“হিন্দি ভাষীদের ভোটের দরকার, তার জন্যই ছটপুজো”, রাজ্য সরকারকে খোঁচা দিলীপের

আরও একবার রাজ্য সরকারের সমালোচনায় বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সমালোচনার বিষয় এবার ছটপুজো। সকালে ইকোপার্কে প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তিনি কটাক্ষের সুরে বলেন, ‘ঠেলার নাম বাবাজি’ ভোট বড় বালাই তার জন্যই এত কিছু করছেন’।

দিলীপ এদিন বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ এই সব জায়গাতেই ছটপুজোই বড় উৎসব হিন্দি ভাষীদের। বহু মানুষ নিষ্ঠার সঙ্গে এই পুজো পালন করেন। এতদিন সরকারের ছট নিয়ে কোন চিন্তা ছিল না। কোর্ট যেহেতু রায় দিয়েছে সরোবরে ছটপুজো বন্ধ করা নিয়ে, তাই সরকার এই সব দেখাচ্ছে। আসলে হিন্দিভাষী ভোটের জন্য এই সব করছে। ছটপুজো যাঁরা করেন তাঁরা বহু বছর ধরে পুজো করে আসছেন। এতদিন সামাজিকভাবে লোকেরাই ব্যবস্থা করত।” তিনি সুর চড়িয়ে আরও বলেন, “আজ সরকারের কেন মাথা ব্যথা হয়েছে? হিন্দি ভাষীদের ভোটের দরকার আছে। এতদিন হিন্দি ভাষীদের কথা মনে পড়েনি। এতদিন তাদেরকে বাইরের লোক বলে চালিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী”।

গতবছর ছটপুজোকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছিল রবীন্দ্রসরোবরে। এ প্রসঙ্গে দিলীপ বলেন, “,সব জায়গায় সফল নয় সরকার। সরকারের ধারণা থাকা উচিত কত মানুষ সেখানে আসেন। তাতে ধর্মীয় ভাবাবেগে যাতে আঘাত না আসে সেটা দেখা উচিত। এত বছর ধরে এই পরম্পরা আমরা করে আসছি। হঠাৎ করে বললে মানুষ এগুলো মেনে নেবে না বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। ছট পুজোতো হবেই। সেটা ভালো করে ব্যবস্থা করা করার দায়িত্ব সরকারের। অন্যান্য জলাশয়কে পরিস্কার করে সেখানে ব্যবস্থা করা উচিত। আমরা চাই যাঁরা এই পুজো করেন তাঁরা যেন নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো করতে পারেন”।

ইতিমধ্যে রাজ্যে এসেছেন পঞ্চপান্ডব। হাওড়া, হুগলি, মেদিনীপুর এই জোনের দায়িত্বে ত্রিপুরায় জয়ের অন্যতম কারিগর অভিজ্ঞ সুনীল দেওধর। রাঢ়বঙ্গ জোনের দায়িত্বে বিনোদ সোনকর। কলকাতা জোনের দায়িত্বে দুষ্মন্ত গৌতম। নবদ্বীপ জোনের দায়িত্বে বিনোদ তাওড়ে। উত্তরবঙ্গ জোনের দায়িত্বে কেন্দ্রীয় নেতা হরিশ দ্বিবেদী। পঞ্চপান্ডব আসা প্রসঙ্গে শাসকদল কটাক্ষের সুরে বলতে শুরু করেছে বাংলায় বিজেপি নেতাদের ওপর ভরসা নেই। এ প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি সভাপতি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদের মোদির উপর ভরসা আছে। মোদি তো বাংলার লোক নন। আমরা সর্বভারতীয় পার্টি আমাদের সিস্টেম অনুযায়ী পার্টি চলে। যাদের নেতারা আজকে ভয় পাবলিকের সামনে যাচ্ছে না, তারাই একথা বলবে। তাদের কোন মুখ নেই। সব মুখে কালি লেগে গিয়েছে। তারা এ কথা বলবে বাংলার বিজেপি কর্মীরা লড়াই করছে বলে একশ কুড়িজন বিজেপি কর্মী প্রাণ দিয়েছেন। আজও আমি বর্ধমান যাচ্ছি একটা কেসের জামিন নিতে। আমরা লড়াই করছি তাতে তৃণমূলের দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিশ্চয়ই দেখতে আসবেন। আমাদের সারাদেশে পার্টি চলে। বাংলার বিজেপি সঙ্গে সারাদেশের বিজেপি আছে, বাংলায় পরিবর্তন হচ্ছে”।

শুভেন্দু অধিকারী প্রসঙ্গ দিলীপ ঘোষ বলেন, “কে কাকে বোঝাবে এটা ওদের(তৃণমূলের) ঘরের ব্যাপার। মান অভিমান চলছে। আজকে কেন বোঝাতে হচ্ছে? পার্টির যারা বফাদার সৈনিক প্রাণ হাতে করে লড়াই করেছে তাদের মন বদলে যাচ্ছে, সাধারণ মানুষের ভাবনা চিন্তা বদলে যাচ্ছে। ধোঁকা দিয়ে বেশি দিন চলে না। এই রাজনীতি সারা ভারতে বন্ধ হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে বন্ধ করে দেব”।

 

প্রসঙ্গত, দুর্গাপুজো কালীপুজোর শেষে এখন বাকি ছটপুজো। বিগত কয়েকবছর ধরেই রাজ্যে ছটপুজো খানিকটা ধুমধাম করেই পালিত হয়। আগামীকালই পুজো। এবার করোনা আবহে অন্যান্য উত্‍সবের মতোই ছট পুজো ঘিরেও রয়েছে বেশ কিছু বিধি নিষেধ। মূলত বিহার ও উত্তর প্রদেশে পালিত হয় এই ধর্মীয় উত্‍সব। ছট মানে ‘ছট মাইয়া’। সূর্যের আরেক নাম। সূর্যকেই পুজো করা হয় ছট পুজোয়। কার্ত্তিক মাসের অমাবস্যার পর ষষ্ঠীতে এই পুজো হয়। এখন কিন্তু ছট পুজো উদযাপন শুধু বিহারি সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সারা দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায় এবং ধর্মের মানুষ এখন এই উৎসবকে আপন করে নিয়েছেন।

আরও পড়ুন-এ বছর রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো নয়: আগের নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখে রায় সুপ্রিম কোর্টের

Previous articleএ বছর রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো নয়: আগের নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখে রায় সুপ্রিম কোর্টের
Next articleনায়কের স্ত্রীর কারণে ছবি থেকে বাদ পড়েছিলাম, বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার তাপসী পান্নুর