বাংলায় বিশ্বকবির বাণী, গণতন্ত্রের জয়ধ্বনি: নয়া সংসদ ভবনের শিলান্যাস করলেন মোদি

সামনেই বাংলার বিধানসভা নির্বাচন। তাই হয়তো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখে স্বামী বিবেকানন্দ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাণী। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে নতুন সংসদ ভবনের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে কবিগুরুর ঐক্যের দর্শন মনে করিয়ে নিখাদ বাংলায় মোদি বললেন, কবি বলেছিলেন একতাই প্রেরণা। বিশ্বভুবনে হবে ভারতের জয়। স্বামী বিবেকানন্দকেও এদিন স্মরণ করেন মোদি। বলেন, স্বামীজী বলেছিলেন, আগামী ৫০ বছর ভারতমাতার সাধনাই হবে আমাদের কর্তব্য। এঁদের এই উপদেশ পাথেয় করে রাষ্ট্রহিতকেই সর্বাধিকার দিতে হবে। মোদি বলেন, গণতন্ত্রই আমাদের চালিকাশক্তি। ভারতবর্ষ গণতন্ত্রের মাতৃভূমি। গণতন্ত্র আমাদের জীবনতত্ত্ব ও জীবনতন্ত্র। সংসদ ভবন হল এই গণতন্ত্রের প্রতীক। নতুন সংসদ ভবন দেখে বিশ্ব বুঝবে ভারতের অগ্রগতি। নতুন সংসদ ভবন একদিকে হবে আমাদের আকাঙ্ক্ষার প্রতীক, অন্যদিকে গর্বের স্মারক। নতুন এই সংসদ ভবনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে জনগণের একাত্মতা আরও গভীরভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। নতুন সংসদ ভবন হবে আত্মনির্ভর ভারতের প্রতীক।

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে নতুন সংসদ ভবনের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে কোভিড সুরক্ষাবিধি মেনে ২০০ জন আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত ছিলেন। সংসদ ভবন তৈরির দায়িত্ব পেয়েছে ভারতের প্রথম সারির শিল্প সংস্থা টাটা গোষ্ঠী। অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কর্ণধার রতন টাটাও। অনুষ্ঠানের শুরুতে কর্নাটকের শৃঙ্গেরি মঠের পাঁচ পুরোহিতের বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণের মধ্যে দিয়ে ভূমি পূজন করেন প্রধানমন্ত্রী। নতুন সংসদ ভবনটিতে লোকসভা কক্ষে ৮৮৮ জন ও রাজ্যসভা কক্ষে ৩৮৪ জনের বসার বন্দোবস্ত থাকবে।

কেন্দ্রীয় সরকারের সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রজেক্টের অধীনে তৈরি হচ্ছে নতুন সংসদ ভবন নির্মাণ। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে এই ব্যায়বহুল প্রকল্প নিয়ে বিচারপতিদের কড়া তোপের মুখে পড়ে কেন্দ্রীয় সরকার। শীর্ষ আদালত প্রশ্ন তোলে, এই প্রকল্প নিয়ে আদালতে একাধিক মামলা চলা সত্ত্বেও কেন তড়িঘড়ি নির্মাণ ও ভাঙাভাঙির কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে? মধ্য দিল্লির এই বিরাট প্রকল্পে সংসদ ভবন, প্রশাসনিক কেন্দ্র, সংলগ্ন রাস্তা, মন্ত্রিদের বাসস্থান সহ বহু ভবন পুনর্গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। অভিযোগ উঠেছে, অতিমারির পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে বিশাল ব্যয়বহুল এই প্রকল্পের কাজ জারি রেখেছে সরকার। শুধু তাই নয়। নতুন প্রকল্পের জন্য প্রচুর গাছ কেটে পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ। এই নিয়ে বিভিন্ন মহল সুপ্রিম কোর্টে কাজ বন্ধের আর্জি জানিয়ে মামলা করে। মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই সরকার গাছ কাটা, ভাঙাভাঙি ও পুনর্নির্মাণের কাজ যথারীতি চালিয়ে যাচ্ছিল। তা নিয়েই কেন্দ্রকে কড়া ভর্ৎসনা করে শীর্ষ আদালত। সেইসঙ্গে নির্দেশ দেয়, যতদিন না মামলার নিষ্পত্তি হয় ততদিন ভাঙা বা নির্মাণ সহ সমস্ত ধরনের কাজ বন্ধ রাখতে হবে। তবে প্রধানমন্ত্রীর শিলান্যাসের কর্মসূচি যেহেতু আগেই ঘোষিত হয়েছে সেজন্য সেই বিষয়ে কোনও হস্তক্ষেপ করবে না সুপ্রিম কোর্ট। ফলে আদালতের রায়কে বাঁচিয়েই আজ নতুন সংসদ ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

নতুন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রায় ৫৬০ ফুট ব্যাসের বৃত্তাকার সংসদ ভবন থেকে যাবে ইতিহাসের এক অনন্য পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে। তার পাশেই তৈরি হবে নতুন ত্রিভুজাকৃতি সংসদ ভবন, যা প্রায় ৬৪,৫০০ বর্গমিটার জুড়ে থাকবে। সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রজেক্টের মোট খরচ ২০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে নতুন সংসদ ভবন নির্মাণের খরচ ধরা হয়েছে ৯৭১ কোটি টাকা। ২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের সঙ্গে সমন্বয় রেখে প্রকল্পের দায়িত্ব পালন করবে টাটা গোষ্ঠী।

করোনা বিশ্ব মহামারির অভূতপূর্ব পরিস্থিতি ও অর্থনীতির সংকটের মধ্যে এখন কেন নতুন সংসদ ভবন তৈরিতে বিপুল টাকা ঢালা হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলে সোনিয়া গান্ধী সহ বিরোধী শিবিরের একাধিক নেতানেত্রী প্রশ্ন তুলেছিলেন। দেশজুড়ে বিশেষ সংকটের পরিস্থিতিতে মোদি সরকারের অগ্রাধিকার কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। কিন্তু সেই আপত্তি কানে তোলেনি কেন্দ্র। অবশেষে শীর্ষ আদালত হস্তক্ষেপ করে প্রকল্পের কাজ আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। তাই বৃহস্পতিবার শিলান্যাস হলেও সংসদ ভবন পুনর্গঠনের কাজ কবে শুরু করা যাবে তা পুরোটাই এখন আদালতের বিচার্য।

আরও পড়ুন-ফের সার্জিকাল স্ট্রাইকের আশঙ্কায় পাক সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ!

Previous articleবঙ্গধ্বনি যাত্রা: দলীয় ভাবে সরকারের ১০ বছর কাজের রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ তৃণমূলের
Next articleপাবলিসিটি পেতে পরিকল্পনা মাফিক হামলা ঘটিয়েছে বিজেপি, ডায়মন্ড হারবার প্রসঙ্গে সুব্রত