স্পিকারের কাছে বিধায়ক পদে ইস্তফাপত্র বেচারামের, সিঙ্গুরে গণ-পদত্যাগ কর্মসূচি অনুগামীদের

নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনের অন্যতম নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে জল্পনার মাঝেই এবার সংবাদ শিরোনামে সিঙ্গুর আন্দোলনের নেতা হুগলির হরিপালের বিধায়ক বেচারাম মান্না। রাজ্যের প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী ও তৃণমূলের কৃষক সংগঠনের সভাপতি বেচারাম মান্না জেলায় দলীয় অন্তর্কলহে জর্জরিত, অপমানিত। তাই বিধায়ক পদ থেকে শেষ পর্যন্ত ইস্তফা দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। এবং অসমর্থিত সূত্রের খবর, আজ, বৃহস্পতিবার কলকাতায় এসে বিধানসভায় গিয়ে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় কাছে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন।

বেশ কয়েকদিন ধরে এমন সম্ভাবনার খবর ঘুরপাক খাচ্ছিল রাজনৈতিক মহলে। ঘনিষ্ঠ মহলে বেচারাম মান্না পদত্যাগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে ছিলেন। হুগলি জেলার তৃণমূলের আরেক বিধায়ক প্রবীর ঘোষালও বেচারাম পদত্যাগ করেছেন সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন।

এদিকে জেলা নেতৃত্ব ও শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁর সঙ্গে কথা বলার পরেও নিজের অবস্থানে অনড় থেকে স্পিকারকে ইস্তফাপত্র দিয়েছেন বেচারাম। সূত্রে আরও খবর, দলনেত্রীর নিজে ফোন করে বেচারামের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। কিন্তু তাতেও বরফ গলেনি। যদিও বেচারাম মান্নার বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা পত্র দেওয়া নিয়ে একটিও শব্দ খরচ করেননি বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি কোনও বিবৃতিও দেননি। আবার বেচারাম মান্নার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। ফলে পুরোটাই সূত্রের খবর।

মনে করা হয়, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনের ফলেই নিজেদের হারানো জমি খুঁজে পেয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলন না হলে বাম সরকারের পতন কোনওভাবেই সম্ভব ছিল না। এবার সেই সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনের দুই শীর্ষ নেতা দলের কাছে বিড়ম্বনা হয়ে দাঁড়ালো। শুভেন্দুকে নিয়ে এখনও জল্পনা চলছে, অন্যদিকে বেচারাম মান্নার পদত্যাগের খবরে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। যা একুশের নির্বাচনের আগে শাসক দলের কাছে অশনি সংকেত বটে।

প্রসঙ্গত, হুগলি জেলায় সম্প্রতি গোষ্ঠী কোন্দল বড় বেশি মাথা লচাড়া দিয়েছে ঘাসফুল শিবিরের অন্দরে। এবার বেচারাম মান্না পদত্যাগের খবরে আরও বাড়ল তৃণমূলের বিড়ম্বনা। উপদলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে আসছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। এবার তা গড়িয়ে গেল বিধায়কের পদত্যাগ পর্যন্ত। আগামিকাল, শুক্রবার বেচারামের অনুগামীরাও নাকি সিঙ্গুরে গণ-পদত্যাগ করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। সেখানে বেচারাম মান্না দলের বাইরে নিজের ব্যক্তিগত শক্তি প্রদর্শন করবেন বলেও শোনা যাচ্ছে।

হুগলি জেলা তৃণমূলে সিঙ্গুরের বর্ষীয়ান বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের সঙ্গে বেচারামের কোন্দল দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি দলের ব্লক সভাপতি নির্বাচন ঘিরে সেই সঙ্ঘাত চরমে ওঠে। কিছুদিন আগে প্রকাশ্যে মুখ খুলে দল ছাড়ার কথা ভাববেন বলেও জানিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সূত্রে খবর, গতকাল বুধবার রাতে এই নিয়ে বেচারামকে ফোন করেন দলনেত্রী। বেচারামকে রীতিমতো নেত্রীর কাছে ধমক খেতে হয় বলে বেচারামের ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন। এর পরেই বৃহস্পতিবার বিধানসভায় স্পিকারের হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দিয়ে এসেছেন বেচারাম।

