বিনয়ের কড়া সমালোচনার পাশাপাশি বিজেপিকে রুখতে একত্রে চলার ডাক বিমলের

কিশোর সাহা: নাম না করে বিনয় তামাং(Binad Tamang), অনীত থাপাদের(Anit Thapa) কড়া সমালোচনা করলেও আগামী বিধানসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে বিজেপিকে(BJP) হারাতে একজোট হয়ে চলার ডাক দিলেন বিমল গুরুং(Bimal Gurung)। প্রায় সাড়ে তিন বছর বাদে দার্জিলিঙে পা দিয়ে রবিবার চকবাজারের জনসভায় গুরুং ওই বার্তা দেন। গুরুংয়ের বক্তব্য, এতদিন পাহাড়ের মানুষের দাবি, আবেগকে সামনে রেখে যে রাজনৈতিক লাভ বিজেপিকে দেওয়া হয়েছে তার পুনরাবৃত্তি আর হবে না। আগামী বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে পাহাড় তো বটেই, উত্তরবঙ্গের অন্তত ১৯টি আসনে হারাতে পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সের নেপালি ভাষী, আদিবাসী, রাজবংশী সহ সবাইকে জোট বেঁধে চলতে হবে। তার পরে আগামী দিনে সকলে মিলেই পাহাড়-তরাই ও ডুয়ার্সের প্রাপ্য দাবি আদায় করতে হবে।

২০১৭ সালে পাহাড়ছাড়া হওয়ার পরে গুরুং এদিন প্রথম পাহাড়ে পা দেন। ফলে, তিনি বিনয় তামাং, অনীত থাপাদের বিরুদ্ধে কী বলেন, বিজেপির বিরুদ্ধে কতটা সুর চড়ান, কী যুক্তি দেন তা নিয়ে সব মহলেই কৌতুহল ছিল। এদিন বক্তৃতার গোড়া থেকেই বিজেপি বিরোধিতায় সুর চড়ান গুরুং। বিমল গুরুংয়ের অভিযোগ, তিনি মামলায় জেরবার হয়ে গা ঢাকা দিয়ে থাকার সময়ে বিজেপির তরফে তাঁকে লাগাতার আশ্বাস দেওয়া হলেও কাজের কাজ কেউ করেননি। বিমলের অভিযোগ, বিজেপি নেতারা তাঁকে নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করবেন বললেও একজন কনস্টেবলকে পর্যন্ত দেননি। এমনকী, তিনি কী খাচ্ছেন, কোথায় থাকছেন তা নিয়েও বিজেপি নেতারা খোঁজখবর অবদি নেননি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। গুরুংয়ের বক্তব্য, তিনি দিল্লিতে নানা জায়গায় গা ঢাকা দিয়ে থেকেও বিজেপিকে লোকসভা ভোটে দার্জিলিং কেন্দ্র থেকে সাড়ে ৪ লক্ষ ভোটে জিতিয়েছেন, দার্জিলিং উপনির্বাচনেও জিতিয়েছেন। তার পরেও পাহাড়ের ১১টি সম্প্রদায়কে আদাবীস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কাজ করেনি কেন্দ্রীয় সরকার।

শুধু তাই নয়, সভা মঞ্চ থেকে গুরুং পাহাড়বাসীদের কাছে আহ্বান জানান, যে যাঁর এলাকায় কোনও বিজেপি নেতা গেলে তাঁদের যেন প্রশ্ন করে জানতে চান, এ যাবৎ তিন জনকে পাহাড়বাসী লোকসভায় পাঠানোর পরেও কেন পাহাড়ের সমস্যার স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান হয়নি! এটাও প্রশ্ন করার পরামর্শ দেন যে, বিজেপি এতবার পাহাড় থেকে সাংসদ পাওয়ার পরেও ১১টি সম্প্রদায়কে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছে! প্রসঙ্গত, ওই ১১টি সম্প্রদায়কে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে বর্তমান রাজ্য মন্ত্রিসভার পক্ষ থেকে অনুমোদন করে কেন্দ্রের কাছে তিন বছর আগেই পাঠানো হয়েছে। গুরুংয়ের আর্জি, এলাকায় কোনও বিজেপি নেতা গেলেই প্রশ্ন করতে হবে, কেন গোর্খাদের আবেগকে ভর করে বারবার ভোটে জেতার পরেও পাহাড়ের জন্য বিজেপির সাংসদরা কেন কিছু করেননি!

