রাজ্যের আরও ২২ নেতাকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা, নাম নিয়ে তুমুল জল্পনা

শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) দল ছাড়বেন, এটা প্রায় নিশ্চিত৷ অপেক্ষা শুধু সময়ের৷ তৃণমূলও(TMC) আর ভাবছে না শুভেন্দুকে নিয়ে৷

কিন্তু অন্য এক ভাবনা ধীরে ধীরে গ্রাস করেছে রাজ্যের শাসক দলকে৷ শুভেন্দু যাচ্ছেন তা বোঝা গেলেও, তৃণমূল উদ্বিগ্ন, তাঁর সঙ্গে বা পরে আর কে কে অথবা কতজন নেতা- বিধায়ক দল ছাড়ছেন, তা নিয়েই !

একাধিক নাম বাজারে ঘুরছে৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে৷ এই রটনা সত্যি না মিথ্যা, তা এখনও স্পষ্ট নয়৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamara Banerjee) জেলা সফর শুরু করার পর অবশ্য নাম নিয়ে জল্পনা কিছুটা কমেছে৷ তবুও রাজনৈতিক মহল মোটামুটি নিশ্চিত, একা শুভেন্দু অধিকারী নন, তৃণমূলের বেশ কিছু নেতা দল ছাড়ছেনই৷ প্রথম ধাক্কাতেই তৃণমূলকে ভালো রকম দুর্বল করার সুযোগ কিছুতেই ছাড়বেন না শুভেন্দু৷ রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, তৃণমূল ভাঙ্গার তাগিদ অনেক বেশি শুভেন্দুরই৷ কারন পুরনো দল তিনি ঠিক কতখানি ভাঙ্গতে পারেন, তাঁর উপরেই নির্ভর করছে নতুন দলে শুভেন্দু অধিকারীর প্রতিষ্ঠা ও মর্যাদালাভের বিষয়টি৷ এর আগে তৃণমূলের দুই হেভিওয়েট, মুকুল রায় (Mukul Roy) এবং শোভন চট্টোপাধ্যায় (Sovon Chatterjee) বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন৷ এনারা কেউই সেভাবে শাসক দলের নেতাস্তরে সেভাবে ফাটল লাগাতে পারেননি৷ মুকুলবাবু কিছুটা সফল হলেও শোভনবাবু একেবারেই ব্যর্থ৷ ফলে তৃণমূলের উপরের সারির নেতাদের দলে আনার বিষয়ে বিজেপি যতখানি আশা করেছিলো, তা পূরণ হয়নি৷ তাই শুভেন্দু অধিকারীর বেলায় গেরুয়া-শিবির অনেক সতর্ক৷ শুধুই একজনকে দলে আনা নয়, তাঁর দ্বারা তৃণমূলের কতখানি ‘ক্ষতি’ করা যাচ্ছে, সেটাই এখন প্রধান বিবেচ্য বিজেপির কাছে৷ আগাম ঢাকঢোল বাজাতে আর রাজি নয় গেরুয়া শিবির৷ ঠিক যে কারনে কোচবিহারের মিহির গোস্বামী একরকম নীরবেই তৃণমূল থেকে বিজেপিতে গিয়েছেন৷

বিজেপিসূত্রের খবর, শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে অনেকটাই আশাবাদী বিজেপি৷ কেন্দ্রের শাসক দলের শীর্ষমহল আপাতত শুভেন্দুর সঙ্গে যতখানি কথাবার্তা চালিয়েছে, তাতে দলত্যাগীদের তালিকা বেশ লম্বা বলেই বিজেপির মনে হয়েছে৷ সে কারনেই বিজেপির আশঙ্কা হয়েছে, এমন ঘটলে শুভেন্দুর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে৷ তাই দলবদলের আগেই নজিরবিহীনভাবে শুভেন্দুকে কঠিন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তায় মুড়ে দেওয়ার ঘোষণা আগাম করা হয়েছে৷ এতে পরোক্ষে লাইনে থাকা অন্যান্য নেতাদেরও একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে বিজেপির ধারনা৷

শুভেন্দুর দলত্যাগ নিয়ে আলোচনা এখন অতীত৷ এই মুহুর্তে যে বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপি, দু’তরফই কৌতূহলী, তা হলো, ‘আর কোন কোন নাম আছে দল ছাড়ার লিস্টে’৷ দু’তরফই কড়া নজর রাখছে৷ নাম নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে৷ তবে এর মাঝেই বিজেপি একটা কাজ সেরে রেখেছে৷ এবং অনুমান, এই কাজ করেছে, শুভেন্দুর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই৷
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রের খবর, একুশের ভোটের আগে এ রাজ্যের একাধিক নেতার উপর রাজনৈতিক হামলা হতে পারে৷ রাজ্যে কর্মরত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা এমনই ‘ইনপুট’ দিয়েছেন৷
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে পাঠানো গোয়েন্দা রিপোর্ট এমনই বলেছে৷ তারপরেই তাৎপর্যপূর্ণ এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র৷ সূত্রের খবর, নন্দীগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বরাদ্দ করার পর আরও ২২ জন রাজনৈতিক নেতার নিরাপত্তা বাড়াতে চলেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তবে এই ২২ জন কারা, তা এখনও জানা যায়নি৷ এ রাজ্যের বিজেপি নেতাদের অধিকাংশই এখন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পাচ্ছেন৷ তাহলে এই ২২ জন কারা ? বঙ্গ- বিজেপির তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণির নেতাদের নিশ্চয়ই সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছে না কেন্দ্র ! শুভেন্দুকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়ার পরই যেমন স্পষ্ট হয়েছে, তিনি বিজেপিতেই পা রাখছেন, তেমনই রাজনৈতিক মহলের ধারনা, যে ২২ জনের নিরাপত্তা নিয়ে পর্যালোচনা করছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক, তারাও তৃণমূল বা অন্য দল ছেড়ে দ্রুত বিজেপিতে যোগদান করতে পারেন।
সূত্রের খবর, এই ২২ জনের মধ্যে ৪ জনকে ওয়াই প্লাস, ১০ জনকে ওয়াই ও ৬ জনকে এক্স শ্রেণির নিরাপত্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। একাধিক কেন্দ্রীয় বাহিনীর সশস্ত্র জওয়ানরাই সাধারনত কেন্দ্রীয় নিরাপত্তায় মোতায়েন থাকেন ২৪ ঘন্টা৷
বাড়তি ২২ জনকে এভাবে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বরাদ্দ করার কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে এটা পরিষ্কার যে, রাজ্যের এক ঝাঁক নেতা বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন৷ এই নেতারা তৃণমূলের হতে পারেন, আবার অন্য দলেরও হতে পারেন৷ মোটের উপর, বিজেপির ‘খেলা’ এখনও বাকি৷

Previous articleজম্বি আছে এই পৃথিবীতেই, কল্পনার জাল ছিঁড়ে তার হিমশীতল স্পর্শ পেল বিজ্ঞান
Next articleউপাচার্য নিয়োগ নিয়ে বাগযুদ্ধ রাজ্যপাল-শিক্ষামন্ত্রীর