বিশ্বভারতীর উপাচার্যকে নিয়ে সঙ্ঘে ক্ষোভ, ‘বিলম্বিত বোধোদয়’, কটাক্ষ আশ্রমিকদের

অনেক ‘আশা’ নিয়ে তাঁকে পাঠানো হয়েছিলো রবি-আলয়ে৷ বিশ্বকবির আঙ্গিনা থেকেই গেরুয়া জয়ধ্বনি উঠবে, বুদ্ধিজীবীরা দলে দলে পদ্ম-পতাকার তলায় আসবেন৷ এমনই ছক ছিলো সম্ভবত৷ সেই লক্ষ্যেই বিশ্বভারতী’র উপাচার্য (vice chancellor Of Viswa Bharati) করে পাঠানো হয়েছিলো একদা বামপন্থী বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে (Bidyut Chakraborty) বঙ্গ এবং জাতীয় বিজেপির স্বঘোষিত বুদ্ধিজীবীরা তখন দু’হাতে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন বিদ্যুৎবাবুকে৷

এখন ‘নিদ্রা গিয়াছে টুটে’ ! ছক উল্টে গিয়েছে৷ ফাটা বাঁশে আটকে গিয়েছে বিজেপি তথা নিয়োগকর্তারা৷ আসল বাঘ আর বাঘছাল পরিহিত বেড়ালের মধ্যে তফাতটা স্পষ্ট হচ্ছে৷ পরের পর বিতর্কে জড়িয়েছেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী৷ আর তাঁকে ঘিরেই এখন অসন্তোষ দেখা গিয়েছে বিজেপি তথা সঙ্ঘের অন্দরে।

বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর ধারাবাহিক কাজকর্মে যারপরনাই বিরক্ত (Dissatisfaction) আরএসএস ও বিজেপি৷ এই অংশের তরফে দিনকয়েক আগে অভিযোগ জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়ালের কাছে। বলা হয়েছে, বাংলার ভোট আসছে, এই অবস্থায় বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর কাজ ও কথায় রাজ্যের শিক্ষিত অংশ বিজেপির প্রতি রুষ্ট হচ্ছেন৷ এখনই হয় ওনাকে থামানো হোক অথবা দ্রুত বিশ্বভারতীর উপাচার্যের পদ থেকে তাঁকে সরানো হোক৷

দিনকয়েক আগে বিশ্বভারতীর একটি অনুষ্ঠানে উপাচার্যের উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও চিরকালীন প্রথা অনুসারে আশ্রমসঙ্গীত গাওয়া হয়নি। এর আগে, বিশ্বভারতীর জমি বিতর্কে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী খোদ অমর্ত্য সেনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছেন৷ এই ঘটনাকে বাঙালি মধ্যবিত্ত তথা বুদ্ধিজীবীরা বস্তুত ঘৃণার নজরেই দেখেছে৷ ।

পর পর এমন ঘটনা ঘটানোর জেরে ইদানিং উপাচার্যের সঙ্গে সঙ্ঘ- পরিবারের ‘অবৈধ-প্রেম’ চটকে গিয়েছে৷ এতটাই চটকেছে যে, আরএসএসের ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করা বিজেপি নেতা রন্তিদেব সেনগুপ্ত বুধবার ফেসবুকে লিখেছেন, “বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সমস্যা হল, উনি বিশ্বভারতীকে আর পাঁচটা ইট-কাঠে গড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশি কিছু ভাবতে পারছেন না। রবীন্দ্রভাবনা অনুধাবন করা তো অনেক দূরের বিষয়।” বিশ্বভারতীর এক অনুষ্ঠানে উপাচার্যের উপস্থিতিতেই প্রথামাফিক আশ্রমসঙ্গীত গাওয়া হয়নি। সেই ঘটনা উল্লেখ করেই রন্তিদেববাবুর এই পোস্ট।

বিশ্বভারতীর কোর্ট কমিটির সদস্য তথা রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তও বিরক্ত বিদ্যুতের উপর। একাধিক বার তিনি বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে সতর্কও করেছেন৷ তবে এ বিষয় স্বপনবাবু বলেছেন, “আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট সদস্য। বিশ্বভারতীর অন্দরের কাজকর্মে কখনও মাথা ঘামাই না।”

 

তবে ‘অকুতোভয়’ বিদ্যুৎ চক্রবর্তী৷ এসব বিষয়কে একদমই পাত্তা না দিয়ে বলেছেন, “বেশির ভাগ রাবীন্দ্রিক ও আশ্রমিক আমার কাছে স্বার্থান্বেষী। স্বার্থের জন্য তাঁরা সব কিছু করতে রাজি। সেখানে রবীন্দ্রনাথ তাদের কাছে একটি সোপান৷এ ধরনের কথার জন্য আমাকে অনেকে অপছন্দ করেন। কিন্তু এই কথাগুলো এখনই বলা দরকার।” বুধবার শান্তিনিকেতনের রামকিঙ্কর মঞ্চে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী এ কথা বলেছেন৷

 

বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর কাজের ধরন নিয়ে বঙ্গ-বিজেপির অভিমত, ভোটের মুখে বিজেপিকে বাঙালি- বিরোধী হিসেবে দাগিয়ে দেওয়ার ছক কষেছে বিরোধীরা৷ সেই কাজেই সুবিধা করে দিচ্ছেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। শান্তিনিকেতনের আবেগ এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে এই উপাচার্যের ধ্যানধারনার অভাব স্পষ্ট হচ্ছে৷ আর তার দায় পড়ছে বিজেপির ঘাড়ে৷ উনি স্রেফ ব্যবহার করছেন বিজেপিকে৷ বাংলার মানুষ বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে বিজেপি-র লোক ভেবে বিজেপিকেই ভুল বুঝছেন।

 

ওদিকে, শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক তথা রবীন্দ্রঅনুরাগীদের বক্তব্য, “বিজেপির বিলম্বিত বোধোদয় হচ্ছে৷ এই উপাচার্যকে পাঠানোই হয়েছে, শান্তিনিকেতনের আবেগ ধ্বংস করে গেরুয়া রঙে রাঙ্গিয়ে দিতে৷ বিজেপি তখন এটা বুঝলে আজ ঢাকঢোল পিটিয়ে অনুশোচনা করার নাটক করতে হতোনা৷ ”

Advt

Previous articleবিশ্বভারতী ক্যাম্পাসের মধ্যে কবর! বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে চাঞ্চল্য
Next articleস্বামীকে খুন করে থানায় হাজির বধূ! সত্যতা যাচাই করছে পুলিশ