ব্রডকাস্ট অডিয়েন্স রিসার্চ কাউন্সিলের (BRC) প্রাক্তন প্রধান কর্মকর্তা পার্থ দাশগুপ্ত মুম্বই পুলিশের কাছে একটি হাতে লেখা বিবৃতিপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁর দাবি, তিনি দুটি পৃথক ছুটির জন্য রিপাবলিক টিভির প্রধান সম্পাদক অর্ণব গোস্বামীর কাছ থেকে ১২,০০০ মার্কিন ডলার এবং তিন বছরে মোট ৪০ লাখ টাকা পেয়েছেন। গত ১১ জানুয়ারি মুম্বই পুলিশের দাখিল করা ৩,৬০০ পাতার চার্জশিটে বিএআরসি ফরেনসিক অডিট রিপোর্ট, পার্থ দাশগুপ্ত ও অর্ণব গোস্বামীর মধ্যে হওয়া হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট এবং কাউন্সিলের প্রাক্তন কর্মচারী ও কেবল অপারেটর-সহ ৫৯ জনের বিবৃতি রয়েছে।
অডিট রিপোর্টে রিপাবলিক টিভি, টাইমস নাও এবং আজ তক-সহ বেশ কয়েকটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বিআরসির শীর্ষ কর্মকর্তাদের চ্যানেলের জন্য “প্রি-ফিক্সিং” এর উদাহরণ রয়েছে। চার্জশিট দাখিল করা হয় দাশগুপ্ত, বার্কের প্রাক্তন প্রধান রোমিল রামগড়িয়া এবং রিপাবলিক মিডিয়া নেটওয়ার্কের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিকাশ খানচন্দানির বিরুদ্ধে। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে ১২ জনের বিরুদ্ধে প্রথম চার্জশিট দাখিল করা হয়। দ্বিতীয় চার্জশিট দাখিল হয়, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০ তারিখে। দ্বিতীয় চার্জশিটে দুই স্বাক্ষীর উপস্থিতিতে ক্রাইম ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের অফিসে দাশগুপ্তের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়। দাশগুপ্তের বিবৃতিতে লেখা আছে, “আমি ২০০৪ সাল থেকে অর্ণব গোস্বামীকে চিনি। আমরা টাইমস নাওতে একসঙ্গে কাজ করতাম। আমি ২০১৩ সালে বিএআরসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দান করি। অর্ণব গোস্বামী ২০১৭ সালে রিপাবলিক টিভি চালু করেন। এমনকী রিপাবলিক টিভি শুরুর আগে তিনি আমার সাথে জমজমাট একটি উদ্বোধনী (launch) অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনায় বসতেন। বলতেন আমি যেন তাঁকে তার চ্যানেলে ভাল রেটিং পেতে সাহায্য করি। গোস্বামী খুব ভাল করেই জানতেন যে টিআরপি সিস্টেম কীভাবে কাজ করে তা আমি খুব ভাল জানি। ভবিষ্যতে তিনি আমাকে সাহায্য করার ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন।”
পার্থবাবু আরো বলেছেন, “আমি আমার পুরো টিম নিয়ে এমনভাবে কাজ করেছি যাতে রিপাবলিক টিভি এক নম্বর টিআরপি রেটিং পায়। ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত যাতে এই এক নম্বর রেটিং থাকে তা নিশ্চিত করতে অর্ণব গোস্বামী নিজেই লোয়ার প্যারেলের সেন্ট রেজিস হোটেলে আমার সাথে দেখা করেন। ওখানেই ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডে সপরিবারে ছুটি কাটানোর জন্য আমাকে ৬ হাজার মার্কিন ডলার নগদ দিয়েছিলেন। এছাড়াও ২০১৯ সালে অর্ণব গোস্বামী ব্যক্তিগতভাবে সেন্ট রেজিসে আমার সাথে দেখা করেন এবং সুইডেন এবং ডেনমার্কে পারিবারিক সফরের জন্য আমাকে আরও ৬,০০০ মার্কিন ডলার দিয়েছিলেন। এছাড়াও ২০১৭ সালে গোস্বামী আইটিসি প্যারেল হোটেলে আমার সঙ্গে দেখা করেন। আমাকে ২০ লাখ টাকা নগদ দিয়েছিলেন.। এরপরেও ২০১৮ ও ২০১৯ সালে. গোস্বামী আইটিসি হোটেল প্যারেল-এ আমার সাথে দেখা করে প্রতিবার ১০ লাখ করে টাকা দেন.”
চার্জশিটে ২৪ জুলাই, ২০২০ তারিখে বার্কের অডিট রিপোর্টও রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে প্রমাণ “কয়েকটি চ্যানেলে দেখানোতে পক্ষপাতিত্বের ইঙ্গিত দিয়েছে” এবং “কিছু ক্ষেত্রে আমরা সন্দেহ করি যে রেটিং পূর্ব সিদ্ধান্ত করা হয়েছে”।