করোনার দ্বিতীয় ঢেউ, পোশাক খাতে আবারও কমল বরাত

খায়রুল আলম (ঢাকা) : দেশের পোশাক খাতে নতুন বরাত দেওয়া কমিয়ে দিয়েছে বিদেশি ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলি। তবে উদ্যোক্তাদের আশা, গতবারের মতো ভয়াবহ অবস্থা হবে না। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ ভালোভাবেই জেঁকে বসতে শুরু করেছে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে। এরই মধ্যে লকডাউন বা অবরুদ্ধ অবস্থা জারি করেছে কয়েকটি দেশ। সে কারণে তৈরি পোশাকের চলমান ক্রয়াদেশের ওপর স্থগিতাদেশও আসতে শুরু করেছে। নতুন বরাত দেওয়া কমিয়ে দিয়েছে বিদেশি ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলি। বিজিএমই-এর তথ্য অনুযায়ী, করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময়কালে ৩১৮ কোটি ডলারের পোশাক রফতানির বরাত প্রাথমিকভাবে বাতিল ও স্থগিত হয়েছিল। পোশাকশিল্পের এ-দেশীয় উদ্যোক্তারা বলছেন, বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম গত সপ্তাহে তাদের বেশ কয়েকটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে সাময়িকভাবে বরাত স্থগিত করে ই-মেল দিয়েছে। একইভাবে সিঅ্যান্ডএ, আলদি, ইন্ডিটেক্স চলমান বরাতের পণ্য রফতানির ওপর সাময়িক স্থগিতাদেশ দিয়েছে। তারপরও করোনার প্রথম ধাক্কার মতো ভয়াবহ অবস্থা হবে না বলে প্রত্যাশা করছেন উদ্যোক্তারা।

গত মার্চে করোনার কারণে পোশাকের বরাত বাতিল ও স্থগিত হওয়ায় মালিকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লে সরকার রপ্তানিমুখী শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। পরে তহবিলের আকার বাড়ানো হয়। সেই তহবিল থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কারখানার মালিক ঋণ নিয়ে চার মাসের মজুরি দিয়েছেন। বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময়কালে ৩১৮ কোটি ডলারের পোশাক রফতানির বরাত প্রাথমিকভাবে বাতিল ও স্থগিত হয়েছিল। তার মধ্যে প্রাইমার্ক ৩৩ কোটি, ইন্ডিটেক্স ৮ কোটি ৭০ লাখ, বেস্টসেলার ৮ কোটি ৩০ লাখ, মাদারকেয়ার ৫ কোটি ৬০ লাখ, কোহলস ৫ কোটি ৪০ লাখ, গ্যাপ ৩ কোটি ৮০ লাখ, জেসি পেনি সাড়ে ৩ কোটি, ওয়ালমার্ট ১ কোটি ৯০ লাখ, ডেবেনহাম ১ কোটি ৮০ লাখ ও রালফ লরেন প্রায় ১ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত করে। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে কত কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়েছে, তার কোনো হিসাব এখনো করেনি পোশাকশিল্প মালিকদের এই সংগঠন।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেন, ইউরোপে আবারও লম্বা সময়ের জন্য লকডাউন আরোপ করা হলে মৌসুমের বড় বিক্রি হারাবে ক্রেতারা। এতে অবশ্যই নতুন ক্রয়াদেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সেটি হলে অনেক কারখানাতেই প্রয়োজনীয় ক্রয়াদেশ থাকবে না। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে পোশাকের ক্রয়াদেশ স্থগিতাদেশের ক্ষেত্রে এইচঅ্যান্ডএমের নাম আসছে। সুইডেনভিত্তিক এই ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে বছরে প্রায় ৩০০ কোটি ডলার বা ২৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের পোশাক কিনে থাকে। সেই হিসেবে ১০ শতাংশ বাংলাদেশি পোশাকের ক্রেতা হচ্ছে এইচঅ্যান্ডএম। এইচঅ্যান্ডএমের বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইথিওপিয়ার প্রধান জিয়াউর রহমান জানান , ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আমরা পোশাকের কোনো ক্রয়াদেশ বাতিল বা অর্থ পরিশোধে বিলম্ব করিনি। দুই সপ্তাহের বেশি সময়ের জন্য স্থগিত করা হয়নি। যেটি হয়েছে, ইউরোপের অনেক দেশ লকডাউন করায় আমরা প্রস্তুত পণ্য এশিয়ার দেশগুলোতে পাঠানোর পরিকল্পনা করছি। সে কারণে ৮-১০ দিন বা সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ সময় লাগছে।’বাংলাদেশের বিভিন্ন কারখানায় প্রস্তুত হওয়া এইচঅ্যান্ডএমের পোশাক বিশ্বের ৭২-৭৩ দেশে যায়। সব মিলিয়ে মোট পণ্যের ৩৫-৪০ শতাংশের গন্তব্য ইউরোপ—এমন তথ্য দিয়ে জিয়াউর রহমান জানান, করোনার প্রথম ঢেউয়ের পর বাংলাদেশে পোশাক উৎপাদনের পরিমাণ বাড়িয়েছে এইচঅ্যান্ডএম। কারণ, তুরস্ক ও চিনের চেয়ে বাংলাদেশে পোশাক উৎপাদনের খরচ তুলনামূলক কম।

নারায়ণগঞ্জের একজন পোশাক কারখানার মালিক জানান, আয়ারল্যান্ডভিত্তিক খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান প্রাইমার্ক অনলাইনে আগামী মৌসুমের জন্য ৫-৬ কোটি পিস লেডিস পোশাকের ক্রয়াদেশের অকশন বা নিলাম করার কথা ছিল। কিন্তু সেটি শেষ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। তাতে ৭-৮ কোটি ডলারের পোশাকের ক্রয়াদেশ আসাটা অনিশ্চিত হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন-বাংলাদেশের প্রাক্তন অধিনায়ক সাকিবকে হত্যার হুমকি এক যুবকের

Previous articleসৌমিত্র দা চিরকাল আমার হৃদয়ে থাকবেন, স্মৃতিচারণে ‘অশনি সংকেত’ এর নায়িকা ববিতা
Next articleঅন্যরকম ভাইফোঁটায় সামিল তৃণমূল যুব নেতা