তাঁর বক্তৃতার সিংহভাগ জুড়ে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতারণার অবিযোগ থাকলেও শেষ পর্বে গুরুং নাম না করে বিনয় ও অনীতদের সমালোচনা করেছেন। তিনি জানান, ২০১৭ সালে বিনয় তামাংয়ের নেতৃত্বে জিটিএ চুক্তি পোড়ানো হয়েছিল দার্জিলিঙে। কারণ, পাহাড়ে আরও বেশি স্বশাসনের পক্ষে লড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। বিমলের প্রশ্ন, যিনি চুক্তি পুড়িয়েছিলেন, সেই তিনিই জিটিএ-র পদে মনোনীত হয়ে বসে নিজেকে মন্ত্রী ভাবা শুরু করে দিলেন কোন যুক্তিতে! এর পরে গত সাড়ে তিন বছরে রাজ্য কত টাকা বরাদ্দ করেছে পাহাড়কে তার ৭০ শতাংশ নয়ছয়ের আশঙ্কা করে তদন্তের দাবিও করেছেন গুরুং। মদন তামাংয়ের খুনের মামলায় অভিযুক্তদের কয়েকজনকে ডেকে চাকরি দেওয়া হয়েছে কেন সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।

একইসঙ্গে নাম না করে বিনয় তামাংয়ের সাংগঠনিক ক্ষমতা আদতে কতটুকু তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিমল গুরুং। তাঁর কথায়, আমি দিল্লিতে বসে থেকে পাহাড় থেকে লোকসভার বিজেপি প্রার্থীকে জিতিয়েছি। আর একজন নিজেকে মন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করে নিজে উপনির্বাচনে দাঁড়িয়ে বিজেপির প্রার্থীর কাছে ৬৫ হাজার ভোটে হেরেছেন। তা হলেই বুঝে দেখুন কার কী অবস্থা!

একদা সতীর্থের সমালোচনা করলেও গুরুং বক্তৃতার শেষ পর্বে পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সের দাবি নিয়ে লড়ছে যে সব দল ও সংগঠন তাদের একজোট হওয়ার ডাক দিয়েছেন। তিনিব জিএনএলএফ সহ সবল দলকে আগামী বিধানসভা ভোটে একজোট হয়ে বিজেপিকে হারানোর জন্য জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। গুরুং বলেছেন, তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে এক সময়ে দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদ পেয়েছেন, পরে জিটিএ হয়েছে। কিন্তু, তরাই ও ডুয়ার্ কিছুই পায়নি। আগামী দিনে একজোট হয়ে বিজেপিকে উত্তরবঙ্গে পর্যুদস্ত করার পরে পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সের সামগ্রিক উন্নয়ন করতেও একসঙ্গে ঝাঁপাতে হবে বলে গুরুং মনে করেন। এটাও গুরুং জানিয়ে দেন, আন্দোলন করলেও পাহাড়ে যাতে শান্তি থাকে, সকলে যাতে হাসি মুখে থাকতে পারেন, নিশ্চিন্তে ব্যবসা করতে পারেন, সব সম্প্দয়ার য়াতে মিলেমিশে থাকতে পারে তা নিশ্চিত করাও তাঁর আগ্রাধিকার তালিকায় থাকবে।

আরও পড়ুন:বাংলায় এসে ৭ টি সাজানো মিথ্যে বলেছেন শাহ, ব্যাখ্যা দিলেন ডেরেক

দিনের শেষে গুরুংয়ের সভার ভিড় ও বক্তৃতা বিজেপিকে যতটা উদ্বিগ্ন করবে, অবশ্যই তৃণমূলকে ততটাই আশ্বস্ত করবে। কারণ, গুরুং ফেরার পরে অনেকে বিনয়ের সঙ্গে লড়াই বাঁধবে বলে হইচই শুরু করায় তৃণমূলের অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন। কিন্তু, গুরুং যেভাবে মিলেমিশে একজোট হয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছেন তাতে ওই উদ্বিগ্ন শিবিরের আপাতত সুর পাল্টানো ছাড়া কিছু করার নেই।

Previous articleবাবরির চেয়েও বড় অযোধ্যার নয়া মসজিদ, থাকছে হাসপাতাল, প্রকাশ্যে ব্লু প্রিন্ট
Next articleসোশ্যাল মিডিয়া লিটারারি মিট, এক টুকরো টাটকা বাতাস নটী বিনোদিনী স্মৃতি বিজড়িত স্টারে