অসন্তোষ,দুর্নীতি! টিকিট বিলির দায়িত্ব রাজ্যের হাত থেকে কাড়ছেন অমিত শাহ

দলের অন্দরে তীব্র অসন্তোষ এবং দুর্নীতির আঁচ পেয়ে একুশের বিধানসভা ভোটে টিকিট (Nomination) বিলির দায়িত্ব রাজ্যের হাত থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে কেন্দ্রীয় বিজেপি।

সূত্রের খবর, একই কারনে এবার বঙ্গ-বিজেপির (WB BJP) ‘ইলেকশন কমিটি’ও করা হবে না৷

‘দলবদলু’ বা নব্য- বিজেপিদের প্রার্থী করা নিয়ে বঙ্গ-বিজেপির অভ্যন্তরে তুমুল কোন্দল এবং চরম আর্থিক দুর্নীতি ঠেকাতে টিকিট বিলির দায়িত্ব নিজেই নিচ্ছেন অমিত শাহ৷ এই বিষয়ে রাজ্য কমিটির পদাধিকারীদের হাতে কোনও ক্ষমতাই দেওয়া হচ্ছে না৷ এমনকী বাড়তি কোনও কমিটিও হচ্ছে না৷

প্রার্থী করার টোপ দিয়ে অন্যদলের ‘দমবন্ধ’ হওয়া লোকজনকে গেরুয়া ছাতার তলায় আনা হয়েছে৷ কাজ এখনও চলছে৷ বিধানসভা ভোটে ‘টিকিট পাইয়ে দেব’,এই প্রতিশ্রুতি টলিউডের নানা সাইজের ‘তারকা’দেরও দেওয়া হয়েছে৷ ভোট যত এগিয়ে আসছে ওইসব দলবদলুদের নিয়ে বিপাকে বিজেপি৷ প্রার্থীপদ নিয়ে ‘দলবদলু’দের চাপ ক্রমাগত বেড়ে চলায় পরিস্থিতি কার্যত রাজ্য কমিটির হাতের বাইরেই চলে গিয়েছে৷ বঙ্গ- বিজেপি সূত্রের খবর, দলের অভ্যন্তরে পরিস্থিতি এতটাই তপ্ত যে, প্রার্থীপদ বণ্টন নিয়ে রাজ্যজুড়ে অসন্তোষের আঁচ পাওয়ায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বাংলায় ভোটের জন্য নির্বাচনী কমিটিও ঘোষণা করতে সাহস পাচ্ছে না। ভোটের অন্তত চার-পাঁচ মাস আগেই এই কমিটি কাজ শুরু করে৷ জানা গিয়েছে, এবার বিধানসভা ভোটের জন্য আলাদা কোনও কমিটিই গড়া হবে না। টিকিট বিলি থেকে প্রচার, সব দায়িত্ব খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের (Amit Shah)। দলীয় সূত্রের খবর, এই ধরনের কমিটি বা পদাধিকারীরা টিকিট বিলি করলে নির্ঘাৎ স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠবে। যা সামলানো দায় হয়ে পড়বে নেতৃত্বের। কোন্দল এড়াতেই তাই এই পদক্ষেপ। ভোটের মুখে দলের অন্দরে যাতে অসন্তোষ তৈরি না হয়, তাই টিকিট বিলি, প্রচারের ধরন ইত্যাদি সব ধরনের দায়িত্ব রাজ্যের হাত থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে কেন্দ্রীয় বিজেপি। টিকিট দেওয়ার ক্ষমতা বঙ্গ- বিজেপির নেতাদের হাতে থাকলে তারা ঢালাও নিজেদের পছন্দের লোকজনকে প্রার্থী করবেই৷ ওদিকে, বিজেপির টিকিট পাইয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা তোলার অভিযোগও উঠেছে কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। টিকিট দেওয়া নিয়ে এ ধরনের দুর্নীতির আশঙ্কাও পুরোমাত্রায় রয়েছে৷ এমনই ধারনা দিল্লি-বিজেপির৷ তাই রাজ্য নেতৃত্ব বা বিশেষ কয়েকজন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকের হাতে টিকিট দেওয়ার অধিকার আর রাখা হচ্ছেনা৷

বিজেপির শীর্ষনেতৃত্ব মনে করছে, দলবদলুদের টিকিট দেওয়ার বিষয়টি কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ভোটের মুখে ধস নামবে বঙ্গ-বিজেপিতে৷ দলের দীর্ঘদিনের নেতা- কর্মীদের বঞ্চিত করে, অন্য দল থেকে আসা লোকজনকে ঢালাও প্রার্থী করা হলে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বহু সম্ভাবনাপূর্ণ আসনেও দলের হার নিশ্চিত৷ নিজস্ব সূত্রে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জেনেছেন, দলের রাজ্য শাখার বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী দলীয় প্রার্থী করার একশো শতাংশ ‘গ্যারান্টি’ দিয়ে অন্য দলের লোকজনকে গেরুয়া শিবিরে এনেছেন৷ এদের প্রত্যেককে প্রাথী করা সম্ভব নয়৷ বহু বিধানসভা এলাকায় এমন কিছু ‘দলবদলু’- বিধায়কদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহও শুরু হয়েছে৷ এই ধরনের বিধায়কদের প্রার্থী করার টোপ দিয়ে রাজ্য বিজেপির যে নেতারা দলে এনেছেন, তারাও ‘দলবদলু’৷ এই নব্য গেরুয়াদের হাতে নির্বাচনে টিকিট বন্টনের ন্যূনতম ক্ষমতা থাকলেও, তাঁরা আদি এবং যোগ্য বিজেপি নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে অতি-নব্য দলবদলুদের নামই চূড়ান্ত করবেন৷ স্বজনপোষণ করে প্রার্থী করবেন অনুগামীদেরই।এই ঝুঁকি বিজেপির শীর্ষস্তর একদমই নিচ্ছে না৷ তাই লাগাম নিজের হাতে নিয়েছেন অমিত শাহ।

আরও পড়ুন:আগামী সপ্তাহের মধ্যেই রাজ্যে আসছে ১২৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী

Advt

Previous articleআগামী সপ্তাহের মধ্যেই রাজ্যে আসছে ১২৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী
Next articleসিকিমে ব্যাপক তুষারঝড়ের কবলে পর্যটকরা, ৪৪৭ জনকে উদ্ধার করল সেনাবাহিনী