আন্দোলনে নামলেন টলিপাড়ার শিল্পীরা (tollygunj studio artist)। বিজেপির বিরুদ্ধে সোমবার অর্থাৎ আজ দুপুর তিনটেয় ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেলে পথে নামলেন টলিউডৈর শিল্পীরা সম্প্রতি অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ (sayoni ghosh), দেবলীনা দত্ত (devleena dutt) এবং সুরকার-পরিচালক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়কে বারবার হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। তাঁরা স্বাধীন মত প্রকাশ করেছিলেন। নিজেদের মতো করে কথা বলায় বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন। আর মহিলা হলে তো কথাই নেই। ‘গণধর্ষণ’-এর হুমকি আসতে এক মুহূর্ত সময় লাগছে না। অনলাইনে ক্রমাগত ধর্ষণ ও খুনের হুমকি পেতে পেতে বিধ্বস্ত শিল্পীদের কিছু অংশ। বাংলার মাটিতে সেই হুমকির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পদক্ষেপ নিতে চলেছেন বিশিষ্টজনেরা। এদিন এই প্রতিবাদ সভায় হাজির হয়েছীলেন টলিপড়ার বহু নামী-দামি শিল্পী। অভিনেতা তথাগত রায় বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীকে অপমান করা মানে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে অপমান করা। বাংলার প্রতিটি মানুষকে অপমান করা। এর থেকে লজ্জার কিছু হতে পারে না। প্রমাণ করে এরাই হুমকির রাজনীতি করতে পারে। এরাই গলা কেটে দেওয়ার রাজনীতি করতে পারে। এরা অভিনেতাদের বলে পাউডার মেখে বাঁদর নাচ করছে। এরাই দলটাকে চালাচ্ছে। এদের আটকানো আমাদের নৈতিক কর্তব্য।’ অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক বলেন, ‘আপনি তো শ্রাদ্ধবাড়িতে বিয়েবাড়ির কাজ করতে পারবেন না, আবার বিয়েবাড়িতে শ্রাদ্ধবাড়ির কাজ করতে পারবেন না। সেটাই মাথায় রাখতে হবে কোনটা পলিটিকাল প্ল্যাটফর্ম কোনটা সরকারি প্ল্যাটফর্ম। এটা ঠিক হয়নি। ‘ অভিনেতা কৌশিক সেন বলেন, ‘এটা কোনো পলিটিক্যাল পার্টির ব্যানারে হচ্ছে না বলেই আমি এসেছি। একজন শিল্পী হিসাবে শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়েছি।’ সাংসদ-অভিনেত্রী নুসরত বলেন, ‘কে কাকে ধর্ষণ করতে পারে দেখা যাক। ধর্ষণের হুমকি দেওয়া এত সহজ?’
সভার উদ্যোক্তা পরিচালক রাজ চক্রবর্তী (raj chakroborty)এখনই এই বিষয়ে কিছু বলবেন না বলে জানালেন। সমস্ত উত্তর দুপুর তিনটের জন্য জমিয়ে রেখেছেন তিনি। অভিনেত্রী সায়নী ঘোষও জানালেন, তিনি ঠিক দুপুর ৩টে নাগাদ উপস্থিত থাকবেন এই প্রতিবাদ সভায়। শুধু শিল্পীরাই নয়, সাধারণ মানুষও এই প্রতিবাদে সামিল হবেন। অন্ধকারকে ঘুচিয়ে বাংলার মাটিতে এক টুকরো আলো আনার জন্য টলিপাড়ার এই প্রয়াসএই প্রতিবাদ সভার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সভার নাম দেওয়া হয়েছে, ‘এ কোন সকাল, রাতের চেয়েও অন্ধকার।’ পোস্টারেই তুলে ধরা হয়েছে সভার বক্তব্য। এক মহিলার ছবি আঁকা। যার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে। ছবির নীচে একটি পরিচ্ছেদে প্রকাশিত হয়েছে প্রতিবাদীদের অভিব্যক্তি। তাতে লেখা আছে, ‘এই মাটি নারীর সম্মান রক্ষার জন্যে সবার আগে সমস্ত মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, আজও হবে না। কোনও নারীকে অপমান করা, তাকে ট্রোল করা, তার সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্য করা বাংলার সংস্কৃতি নয়।’
। প্রতিবাদ সভা নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত বলেন, ‘‘তরুণজ্যোতি তেওয়ারি আজও আমায় সোশ্যাল মিডিয়ায় হুমকি দিচ্ছে। আমি ভয় না পেলেও আমার বৃদ্ধা মা আতঙ্কিত। ক্রমাগত একটি মানসিক অত্যাচার চলছে আমাদের উপর। সে রকম একটি পরিস্থিতিতে এ রকম একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়েছে দেখে আমি ভীষণ আনন্দিত। আমাকে কোনও উদ্যোগই নিতে হয়নি। পরিচালক রাজ চক্রবর্তী থেকে শুরু করে বহু বিশিষ্ট মানুষ উপস্থিত হচ্ছেন আগামিকাল। সায়নীও যোগ দিচ্ছেন এই প্রতিবাদে।’’
রাজ চক্রবর্তী, মহিলা কমিশনের অধ্যক্ষা লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, কৌশিক সেন, ঋদ্ধি সেনের মতো মানুষরাও এই দিন উপস্থিত থাকছেন, মানুষের কণ্ঠরোধের বিরোধিতায়। এমনকি বিজেপির সদস্য অনিন্দ্য পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় দেবলীনার কাছে তাঁর মত প্রকাশ করে জানিয়েছেন, ‘বিজেপির কর্মী হয়েও আমি এটা বলতে বাধ্য হচ্ছি, দেবলীনার সঙ্গে একটানা যা ঘটে চলেছে, সেটা অন্যায়।’ লীনা গঙ্গোপাধ্যায় যেমন জানালেন, ‘‘এই বাংলায় বড় হইনি আমরা। আমি কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করি না। কিন্তু এ বার আর চুপ করে থাকতে পারছি না। যদি কোনও অভিনেত্রীর মতামত পছন্দ না হয়, তা হলে দর্শকই তাঁকে বয়কট করে দেবেন। কিন্তু সমগ্র দর্শকমহলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার দায়িত্ব দেওয়া হয়নি এক অংশের মানুষকে। এ ভাবে মহিলাদের আক্রমণ করাটা ঘোরতর অন্যায়।’’ কিছু নগরিকের কাণ্ড দেখে সে রকমটাই মনে করছেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। এটার প্রতিবাদ করা উচিত বলে তিনিও পথে নামবেন আজ।
।