ায় খুশি।

ঘটনা হল, মুখ্যমন্ত্রীর নানা কাজের সমালোচনা করলেও উত্তরবঙ্গের বিজেপি নেতারা কিন্তু ওই দুটি ব্যাটেলিয়ন গড়ার সমালোচনা করতে পারছেন না। বিজেপির অন্দরের খবর, তাঁরা এমন আচমকা ঘোষণায় কিছুটা হকচকিয়ে গিয়েছেন। এমনকী, রাজ্য পুলিশের এমন পৃথক নাম দিয়ে ব্যাটেলিয়ন গড়া যায় কি না এবং তা বৈধ কি না সেটা নিয়েও খোঁজখবর নিচ্ছেন। বিজেপির এক নেতার অভিযোগ, তাঁদের উত্তরবঙ্গের সাংসদদের দিল্লিতে তো বটেই, কলকাতায় তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ওই নেতা আরও অভিযোগ করেন, অন্য দল থেকে বিজেপিতে আসা নেতাদের অনেককেই নব্য, বহিরাগত বলে আরএসএসের একাংশ ব্রাত্য করে রাখার চেষ্টা করে চলেছেন। সেই সুযোগেই তৃণমূল ফের তৃতীয়বার রাজ্যে ক্ষমতাসীন হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমশ জোরদার হচ্ছে বলে অনেকের ধারনা।

আরও পড়ুন- লালা-ঘনিষ্ঠ ৬ কয়লা ব্যবসায়ীকে নোটিশ আয়কর দফতরের

Previous articleলালা-ঘনিষ্ঠ ৬ কয়লা ব্যবসায়ীকে নোটিশ আয়কর দফতরের
Next article‘দো গজ কি দূরি, মাস্ক জরুরি’, নিজের স্লোগানেই বরফ-ঠাণ্ডা জল ঢাললেন মোদি