মহারাষ্ট্রে বিজেপিকে দুরমুশ করে দিল ‘মহাবিকাশ অঘড়ি’, ৬ আসনের ৫টিতে হার

বিজেপি’র পক্ষে ‘অশুভ’ দিন৷

হায়দরাবাদ পুরভোটের গণনা শুরুর দিকে এক্সপ্রেস ট্রেনের গতিতে ছুটছিলো বিজেপি৷ এই গতি দেখার পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় গেরুয়া নেতাদের হম্বিতম্বি শুরু হয়ে যায়৷ শুক্রবার সকালেই গণনাপর্ব শুরু হয়েছে৷ বেলা যত এগিয়েছে সেই এক্সপ্রেস হয়েছে গরুর গাড়ি৷ বিকালে দেখা যায় তিন নম্বরে নেমেছে গেরুয়া শিবির৷

ওদিকে এদিনই একটু বেলায় একের পর এক আরও খারাপ খবর আসতে থাকে মহারাষ্ট্র থেকে৷ মহারাষ্ট্র বিধান পরিষদের নির্বাচনে ৬টি আসনের মধ্যে ৫ টিতেই হেরে গেলো বিজেপি৷ মাত্র একটি আসন জিতেই এবার সন্তুষ্ট থাকতে হলো মোদি-শাহের দলকে৷ বিধান পরিষদের মোট ৬টি আসনের জন্য ভোট হয় এ সপ্তাহের শুরুতেই৷ এদিন গণনা হয়৷

মহারাষ্ট্রে গত বছর বিজেপিকে হঠিয়ে ক্ষমতা দখল করে শিবসেনা নেতৃত্বাধীন ‘মহাবিকাশ অঘড়ি’৷ এদিন সেই শিবসেনা, এনসিপি এবং কংগ্রেসের জোটের কাছেই ফের পর্যুদস্ত হলো বিজেপি৷ নির্বাচনের এই ফলাফলকে গত এক বছরের MVA বা ‘মহাবিকাশ অঘড়ি’ সরকারের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে অভিহিত করেছেন NCP প্রধান শরদ পাওয়ার। তিনি বলেছেন, এই ফলাফল MVA-এর বড় জয়। আমরা নাগপুর আসনে জিতেছি। এর আগে কখনও ওই আসনে আমরা জিতিনি৷ এই ফলাফল দেখিয়ে দিল যে, গত এক বছরে MVA-র কাজে মানুষের আস্থা রয়েছে। নতুন জোটকে গ্রহণ করেছেন সাধারণ মানুষ।

নাগপুরে MVA-র জয় বিজেপির পক্ষে বড় ধাক্কা বলেই মনে করা হচ্ছে। গত পাঁচ দশক নাগপুর বিজেপি-আরএসএসের শক্তঘাঁটি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশের বাবা গঙ্গাধররাও ফড়নবিশ টানা ১২ বছর এই আসনে জিতেছিলেন৷ নীতীন গড়কড়ি ২৫ বছর এই আসন দখলে রেখেছিলেন। বিজেপির জন্য আরও খারাপ খবর এসেছে নাগপুর থেকে৷ গেরুয়া শিবিরের শক্ত ঘাঁটি তথা RSS-এর সদর দফতর নাগপুরে৷ সেখানেও ধুয়ে গিয়েছে বিজেপি৷ এই আসন থেকে একসময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গড়কড়ি নির্বাচিত হয়েছেন৷ পুণেতে টানা প্রচার চালিয়েছিলেন
দেবেন্দ্র ফড়নবিশ, চন্দ্রকান্ত পাটিলের মতো বিজেপির হেভিওয়েট নেতারা, সেখান থেকেও খালি হাতে ফিরেছে পদ্ম-বাহিনী৷

আরও পড়ুন : কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে অবাঞ্ছিত মন্তব্য, কানাডার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে সতর্ক করল ভারত

রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং হেভিওয়েট বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবিশ ফলপ্রকাশের পর এদিন বলেছেন, “তিন দলের সম্মিলিত শক্তি কতখানি, তা আমরা বুঝতে পারিনি৷ বুঝতে ভুল হয়েছিলো বলেই এই ফল৷ বোঝা যাচ্ছে, আমাদের হিসেবেও গরমিল ছিলো৷ এই ফল একদমই প্রত্যাশা করিনি আমরা৷” প্রসঙ্গত, বিহার ভোটে দলের তরফে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো এই ফড়নবিশ’কেই৷ বিহারে বিজেপি-জোট ক্ষমতা দখল করলেও আশানুরূপ ফল হয়নি৷ সেখানেও ফড়নবিশ বুঝতে ভুল করেছিলেন তেজস্বী যাদবের তেজ৷

মহারাষ্ট্র বিধান পরিষদের যে ৬ টি আসনে নির্বাচন হয়েছে তার মধ্যে ঔরঙ্গাবাদ, পুণে এবং নাগপুরের ৩ টি আসন ছিলো স্নাতক ভোটারদের জন্য সংরক্ষিত৷ পুণে এবং অমরাবতীর ২ টি আসন শিক্ষকদের জন্য সংরক্ষিত ছিল৷ বিজেপি যে আসনটিতে জিতেছে সেই ধুলে নান্দুরবার আসনটির জয়ী প্রার্থী অমরিশ পটেল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন৷ সেই কারণেই সেখানে ফের উপনির্বাচন হয়৷ সেখানে জিতেছেন অমরিশই৷ ৬ আসনের ভোটের ফলপ্রকাশের পর দেখা গিয়েছে ঔরঙ্গাবাদ এবং পুণে’র স্নাতকদের ভোটে নির্বাচিত আসনে জয়ী হয়েছেন NCP-র দুই প্রার্থী৷ কংগ্রেস জয়ী হয়েছে দু’টি আসনে৷ একটি আসন পেয়েছেন নির্দল প্রার্থী৷ শিবসেনা একটিও আসনে জিততে পারেনি৷ অমরাবতীতে এক নির্দল প্রার্থীর কাছে হেরেছেন শিবসেনা প্রার্থী৷
ধুলে-নান্দুরবার আসনের উপনির্বাচনে জিতেছে বিজেপি৷ এটাই একমাত্র জেতা আসন বিজেপির৷

মহারাষ্ট্র বিধান পরিষদের মোট আসন ৭৮টি৷ এর মধ্যে ৭টি করে আসনে প্রার্থীদের নির্বাচিত করেন স্নাতক এবং শিক্ষকরা৷ এ বছর যে আসনগুলিতে ভোট হয়েছে, সেখানে প্রায় ১২ লক্ষ শিক্ষক এবং স্নাতকরা ভোট দিয়েছেন৷ এবং একমাত্র এই ভোটার সংখ্যার কারনেই ভোটের এই ফল বিজেপির কাছে যেমন আশঙ্কার, তেমনই যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ মহারাষ্ট্রের শাসক জোটের কাছে৷ এই ফল প্রমান করেছে, উদ্ধব ঠাকরে সরকারের কাজে ওই রাজ্যের শিক্ষক এবং স্নাতকরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট৷

Previous articleকৃষক বিক্ষোভ নিয়ে অবাঞ্ছিত মন্তব্য, কানাডার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে সতর্ক করল ভারত
Next articleজট কাটলো আলিপুর চিড়িয়াখানায়, ১০ দিনের মধ্যেই চাকরি দেওয়ার আশ্বাস