দীপান্বিতা কালীপুজোর আগের রাতে ভূত চতুর্দশী পালনের রীতি প্রচলিত আছে। চৌদ্দ শাক খেয়ে, চৌদ্দ প্রদীপ জ্বালিয়ে অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে ভূত চতুর্দশী পালন করা হয়। পৌরাণিক মতে, চামুণ্ডারূপী চৌদ্দ ভূত দিয়ে অশুভ শক্তিকে ভক্তের বাড়ি থেকে দূর করতে শক্তিদেবী মা কালী নেমে আসেন মর্ত্যে। ‘ভূত চতুর্দশী’ সম্পর্কে এই তথ্য তো কমবেশি আমরা সকলেই জানি। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না, এই ১৪ ভূতের তালিকায় কোন কোন ভূতের নাম রয়েছে! ভূত চতুর্দশীতে জেনে নিন ১৪ ভূতের কাহিনী।
ব্রহ্মদৈত্য
ব্রাহ্মণ আত্মা। সাদা ধুতি পরা অবস্থায় দেখা যায়। এরা সাধারণত পবিত্র ভূত হিসেবে পরিচিত। কোনও ব্রাহ্মণ অপঘাতে মারা গেলে তিনি ‘ব্রহ্মদৈত্য’ হয়ে যান। এছাড়া পৈতাবিহীন অবস্থায় কোনও ব্রাহ্মণ মারা গেলেও তিনি ব্রহ্মদৈত্য হতে পারেন। এরা কারো প্রতি খুশি হয়ে আশীর্বাদ করলে তা পূরণ হয়। কিন্তু কারও প্রতি অসন্তুষ্ট হলে তার কপালে বিপদ। সাধারণত বেল গাছে এরা থাকে বলে শোনা যায়।
পেত্নী
‘পেত্নী’ হলো নারী ভূত। পেত্নী শব্দটি সংস্কৃত ‘প্রেত্নী’থেকে এসেছে। অতৃপ্ত আশা নিয়ে অবিবাহিত নারী মারা গেলে সে পেত্নী হয়ে যায়। যে কোনও রূপ ধারণ করতে পারে এরা। এমনকি পুরুষের রূপও ধারণ করতে পারে। এসব ভূত সাধারনত বেঁচে থাকতে কোনও অপরাধ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে। মৃত্যুর পর অভিশপ্ত হয়ে পৃথিবীতে বিচরণ করে। পেত্নীরা সাধারনত বদমেজাজী হয়ে থাকে। কাউকে ধরার আগে পর্যন্ত মানুষের রূপেই থাকে। কিন্তু এদের চেনা যায় পায়ের দিকে তাকালে। এদের পাগুলো পেছনের দিকে ঘোরানো থাকে।
শাকচুন্নি
অল্পবয়সী-বিবাহিত কোনও মেয়ে অপঘাতে মারা গেলে তিনি ‘শাকচুন্নি’তে পরিণত হন। সাধারণত পুকুরের ধারে গাছের ডালে সাদা পোশাকে এরা থাকে। সুন্দর যুবক দেখলে তাঁকে আকৃষ্ট করে ফাঁদে ফেলাই এদের লক্ষ্য। পুকুর থেকে মাছ ধরার আগে এদের থেকে সাবধান থাকা ভালো।
ডাইনী
‘ডাইনী’ অর্থে কোনও অতৃপ্ত আত্মা নয়, এরা জীবিত নারী। বাংলা লোকসাহিত্যে সাধারণত বয়স্ক মহিলা, যাঁরা কালো জাদু বা ‘ডাকিনী’ বিদ্যাতে পারদর্শী তাদেরকেই ‘ডাইনি’ বলা হয়ে থাকে। ডাইনীরা গ্রামের ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের ধরে নিয়ে তাদের হত্যা করে রক্ত খেয়ে দীর্ঘজীবী হওয়ার অপচেষ্টা করে থাকে।
স্কন্ধকাটা
মুণ্ডবিহীন ভূত। অত্যন্ত ভয়ংকর এই ভূত মানুষের উপস্থিতি টের পেলে তাকে মেরে ফেলে। মূলত রেলে কারও মাথা কাটা গেলে, সে স্কন্ধকাটা হতে পারে।
মেছোভূত
মাছলোভী ভূত । বাজার থেকে কেউ মাছ কিনে রাস্তা দিয়ে ফিরলে এঁরা তার পিছু নেয় বলে শোনা যায়। নির্জন বাঁশঝাড়ে বা খাল-বিলের ধারে ভয় দেখিয়ে মাছ ছিনিয়ে নেয়।
পেঁচাপেঁচি
জোড়া ভূত। দেখতে পেঁচার মত। একটি ছেলে, অন্যটি মেয়ে। গভীর জঙ্গলে মানুষ প্রবেশ করলে এরা পিছু নেয়। সুযোগ বুঝে তাকে মেরে ফেলে।
মামদো ভূত
কথিত আছে, এটি একটি বিশেষ ধর্মের অপঘাতে মৃত্যুর পর অতৃপ্ত আত্মা।
নিশি
খুব ভয়ংক। অন্যান্য ভূত সাধারণত নির্জন এলাকায় মানুষকে একা পেলে আক্রমণ করে। কিন্তু নিশি গভীর রাতে মানুষের নাম ধরে ডাকে। ‘নিশি’র ডাকে সারা দিয়ে মানুষ সম্মোহিত হয়ে ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে পড়লেই বিপদ। কিছু তান্ত্রিকরা সাধারণ প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য নিশি পুষে থাকে।
কাঁদরা-মা
অনেকটা নিশির মত। এই ভূত গ্রামের পাশে জঙ্গলে বসে করুণ সুরে বিলাপ করতে থাকে। কান্নার সুর শুনে কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে গেলে তাকে গল্পে ফাঁসিয়ে জঙ্গলের গভীরে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলে। সাধারণত ছোট বাচ্চারা কান্নায় বেশি আকৃষ্ট হয়।
চোরাচুন্নি
দুষ্ট ভূত বলে পরিচিত। কোনও চোর মারা গেলে ‘চোরাচুন্নি’ হতে পারে। পূর্ণিমার রাতে এরা বের হয়। মানুষের বাড়িতে ঢুকে অনিষ্ট সাধন করে।
কানাখোলা
গভীর নির্জন জায়গায় মানুষকে পথভ্রষ্ট করে এরা। তার গন্তব্য ভুলিয়ে দিয়ে ঘোরের মধ্যে ফেলে দেয় এই ভূত।
আলেয়া
মূলত জলাভূমির ভুত । এরা জেলেদেরকে বিভ্রান্ত করে। জাল চুরি করে তাদের ডুবিয়ে মারে।
দেও
এই ধরনের ভূত নদীতে, হ্রদে, ঝিলে বা লেকে বাস করে। এরা লোকজনকে জলে ফেলে ডুবিয়ে মারে।
আরও পড়ুন : লাদাখকে চিনের অংশ দেখিয়ে বিপাকে টুইটার, সংস্থাকে জবাবদিহি করল কেন্দ্র