আদর্শ নয়, ব্যক্তিগত সঙ্কীর্ণতাতেই আটকে গেল শুভেন্দুর প্রথম গেরুয়া ভাষণ

জল্পনা মতোই মেদিনীপুর কলেজ মাঠে অমিত শাহর সভায় বিজেপিতে যোগ দিলেন শুভেন্দু অধিকারী (Subhendu Adhikari)। আর যোগ দিয়েই একেবারে বিজেপির সুরে সুর মিলিয়ে বক্তৃতা দিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী। তবে নীতি-আদর্শ নয়, ব্যক্তি কেন্দ্রিক সংকীর্ণতাতেই আটকে গেল শুভেন্দুর প্রথম গেরুয়া ভাষণ। ব্যক্তিগত আক্রমণের পথেই হাঁটলেন তিনি।

ভাষণের শুরুতেই বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহকে (Amit Shah) ‘নিজের বড় দাদা’ বলে অভিহিত করলেন শুভেন্দু।
এই বিরাট মঞ্চে তাঁকে বক্তব্য রাখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানালেন। শুধু তাই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলে জায়গা দেওয়ার জন্য বড় দাদা অমিত শাহকে কৃতজ্ঞতা জানান।

তবে সদ্য নয়, শুভেন্দুর দাবি, ২০১৪ সাল থেকে তিনি অমিত শাহর পরিচিত। এরপর তিনি অভিমান করে বলেন, “যখন কোভিড আক্রান্ত হয়েছি, তখন ২১ বছর যে দল করেছি, সে দল খোঁজ নেয়নি। অথচ অমিত জি দুবার ফোন করেছেন”। এখানেও সেই ব্যক্তিগত মান-অভিমানের উদাহরণ তুললেন তিনি।

এরপর শুভেন্দু বলেন বিজেপি (Bjp) নেতারা তাঁকে বলেছিলেন, “শুভেন্দু আত্মসম্মানে যদি বাঁচতে চাস তৃণমূল ছেড়েদে। বিজেপিতে চলে এসে সম্মান নিয়ে বাঁচ”। এখানে নীতি-আদর্শের কথা কোথায়? সেই তো ব্যক্তিগত মান-সম্মানের প্রশ্ন তুললেন শুভেন্দু।

তৃণমূল (Tmc) নেতারা দল ছেড়ে বিজেপিতে আসার সম্ভাবনা দেখা দিতেই পুরনো বিজেপি নেতাদের মধ্যে বিভিন্ন রকম বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল। তাঁদেরকে সভা থেকে আশ্বস্ত করেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, “শুভেন্দু মাতব্বরি করতে আসেনি। শুভেন্দু কর্মী হিসেবে এসেছে। কর্মী হিসেবে পতাকা লাগাবো, দেওয়াল লিখব”।

এরপরই তৃণমূল নেতৃত্বের উদ্দেশ্যে নাম না করে শুভেন্দু অধিকারী জানান, “আমাকে বিশ্বাসঘাতক বলছে, তাঁরা 1998-তে অটল বিহারী বাজপেয়ীর আশির্বাদ ছাড়া বাড়ি থেকে বেরোতে পারতেন না”। সেই সময় এনডিএ সরকারে তৃণমূল জোট হিসেবে ছিল বলেও উল্লেখ করেন শুভেন্দু।

“তৃণমূলে আত্মসম্মান নিয়ে কেউ থাকতে পারে না” ২১ বছর থাকার পর দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে মন্তব্য করলেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, “যাঁরা বলছেন আমি মাকে ছেড়েছি, তাঁদের বলছি আমার মা গায়েত্রী অধিকারী আর কেউ না। আর এক মা হচ্ছে ভারত মাতা”।

এদিনের সভা থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলি রাজ্যে চালু হতে না দেওয়ার বিষয়ে সরভ হন শুভেন্দু।

একই সঙ্গে এদিন ফের ‘বহিরাগত’ প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সুর চড়ান তিনি। বলেন, “যে বাংলা নানা ভাষা-নানা মত-নানা পরিধানে ভূমি, সেখানে অমিত শাহ কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে বহিরাগত বলা হচ্ছে”।

শুভেন্দুর অভিযোগ, রাজ্যে অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। চাকরি নেই। টেট, এসএসসিতে নিয়োগ হচ্ছে না। বক্তব্যের একেবারে শেষে বিজেপি নেতাদের কায়দায় ‘তোলাবাজ ভাইপো হঠাও’ বলে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি শুভেন্দু। অথচ বক্তব্যের কোথাও নীতি-আদর্শের কথা নেই। নেই যোগদান করার ক্ষেত্রে নীতিগতভাবে কোনও কারণ। বক্তব্য জুড়ে শুধুই অভিমান, ব্যক্তি গত মান-সম্মান, মর্যাদা, দলে থাকতে না পারার অভিযোগ। নীতি ছেড়ে ব্যক্তিগত আক্রমণের পথেই হাঁটলেন শুভেন্দু অধিকারী।

আরও পড়ুন-‘তৃণমূল ৩ অঙ্ক পার করতে পারবে না’, শুভেন্দুকে পাশে পেয়ে হুঙ্কার মুকুলের

Previous article‘তৃণমূল ৩ অঙ্ক পার করতে পারবে না’, শুভেন্দুকে পাশে পেয়ে হুঙ্কার মুকুলের
Next article১২৩ আইএফএ শিল্ড চ‍্যাম্পিয়ন রিয়াল কাশ্মীর