বেচারাম মান্নার ঘনিষ্ট মহল সূত্রে খবর, সিঙ্গুর ব্লক সভাপতি থেকে সরিয়ে দেওয়া মহাদেব দাসকে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন দলনেত্রী। কয়েকদিন আগে মহাদেব দাসকে ব্লক সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় হুগলি জেলা কমিটি। একইসঙ্গে বেচারাম মান্না বিরোধী আরও একজন নেতাকে হরিপালে ফিরিয়ে নিয়ে আসার বার্তা দিয়েছেন নেত্রী। সূত্রের খবর, এই দুই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হরিপালের বিধায়ক তথা সিঙ্গুর কৃষি জমি রক্ষা কমিটি আন্দোলনের নেতা বেচারাম মান্না।

এদিকে এত জল্পনার মাঝে রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় মুখে কুলুপ এঁটেছেন। বেচারামের পদত্যাগের বিষয়ে সরকারিভাবে একটিও শব্দ ব্যয় করেননি তিনি। ঘনিষ্ঠ মহলেই এ বিষয়ে কোনও আলোচনা করেননি অধ্যক্ষ।
কিন্তু অসমর্থিত সূত্রের খবর, এদিন দুপুরে বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় সঙ্গে দেখা করেন হরিপালের বিধায়ক বেচারাম মান্না। বিধানসভায় বিমানবাবুর কক্ষে বেশ কিছুক্ষণ ছিলেন সিঙ্গুর আন্দোলনের এই নেতা। সেখানেই স্পিকারকে পদত্যাগপত্র দেন প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেটা অবশ্য কোনওভাবেই স্বীকার করেননি বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।

আবার ঘনিষ্ঠ মহলে বেচারাম জানিয়েছেন, লোকসভা নির্বাচনে হুগলি জেলায় ভরাডুবি হয়েছে তৃণমূলের, বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবি থেকে দলকে টেনে আনার দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁরা। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে পরিবর্তন করলে ফের জেলায় দুর্বল হবে তৃণমূল। তাই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে তুষ্ট করতে শীর্ষ নেতৃত্ব আবার যদি কমিটি পরিবর্তন করে সেটা দলের পক্ষে ক্ষতিকর। যা তিনি মেনে নেবেন না। তাই বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

উল্লেখ্য, বেচারাম মান্নার ইস্তফা যদি শেষ পর্যন্ত গ্রহণ করা হয় এবং পরবর্তীকালে সিঙ্গুর জমি আন্দোলনের এই নেতা যদি দলত্যাগ করেন সেক্ষেত্রে হুগলি জেলায় তৃণমূলের যে বড় ক্ষতি হতে চলেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ, পুজোর আগেই কলকাতায় গান্ধী মূর্তির পাদদেশে কেন্দ্রের কৃষক বিরোধী বিলের প্রতিবাদে যে আন্দোলন, বিক্ষোভ, প্রতিবাদ বেচারাম মান্না করেছিলেন সেখানে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া মিলেছিল। তাই এখন বেচারাম মান্না যদি বিধায়ক না থাকেন এবং পরবর্তী সময়ে যদি দলত্যাগ করেন সেটা তৃণমূলের জন্য বড়সড় ক্ষতি বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। সূত্রের খবর, বিষয়টি নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নিতে চাইছে তৃণমূল নেতৃত্ব। এবং সেই কারণেই বেচারাম মান্না পদত্যাগের খবর এখনই প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে না।

আরও পড়ুন- মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন মেনে ৯৫% ট্রেন চালাবে রেল

Previous articleমুখ্যমন্ত্রীর আবেদন মেনে ৯৫% ট্রেন চালাবে রেল
Next articleভারতে ফিরছে পাবজি! খুশি নেটিজেনরা