দলের শীর্ষে ভাইকে বসিয়ে “পরিবারতন্ত্র” উস্কে দিলেন “মিম বন্ধু” আব্বাস সিদ্দিকি

লক্ষ্য একুশের ভোট। তাই ২১-এ নতুন দল ঘোষণা করলেন ফুরফুরে শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি (Abbasuddin Siddiqui)। তাঁর নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ”ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট” (Indian Secular Front)। আব্বাসের নতুন দলের চেয়ারম্যান তাঁরই ভাই নওশাদ সিদ্দিকি (Naoswad Sidiqui)। সভাপতি সিমোন সোরেন (Simon Soren)। তাদের পতাকায় রয়েছে দুটি রঙ। নীল এবং সবুজ। তবে দলের প্রতীক এখনও সামনে আনেননি তিনি। মূলত, রাজ্যের মুসলিম অধ্যুষিত জেলাগুলিতেই প্রার্থী দেবেন তাঁরা। আব্বাসের পাখির চোখ দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলির, নদিয়ার একাংশ।

আগামী ২৬ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পথ চলা শুরু হবে ‘ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টে’। কর্মসূচি? আগামীদিনে ব্রিগেড থেকে ঘোষণা করা হবে। ভোটে লড়ার জন্য ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনকে প্রতীক দেওয়ার আবেদন করেছে আব্বাসের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি এই রাজনৈতিক দলটি।

কিন্তু বিতর্ক সঙ্গে করেই আব্বাস সিদ্দিকির দলের জন্ম হলো। এ রাজ্যে যখন “পরিবার তন্ত্র” একটা বড় ইস্যু, ঠিক তখনই আব্বাসের দলের জন্ম। এবং সেটাও পরিবার তন্ত্রের বাইরে নয়। যুব সমাজ, বিশেষ করে সংখ্যালঘু সমাজের উন্নতির স্বপ্ন নিয়ে আব্বাস নতুন দল গঠন করলেও, সেই দলের রাশ রাখলেন নিজের হাতে। বলা ভালো, নিজের পরিবারের হাতে। দলের শীর্ষে বসালেন নিচের ভাই নওশাদ সিদ্দিকে। আর ঘটনার পরই, আব্বাস ঘনিষ্ঠদের একাংশ ভেঙে পড়েছে। তাঁদের বক্তব্য, দলের সুপ্রিম সিটে বসার জন্য আরও অনেক যোগ্য মানুষ থাকলেও, যেন পীরজাদা নিজের ভাইকেই সেই আসনে বসলেন? তাহলে কী এখানেও সেই পরিবারতন্ত্র?

বিতর্কের মধ্যেই এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে আব্বাস সিদ্দিকি বলেন, “আমাদের পরিবারে অনেক পীর সাহেব আছেন। তাঁদের আর্শীবাদ রয়েছে। পার্টি তৈরি করেছি। আমাদের লক্ষ্য, অসহায় মানুষের কণ্ঠ হওয়া। মানুষ আমাদের শুনছেন।” এই ফ্রন্টে কোন কোন দল যোগ দিচ্ছে? আব্বাসের জবাব, ”যে দলই আসবে, তাকে নিজের মনে করে পথ চলব।” ফ্রন্টে মিমের ভূমিকা কী হবে? মিম তো বিজেপি-কে সুবিধা করে দিচ্ছে? এবার পাল্টা প্রশ্ন এল, ”কে বলছে, মিম বিজেপির দল?”

এছাড়াও আসন্ন বিধানসভা ভোটে জোট গড়ার লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন তিনি। কংগ্রেসের সঙ্গেও আব্বাসের আলোচনা অনেকটা এগিয়েছে বলে জানা গিয়েছে সূত্র মারফত। সম্প্রতি বাংলায় এসেছিলেন মিম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। আব্বাসের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি জানিয়েছিলেন, রাজ্যে আব্বাসের দেখানো পথেই ভোট প্রস্তুতি নেবে তাঁর দল। তার পরেই নতুন দল ঘোষণার কথা জানিয়েছিলেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা।

২০১৯ সাল থেকে রাজ্যে রাজনৈতিক ভাবে সক্রিয় হয়েছেন আব্বাস। গঠন করেন ফুরফুরা শরীফ আহালে সুন্নাতুল জন্নত নামে একটি সংগঠন। ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে রাজনৈতিক বার্তা দিয়েছেন তিনি। প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল, তৃণমূলের সমর্থনে নির্বাচনে লড়াই করবেন তিনি। তাঁকে দলে টানতে চেয়ে পীরজাদার দ্বারস্থ হয়েছিলেন বাম ও কংগ্রেস। কিন্তু তাতেও সাড়া মেলেনি। শেষে ওয়েইসির সমর্থনে নির্বাচনে লড়াইয়ের কথা জানান পীরজাদা। এরপরই আজ দল গঠনের ঘোষণা করলেন তিনি।

উল্লেখ্য, ফুরফুরা শরীফের পীরজাদার বাঙালি মুসলিম ও সংখ্যালঘু যুব সম্প্রদায়ের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে। মগরাহাট. ক্যানিং, আমতলা, ডায়মন্ডহারবার-সহ হাওড়া-হুগলির মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় বিভিন্ন সময় ধর্মীয় সভা, জলসা করেন আব্বাস সিদ্দিকি। গত কয়েকমাস যাবৎ সেই সমস্ত অনুষ্ঠান থেকে রাজনৈতিক বার্তা দিয়েছেন তিনি। এবার নিজের দল গড়লেন তিনি।

 

নতুন দল গড়ে আব্বাসের দাবি, “অনেকেই আছে যাঁরা নিজেদের নিরপেক্ষ বলেন। কিন্তু আদপে কাজে তা প্রমাণিত হয় না। শুধু মুসলিম নয়, হিন্দু সমাজেরও বহু পিছিয়ে পড়া মানুষ আছেন।” তাঁদের কাছে উন্নয়ন পৌঁছে দিতেই এবার বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নেবেন তিনি।

আরও পড়ুন- শুভেন্দু-রুদ্রনীল রুদ্ধদ্বার বৈঠক কোন ইঙ্গিত? জল্পনা তুঙ্গে

Advt

Previous articleমুম্বই সিটির বিরুদ্ধে তিন পয়েন্ট চাইছেন রেনেডি
Next articleশপথ নিয়েই ট্রাম্পের একাধিক নীতি বদলের পথে বাইডেন