ঘুরছে লোকসভার হাওয়া, উত্তরে আত্মবিশ্বাসী অভিষেক

কিশোর সাহা

লোকসভা ভোটের হাওয়া ঘুরছে। একাধিক সমীক্ষাতেই তা অনেকটাই স্পষ্ট। রাজ্যে তো বটেই, উত্তরবঙ্গেও আগামী বিধানসভা ভোটে গত লোকসভা নির্বাচনের হিসেব মিলবে না বলেও সমীক্ষা জানিয়ে দিচ্ছে। সোমবার শিলিগু়ড়িতে সেটাই তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে তা দার্জিলিং জেলার সমতলের নেতাদের সামনে তুলে ধরলেন তৃণমূলের প্রদেশ যুব সভাপতি তথা ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর তথা পিকে।

দলের প্রধান যুব নেতার আত্মবিশ্বাসী মনোভাব দেখে তা সংক্রমিত হয়েছে উত্তরের তৃণমূল নেতাদের মধ্যেও। রাতারাতি যেন বডি ল্যাঙ্গুয়েজ পাল্টে গিয়েছে তৃণমূলের দার্জিলিং জেলার নেতাদেরও। তাই বৈঠকের পরে অনেকেই একান্তে জানিয়ে দিয়েছেন, লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে বিজেপি যে হাওয়া কাজে লাগিয়েছিল তা এখন তলানিতে। সেই হাওয়া ঘুরছে বলেই গোটা দেশের সঙ্গে উত্তরবঙ্গেও কৃষি বিল, নাগরিকত্ব আইন ও বেকারত্বের প্রশ্নে বিজেপি ক্রমশই ব্যাকফুটে তা সেই দলের নেতারাও অনেকেই বুঝছেন। একাধিক বেসরকারি সংস্থা ও তৃণমূলের নিজস্ব সমীক্ষাতেও এটা বোঝা যাচ্ছে যে, রাজ্যের শাসক দলের নানা উন্নয়ন মূলক কর্মসূচি ও নাগরিক পরিষেবা (স্বাস্থ্যসাথী সহ দুয়ারে সরকার কর্মসূচি) মানুষের মন কাড়ছে। তাই দলের বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন, লাগাতার মানুষের দুয়ারে, পাড়ায়-পাড়ায় পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ায় তৃণমূলের সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাবও বাড়ছে। সেটাকে কাজে লাগিয়ে আমজনতার সেই সদর্খক মনোভাবকে আরও জোরালো করার নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক।

এদিন বিকেল থেকে ম্যারথন বৈঠক করেছেন অভিষেক-পিকে জুটি। সন্ধ্যায় উত্তরকন্যায় কন্যাশ্রী চত্বরে দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য-সদস্যাদের সঙ্গে বৈঠক করেন অভিষেক। তার পরে দলের বিধানসভা ভিত্তিক কমিটির সদস্য-সদস্যাদের নিয়েও বৈঠকে বসেন তিনি। সব বৈঠকেই অভিষেক যে ভাবে রাজ্য সরকারের নানা উন্নয়ন মূলক কর্মকাণ্ডের ফলে রাজ্যবাসীর একটা বড় অংশের মধ্যে যে তৃণমূলকে ঘিরে আশা-আকাঙ্খা বাড়ছে তা বুঝিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরাও নিজেদের এলাকার নানা তথ্য-পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানিয়ে দিয়েছেন, সমীক্ষায় তাঁরাও দেখেছেন লোকসভা ভোটের সেই বিজেপি হাওয়া ঘুরছে।

আরও পড়ুন- এতটুকুও বিরাম নেই, শিলিগুড়ি পৌঁছে ম্যারাথন বৈঠক অভিষেকের

তা হলে কি গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কিংবা দলের একাংশের সম্পর্কে জনমানসে যে নানা প্রশ্ন ও অভিযোগ রয়েছে তা নিয়ে অভিষেক কিছু বলেননি! সূত্র অনুযায়ী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দার্জিলিং জেলার নেতাদের নেতিবাচক বিষয়গুলিকে পুরোপুরি বর্জন করে আত্মবিশ্বাসী হয়ে একযোগে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে বলেছেন। দলের খবর অনুযায়ী অভিষেক পর্য়টন মন্ত্রী গৌতম দেব, দার্জিলিং জেলা সমতলের সভাপতি রঞ্জন সরকার, নান্টু পাল, কাজল ঘোষ ও মহিলা সেলেরে নেত্রীদের বলেছেন, নেতিবাচক চিন্তাভাবনা ও কাজ থেকে সকলকেই বিরত থাকতে হবে। আগামী বিধানসভা ভোটকে পাখির চোখ করে একযোগে দলের সকলকে নিয়ে মনসংযোগ করে ঝাঁপিযে পড়তে হবে।

তৃমমূলের অন্দরের খবর, পাঁচদিনের সফরের প্রথম রাতেই উত্তরবঙ্গের নেতা-কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করে দিয়েছেন অভিষেক-পিকে। সেই খবর পৌঁছে গিয়েছে উত্তরবঙ্গের সব জেলাতেই। তাই গত লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে সব আসন হারানো তৃণমূলের যে নেতারা কিছুটা থমকে গিয়েছিলেন, তাঁরাও অভিষেক-পিকের সঙ্গে দেখা করতে উদগ্রীব হয়ে উঠেছেন।

বস্তুত, অভিষেক যে হাওয়া ঘোরার কথা ভুল কিছু বলেননি তা গত দুমাসে দার্জিলিং জেলা ও তরাই ও ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকার পরিস্থিতি থেকেই স্পষ্ট। বিমল গুরুং তৃণমূলকে সমর্থন করে ফেরার থেকে দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্ত এখনও পাহাড়ে কোনও মিটিংই করতে পারেননি। ডুয়ার্সে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও। প্রায় প্রতিদিনই বিজেপির বিরুদ্ধে বঞ্চনা ও প্রতারণার অভিযোগ তুলে নেপালি ভাষী ও রাজবংশী অধ্যুষিত এলাকার বহু নেতা বিবৃতি দিচ্ছেন। তাতেই বিজেপি নেতারা প্রমাদ গুনছেন। উপরন্তু, তৃণমূল জমানায় উত্তরবঙ্গে সব জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ হয়েছে। সর্বোপরি দুয়ারে সরকার ও পাড়ায়-পাড়ায় সমাধানের কর্মসূচি গিরে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে তাতে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে দলের নেতা-কর্মীদেরও।

লম্বা সফরের প্রথম দিনে সেই আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে ভোটে জেতার খিদেটা যেন দ্বিগুণ করে দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন- কেন্দ্রের কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্প বাংলায় চালু করতে আপত্তি নেই, জানালেন মমতা

Advt

Previous articleরাজ্যে তেল উত্তোলনের জন্য কেন্দ্রকে বিনামূল্যে জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত মমতার
Next articleমুকুল ঘনিষ্ঠ বিজেপির যুবনেতা কলকাতা জোন কমিটিতে, তাতেই নাকি গোঁসা বৈশাখীর!