আজ অশুভ “ফ্রাইডে দ্য থার্টিন্থ”! পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধা জানাতে “ভূত চতুর্দশী” যেন “হ্যালোউইন”

হ্যালোউইন ও ভূত চতুর্দশী । প্রতিবছর রীতি অনুযায়ী, কালীপুজোর আগের দিন ভূত চতুর্দশী পালিত হয়। পুরাণ মতে, নরকাসুররূপী বলি রাজা কালীপুজোর আগের দিন ভূতচতুর্দশীতে মর্ত্যে আসেন পুজো নিতে। সঙ্গে থাকে পরলোক জগতের ভূত-প্রেতরা। বাঙালিরা এইদিন সংস্কারাচ্ছন্ন ভাবে চোদ্দ শাক রান্না করে আর সন্ধ্যাবেলা চোদ্দ প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রয়াত পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধা জানায়।

মনে করা হয়, এই দিন মর্ত্যে আবির্ভূত হন আমাদের পূর্ব পুরুষরা। সুতরাং, আমরা ভূত চতুর্দশীতে স্মরণ করি চোদ্দ পুরুষদের। চোদ্দ শাক অশুভ আত্মাকে দূরে সরিয়া রাখে। আর যেহেতু ভূতেরা অন্ধকার পছন্দ করে তাই প্রদীপ জালিয়ে তাদের দূরে সরিয়ে রাখা হয়। বা অন্য ভাবে বলা যায় অশুভ আত্মা আলোর রোশনাই থেকে দূরে থাকে। যেহেতু কৃষ্ণপক্ষে কালীপুজো হয় ল, তাই প্রদীপ বা মোমবাতি জ্বালানো হয়ে ওঠে প্রাসঙ্গিক।

ঠিক এই সময়টায় পশ্চিম দেশেগুলোয়ে হ্যালোউইন (Halloween) উদযাপন হয়। সেখানে মানুষ নানান রকম ভুতুড়ে সাজে উপস্থাপন করে নিজেদের। খ্রীস্টান মত অনুসারে, হ্যালোউইন পালিত হয় পয়লালা নভেম্বর। এই দিনটিকে বলা হয় সমস্ত সাধুদের দিন (All Saint’s Day)।

হ্যালোউইন এর উৎপত্তি একটি আইরিশ লোক উৎসব সাংহাই (Samhai) থেকে। সাংহাই কথার অর্থ নভেম্বর। এই উৎসব এক সময় ছিল গ্রীষ্মের সমাপ্তি এবং শীতের সূচনার সন্ধিক্ষণ। সেল্টিক ঐতিহ্য অনুযায়ী এই দিন মিলন হয় দুই জগতের। অর্থাৎ, ইহলোক ও পরলোকের। এই সময় দরজা খুলে যায় দুই পৃথিবীর আর মানুষ আহ্বান করে আত্মাদের। জ্বালানো হয় কুমড়ো দিয়ে তৈরি লণ্ঠন। যার নাম jack-o’-lantern অর্থাৎ রাতের প্রহরী।

এখন বোঝা যাচ্ছে, কোথায় মিল হ্যালোউইন আর ভূত চতুর্দশীর? অদ্ভুত ব্যাপার – পশ্চিম দেশের একটি লোক উৎসব হয়ে উঠল সমগ্র বিশ্বের একটি সাঙ্কেতিক উৎসব। কিসের সঙ্কেত? ভৌতিক শক্তি দমনের বা অন্য ভাবে বললে ভূতেদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার। কিভাবে? ওই যে ভূতেদের মতো সাজ পোশাক। যাতে ওরাও মনে করে আমরা ওদেরই একজন। আমরা চাই যাতে ওরা একটি বিশেষ দিনে এসে আমাদের আশীর্বাদ করেন এবং যাতে অসন্তুষ্ট না হন। তাহলেই বিপদ।

ভূত প্রেতে বিশ্বাস সার্বজনীন। সেই বিশ্বাস থেকেই প্রতি বছর আমরা পালন করি ভূত চতুর্দশী। এই দিনটি খুব পবিত্র। সাধু-সন্ত ও তান্ত্রিকদের আরাধনা করার দিন। মজার ব্যাপার হল, একই বিশ্বাসে ভর করে কেমন মিলে যায় পূর্ব ও পশ্চিম, মিলে যায় খ্রীষ্ট ধৰ্ম ও হিন্দুত্ব।

এদিকে ২০২০ সালটা ফের “অশুভ” হিসেবে ধরা দিলো। আগামীকাল, শনিবার কালীপুজো। তার আগে আজ, ১৩ নভেম্বর শুক্রবার রাতে বাঙালির রীতি অনুযায়ী পালিত হবে ‘ভূত চতুর্দশী’। অর্থাৎ, একদিকে ‘ফ্রাইডে দ্য থার্টিন্থ’, তার উপর ‘ভূত চতুর্দশী’, সবমিলিয়ে এই রাতটি ভয়ঙ্কর বলেই বহু মানুষের বিশ্বাস।

যে মাসের প্রথম দিন রবিবার, সেই মাসের ১৩ তারিখ পড়ে শুক্রবারে। পাশ্চাত্যে প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, এই দিনটি বিশেষ অশুভ। এই দিনটি নিয়ে বিখ্যাত সিনেমাও হয়েছে। এবার এই দিনেই পড়েছে বাঙালির ‘ভূত চতুর্দশী’। সবকিছুকে উড়িয়ে না দিয়ে, আজ কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করাই ভালো।

আরও পড়ুন : আজ ভূত চতুর্দশী, জানুন যে ১৪ ভূত থেকে নিজেকে নিরাপদে রাখবেন

 

Previous articleঘুমন্ত ৪ জনকে পিটিয়ে খুন, কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা
Next articleওড়িশায় ঘরের ভিতর এক পরিবারের ৬জনের কম্বল মোড়া দেহ