খেজুর গুড় তৈরি করে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন কর্মহীন দিনমজুররা

শীতের মরশুম পড়তেই খেজুরের রস এবং গুড় তৈরির কাজ শুরু হয়েছে মালদায়। ফলে এই কাজে চাষিদের মধ্যে ব্যাপক তৎপরতা দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই খেজুরের রস সংগ্রহ করার পর গুড় তৈরির কাজে জোর দিয়েছেন অসংখ্য চাষি এবং তাদের পরিবার। চলতি বছর করোনা সংক্রমণের জেরে লকডাউন পরিস্থিতিতে খেজুরের রস এবং গুড় তৈরীর ক্ষেত্রে কোনও রকম সমস্যা হয়নি বলে চাষীদের দাবি। কারণ, গরমের মরশুমে খেজুরের রস উৎপাদন হয় না। সেই সময় গুড় তৈরির চাহিদাও থাকে না। ফলে তুলনামূলকভাবে খেজুরের গুড় উৎপাদনকারী চাষিদের কোনও সমস্যা হয় নি। কিন্তু সেই সময় অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে চাষীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছিলো। এখন করোনা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিকের পথে। তাই শীতের মরশুম শুরু হতেই জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে খেজুর গুড় প্রস্তুতকারক এবং রস সংগ্রহকারীদের মধ্যে।

পুরাতন মালদা ব্লকের যাত্রাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতে দুর্গাপুর গ্রামের প্রায় ৫০ টি পরিবার খেজুরের রস সংগ্রহ এবং গুড় তৈরির কাজ শুরু করেছে। বাড়ির পুরুষেরা রস সংগ্রহ করার পর সেটি এক জায়গায় মজুত করছেন । এরপর বাড়ির অধিকাংশ মহিলারা গুড় তৈরির কাজে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরাতন মালদা ও গাজোল ব্লকের বিভিন্ন এলাকার খেজুর গাছ লিজ নেওয়ার পর রস সংগ্রহের কাজ করে থাকেন চাষিরা । তারপরই সেই রস বাড়িতে নিয়ে এনেই গুড় তৈরীর কাজ করেন সেইসব চাষি ও তাদের পরিবারের লোকেরা।

যাত্রাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের দুর্গাপুর গ্রামের খেজুর গুড় প্রস্তুতকারক সত্য রঞ্জন মন্ডল বলেন, এখন শীতের মরশুম শুরু হয়েছে। ফলে খেজুর গুড়ের চাহিদা ভালোই রয়েছে । ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এই কাজ তারা করে থাকেন । বর্তমানে বাজারে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কিলো দরে বিক্রি হচ্ছে খেজুরের গুড়। অনেক ক্ষেত্রে আবার খেজুরের রস বিক্রি করা হয়ে থাকে। এসময় এলাকার বহু চাষীদের পরিবার খেজুরের রস সংগ্রহ এবং গুড় তৈরীর কাজ করে থাকেন। লকডাউনের মধ্যে বিশেষ ক্ষেত্রে চাষীদের অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। সেই পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে এখন এলাকার অনেক চাষিরা ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করছেন।

চাষিরা জানান, খেজুরের রসকে আগুনে জাল দিয়ে দুই ধরনের গুড় উৎপাদন করা হয়। প্রচলিত ভাষায় ঝোলাগুড় এবং আঠিকুর গুড় বলে থাকেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। পৌষ মাসে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে খেজুরের চাহিদা থাকে ব্যাপক। বিভিন্ন ধরনের পিঠা, পুলি , পায়েস তৈরি ক্ষেত্রে এই গুড়ের চাহিদা রয়েছে বরাবর । তাই এখন সিজন শুরু হয়েছে। আর একাজে ব্যাপক উৎসাহ দেখা দিয়েছে এলাকার বহু চাষী এবং তাদের পরিবারের মধ্যে।

পুরাতন মালদা ব্লকের যাত্রাডাঙ্গা গ্রামের প্রস্তুতকারক চাষি হীরেন মন্ডল, সন্তোষ মন্ডল বলেন, আঠিগুড় হচ্ছে শক্ত টাইপের। ঝোলাগুড় হচ্ছে তরল। দুই ধরনের গুড়ের চাহিদা রয়েছে মালদা জেলার বাইরেও। মালদার এই গুড়ের উৎপাদন এবার অনেকটাই বাড়বে বলে আশষা করা হচ্ছে। কারণ , লকডাউনের জেরে বহু দিনমজুর চাষীদের পরিবারের হাতে কাজ নেই । তাই অনেকেই খেজুর গাছ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। এতে করে চাষীদের রুজি রোজগারে ক্ষেত্রে অনেকটা সুবিধা হচ্ছে।

পুরাতন মালদা পঞ্চায়েত সমিতি সভাপতি মৃণালিনী মন্ডল মাইতি জানিয়েছেন, খেজুরের গুড় ও রস সংগ্রহের ক্ষেত্রে চাষীদের কাজের আগ্রহ বরাবর রয়েছে এই এলাকায় চাষীদের। এক্ষেত্রে রাজ্য সরকার বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা করে আসছে। সংশ্লিষ্ট ব্লকে খেজুর গাছের চাষ বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন:দুর্গাপুরে দিলীপ ঘোষের সভায় প্রবল হাতাহাতি, বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে

উদ্যানপালন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদা জেলায় পুরাতন মালদা, গাজোল, হবিবপুর ব্লকে খেজুরের গাছের সংখ্যা বেশি মূলত ‌। এসব ব্লকে অনেক দিন মজুর ও চাষীদের পরিবার রস সংগ্রহ এবং গুড় তৈরীর কাজ করে থাকেন। সেইসব চাষিদের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

Previous articleদুর্গাপুরে দিলীপ ঘোষের সভায় প্রবল হাতাহাতি, বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে
Next articleঅসুস্থ শরীরেও বাড়ির কাজ, সন্তানদের জন্য রান্না করছেন, ভিডিও পোস্ট শ্রীলেখার