না-ফেরার দেশে ৭ বছর কাটালেন বিশ্ববন্দিতা সুচিত্রা

১৭ জানুয়ারি ২০১৪৷

পার্থিব জগতকে ওইদিনেই ৮৩ বছর বয়সে চিরবিদায় জানিয়েছিলেন সুচিত্রা সেন(Suchitra Sen) ৷ আজ সপ্তম প্রয়াণ দিবস।

সুচিত্রা সেনের জন্ম ওপার বাংলার (Bangladesh) পাবনায়। ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল সেখানেই জন্ম গ্রহণ করেন রমা দাশগুপ্ত। রমা দাশগুপ্তই সুচিত্রা সেনের আসল নাম। তাঁর শৈশব কেটেছে পাবনাতেই। বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত ছিলেন স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। বাবা-মায়ের পঞ্চম সন্তান ছিলেন রমা। ১৯৪৭ সালে কলকাতার বিশিষ্ট বাঙালি শিল্পপতি আদিনাথ সেনের ছেলে দীবানাথ সেনের সঙ্গে বিয়ে হয় সুচিত্রার। তাঁদের একমাত্র সন্তান মুনমুন সেন।

সুচিত্রা প্রথম চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন ১৯৫২ সালে। তাঁর প্রথম ছবি ‘শেষ কোথায়’। তবে ছবিটি মুক্তি পায়নি। এরপর ১৯৫৩ সালে মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে অভিনয় করেন মহানায়িকা। এরপর চলচ্চিত্র জগতে এই জুটি সাড়া ফেলে দেন। সুচিত্রা সেন বাংলা ও হিন্দি ছবিতেই অভিনয় করেন। তাঁর অভিনীত প্রথম হিন্দি ছবি দেবদাস (১৯৫৫)। সুচিত্রা সেন ১৯৭৮ সালে ‘প্রণয় পাশা’ ছবিটি করার পর লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান। এরপর থেকে তিনি আর কখনই জনসমক্ষে আসেননি। মাঝে একবার ভোটার পরিচয়পত্রে নাম অন্তর্ভুক্ত করতে ছবি তুলতে ভোটকেন্দ্রে যান।

এরপর সুচিত্রা সেন গোপনে কলকাতা বইমেলায় গিয়েছিলেন। বলিউড(Bollywood) -টালিউডের (Tollywood) বহু পরিচালক সুচিত্রা সেনকে নিয়ে ছবি করতে চাইলেও তিনি রাজি হননি। এমনকী দেশ-বিদেশের কোনও পরিচালক,অভিনেতা বা অভিনেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্ও করেননি তিনি। এরমধ্যে তিনি তাঁর বাড়িতে কেবল কথা বলেছেন তাঁর একমাত্র মেয়ে মুনমুন সেন এবং দুই নাতনি রিয়া ও রাইমার সঙ্গে। অবশেষে টানা ২৫ দিন কঠিন লড়াই শেষ করে ১৭ জানুয়ারি ২০১৪ সালে সুচিত্রা সেন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

১৯৬৩ সালে সুচিত্রা সেন মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে ‘সাত পাকে বাঁধা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পদ্মশ্রী পান। ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বঙ্গবিভূষণ সম্মাননা দেওয়া হয় তাঁকে। ২০০৫ সালে সুচিত্রা সেনকে ভারতের চলচ্চিত্র জগতের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘দাদা সাহেব ফালকে’ পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাব করা হলে সুচিত্রা সেন দিল্লিতে গিয়ে ওই সম্মান গ্রহণ করতে আপত্তি জানান।

যে ছবিগুলিতে সুচিত্রা সেন অভিনয় করেছেন তার মধ্যে, প্রথম ছবি ‘শেষ কোথায়’ ১৯৫২ সালে(মুক্তি পায়নি)। ১৯৫৩ সালে ‘সাত নম্বর কয়েদি’। ১৯৫৩ সালে মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে তিনি প্রথম ছবি করেন ‘সাড়ে চুয়াত্তর’। সুচিত্রা সেনের অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে : অগ্নি পরীক্ষা (১৯৫৪), গৃহ প্রবেশ (১৯৫৪), ঢুলি (১৯৫৪), মরণের পরে (১৯৫৪), দেবদাস (১৯৫৫-হিন্দি), শাপমোচন (১৯৫৫), সবার উপরে (১৯৫৫), মেজ বউ (১৯৫৫), ভালোবাসা (১৯৫৫), সাগরিকা (১৯৫৬), ত্রিজামা (১৯৫৬), শিল্পী (১৯৫৬), একটি রাত (১৯৫৬), হারানো সুর (১৯৫৭), পথে হল দেরি (১৯৫৭),জীবন তৃষ্ণা (১৯৫৭), চন্দ্রনাথ (১৯৫৭), মুশাফির (১৯৫৭-হিন্দি), রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত (১৯৫৮), ইন্দ্রানী (১৯৫৮), দ্বীপ জ্বেলে যাই (১৯৫৮), চাওয়া পাওয়া (১৯৫৯), হসপিটাল (১৯৬০), বোম্বাই কা বাবু (১৯৬০-হিন্দি), সপ্তপদী (১৯৬১), সাত পাকে বাঁধা (১৯৬৩), উত্তর ফাল্গুনী (১৯৬৩), মমতা (১৯৬৬), গৃহদাহ (১৯৬৭), কমললতা (১৯৬৯), মেঘ কালো (১৯৭০), ফরিয়াদ (১৯৭১), আলো আমার আলো (১৯৭২), হার মানা হার (১৯৭২), দেবী চৌধুরাণী (১৯৭৪), শ্রাবণ সন্ধ্যা (১৯৭৪), প্রিয় বান্ধবী (১৯৭৫), আঁধি (১৯৭৫-হিন্দি), দত্তা (১৯৭৬) এবং সর্বশেষ প্রণয়পাশা (১৯৭৮)। ১৯৫২ থেকে ১৯৭৮ এই ২৬ বছরে সুচিত্রা সেন ৬২টি ছবিতে অভিনয় করেন।

আরও পড়ুন-রেলপথে জুড়ল ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’, গুজরাটে ৮ টি ট্রেন উদ্বোধন নরেন্দ্র মোদির

Advt

Previous articleমধ্যপ্রদেশে দফায় দফায় গণধর্ষণ ও অত্যাচারের শিকার কিশোরী
Next articleমাত্র ২২ দিন! মোহভঙ্গ হয়ে বিজেপি থেকে তৃণমূলে ফিরলেন সিরাজ খান