লক্ষ্মীর সহোদরা, কিন্তু তিনিই দুর্ভাগ্যের প্রতীক! কে এই অলক্ষ্মী?

আজ দীপান্বিতা কালীপুজো। এই দিন অমাবস্যায় শ্যামা মায়ের আরাধনার পাধ্যাপাশি বাঙালির ঘরে ঘরে লক্ষ্মী পুজোর প্রচলন আছে। মা লক্ষ্মীর আরাধনার মধ্য দিয়ে অলক্ষ্মীকে বিদায় বা তুষ্ট করা হয়।

কিন্তু এই অলক্ষ্মী?

গৃহস্থ তাঁকে ভয় পান, রাজাও তাঁকে ডরান। তিনি নিয়ে আসেন দারিদ্র্য, মহামারী, দুর্ভিক্ষ। তাঁর পূজাবিধি গোপন, তাঁর নাম মুখে আনাও সমীচীন কাজ নয়। তিনি অলক্ষ্মী। সম্পদ ও সমৃদ্ধির দেবী লক্ষ্মীর জ্যেষ্ঠা ভগিনী অলক্ষ্মী দেবলোকে এক আশ্চর্য পরিসরে অবস্থান করেন। ‘কল্কিপুরাণ’-মতে অলক্ষ্মী, কলি নামক দানবের পত্নী। ‘মহাভারত’-ও একই সাক্ষ্য দেয়।

অলক্ষ্মীর যে রূপ পুরাণে বর্ণিত রয়েছে, তা মোটেই সুবিধের নয়। তিনি রীতিমতো কুরূপা। বেশ কিছু পুরাণে তাঁকে গর্দভাসনা বলে বর্ণনা করা হয়েছে। লোকবিশ্বাস-মতে তিনি অনেক সময়েই পেঁচার রূপ ধারণ করেন। পেঁচা আবার লক্ষ্মীর বাহন। সেদিক থেকে দেখলে লক্ষ্মী ও অসক্ষ্মী একত্রেই থাকেন। বিশ্বাস এই, লক্ষ্মীর বাহন দুর্ভাগ্য নিয়ে এলেও লক্ষ্মী তাকে অতিক্রম করতে সাহায্য করেন।

অলক্ষ্মীর জন্মবৃত্তান্ত সম্পর্কে বিভিন্ন মত ব্যক্ত করে পুরাণগুলি। কোনওটির মতে, প্রজাপতির মুখমণ্ডল নিঃসৃত জ্যোতি থেকে জন্ম নেন লক্ষ্মী দেবী। আর প্রজাপতির পশ্চাৎভাগ থেকে জন্মান অলক্ষ্মী। আবার কোনও পুরাণ জানায়, সমুদ্রমন্থনের কালে লক্ষ্মী দেবী দুধসাগর থেকে উঠে আসেন। কিন্তু অলক্ষ্মী আবির্ভূতা হন বাসুকী নাগের মুখ থেকে কালকূট বিষ উঠে আসার কালে। পুরাণ থেকেই জানা যায়, লক্ষ্মী যখন বিষ্ণুর আলয়ে বাস করছেন, অলক্ষ্মী তখন গৃহহীনা, অনূঢ়া। তখন লক্ষ্মীই ঘোষণা করেন, অলক্ষ্মীর বিবাহ হবে দানব কলির সঙ্গে এবং তাঁর অনুষঙ্গ হবে ক্লেদ-কদর্যতা-রূপহীনতা-লালসা-ঈর্ষা। অলক্ষ্মী ধ্বংসের বার্তা বহন করেন। তাঁর স্বামী কলি, যাঁর নামানুসারে কলিযুগ, তিনিও সৃষ্টিকে লয় করার জন্যই আদিষ্ট।

আরও পড়ুন : ৪৯৯ বছর পর দীপাবলিতে বিরল কাকতালীয় যোগ ! জানুন এর গুরুত্ব
দেবী ধূমাবতী

অনেক সময়েই অলক্ষ্মীকে দশমহাবিদ্যার অন্যতমা দেবী ধূমাবতীর সঙ্গে একত্র করে দেখা হয়। ধূমাবতী অতি রহস্যময়ী দেবী। তাঁর পূজাবিধি অত্যন্ত গোপন। কিন্তু পুরাণে বর্ণিতা অলক্ষী সধবা। কীভাবে বিধবা ধূমাবতীর সঙ্গে তাঁকে এক করে দেখা হল, তা বোঝা যায় না।

বিভিন্ন তন্ত্রগ্রন্থে অলক্ষ্মীর পূজাবিধি নাকি সংকলিত রয়েছে। কিন্তু, সেসব কী কাজে লাগে, তা জানা যায় না। তবে ভারতে দেবী ধূমাবতীর উপাসক সম্প্রদায় রয়েছে। তাদেরকেও অনেক সময়ে ‘অলক্ষ্মী উপাসক’ বলে মনে করা হয়।

আরও পড়ুন : আজ অশুভ “ফ্রাইডে দ্য থার্টিন্থ”! পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধা জানাতে “ভূত চতুর্দশী” যেন “হ্যালোউইন”

দীপান্বিতা কালীপূজায় অনেক বাঙালি বাড়িতেই লক্ষ্মীপুজো হয়। সেদিন সেখানে লক্ষ্মীর সঙ্গে অলক্ষ্মীরও আরাধনা করা হয়। বাংলার গৃহস্থ-বিশ্বাস, চঞ্চলা লক্ষ্মীদেবীই সময় বিশেষে অলক্ষ্মীরূপ ধারণ করেন। তাই তাঁকে তুষ্ট রাখতে দুই রূপেরই পূজা করা বিধেয়।

Previous article১৪ নভেম্বর, শনিবারের বাজার দর
Next articleঅপরিবর্তিত রুপো, আজ কত সোনার দাম?