অভিমান, ক্ষোভ বজায় রেখেই কলকাতার জন্য গেরুয়া-নাম গেলো দিল্লিতে

জটিলতা, মান-অভিমান, ক্ষোভ বজায় রেখেই কলকাতার আসনগুলির জন্য প্রার্থীর খসড়া তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে৷ কেন্দ্রপিছু তিনটি করে নাম দিল্লিতে পাঠিয়েছে বঙ্গ-বিজেপি৷

বুধ ও বৃহস্পতিবার হেস্টিংসে দলের নির্বাচনী কার্যালয়ে কলকাতার প্রার্থী বাছাই নিয়ে বৈঠকে বসেন রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতারা। তবে, বিজেপি সূত্রের খবর, কলকাতার প্রার্থী নিয়ে আলোচনা হলেও ওই বৈঠকে ডাকাই হয়নি দলের কলকাতা জোনের পর্যবেক্ষক শোভন চট্টোপাধ্যায়কে৷ শোভনের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির কলকাতা জোনের যুগ্ম-আহ্বায়ক। তাঁকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি গুরুত্বপূর্ণ ওই বৈঠকে৷ জানা গিয়েছে, রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতারা বিস্তারিত আলোচনার পর কলকাতার বিভিন্ন কেন্দ্রের জন্য প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করেছেন৷ কেন্দ্রপিছু দুটি অথবা তিনটি নাম সুপারিশ করে বিজেপির সম্ভাব্য প্রার্থী-তালিকা দিল্লিতে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে। দিল্লি থেকেই চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে৷ গেরুয়া-অন্দরের খবর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিজে উদ্যোগ নিয়ে নিজের ‘টিম’-এর মাধ্যমে তিনবার সমীক্ষা চালিয়েছেন, কোন কেন্দ্র কোন প্রার্থী সব থেকে ভালো হবে৷ কলকাতার আসনগুলি নিয়েও এই সমীক্ষা হয়েছে৷ বঙ্গ-বিজেপি যে তালিকা দিল্লিতে পাঠাচ্ছে, সেই তালিকার সঙ্গে গুরুত্ব দিয়েই মিলিয়ে দেখা হচ্ছে অমিত শাহের তালিকা৷ যে সব নাম ‘কমন’ থাকছে, সেই কেন্দ্রগুলি নিয়ে আর আলোচনা হচ্ছে না৷ বাকি আসনে প্রার্থী বাছাই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হচ্ছে তারপর সহমতে এসে ঘোষণা হচ্ছে প্রার্থী তালিকা কলকাতার ক্ষেত্রেও তেমনই হবে৷ ফলে, রাজ্য কমিটির যে যত বড় নেতাই হোন, তাঁর প্রার্থী হওয়া যেমন নিশ্চিত নয়, আবার তিনি যে কেন্দ্র থেকে লড়তে আগ্রহী, সেই কেন্দ্র পাওয়াও সমান অনিশ্চিত ৷

রাজ্য বিজেপির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গিয়েছে:

◾জাতীয় বিজেপির প্রাক্তণ সম্পাদক তথা রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি রাহুল সিনহা ফের চাইছেন জোড়াসাঁকো কেন্দ্রে প্রার্থী হতে৷ একুশের ভোটে তিনি সম্ভবত জোড়াসাঁকো আসন পাচ্ছেন না৷ ২০১৬-র নির্বাচনে রাহুল এই কেন্দ্রে লড়েছিলেন এবং হেরেছিলেন৷ ওই কেন্দ্রে বিজেপির পছন্দের তালিকায় এক নম্বরে নাম আছে কলকাতা পুরসভার প্রাক্তণ ডেপুটি মেয়র মীনাদেবী পুরোহিত-এর। তিনি কলকাতা পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর। অন্য কোনও চমক দেখানো না হলে এবার জোড়াসাঁকোয় বিজেপি প্রার্থী ওই মীনাদেবী পুরোহিত-ই৷

◾বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে স্থির হয়েছে, তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাক্তণ কেন্দ্র ভবাণীপুর থেকে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বিজেপি’র প্রার্থী হবেন৷ শোভন নিজে না’কি তাঁর কেন্দ্র বেহালা-পূর্ব থেকেই লড়তে আগ্রহী৷ কিন্তু এতে রাজি নয়৷ ওখানে তৃণমূল প্রার্থী শোভনের স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়৷ বেহালাই শুধু নয়, যে কোনও কেন্দ্রে শোভন এবং রত্না মুখোমুখি প্রার্থী হলে যে পরিমানে পারিবারিক কেচ্ছা উঠে আসবে, তাতে সামগ্রিকভাবেই ক্ষতি বিজেপির৷ অন্যান্য কেন্দ্রে তার প্রভাব পড়বে বলেই মনে করছেন রাজ্য নেতৃত্ব ৷ তাই ভোটে দাঁড়াতে হলে শোভনকে ভবাণীপুর থেকেই লড়তে হবে, বেহালা-পূর্ব নয়৷ ওদিকে শোনা যাচ্ছে, বেহালা-পূর্ব না পেলে এবার ভোটেই দাঁড়াবেন না জল-শোভন৷

◾বেহালা-পূর্বে রাজ্য বিজেপি প্রার্থী করতে চাইছে দলের দক্ষিণ কলকাতা জেলা সভাপতি শঙ্কর শিকদারকে।

◾শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রার্থী করা নিয়ে রাজ্য বিজেপি আপাতত তিন ভাগ৷ দলের একাংশ বিতর্কিত বৈশাখীকে প্রার্থী করতেই রাজি নন৷ বৈশাখী প্রার্থী হলে অহেতুক সমালোচনার মুখে পড়তে হবে বিজেপিকে৷ দ্বিতীয় অংশ চাইছেন, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বেহালা-পশ্চিম কেন্দ্রে প্রার্থী করা হোক অধ্যাপিকা বৈশাখীকে৷ এই লড়াই হলে শিক্ষামন্ত্রীর সার্বিক ব্যর্থতা নিয়ে বৈশাখীর মুখের বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য হবে৷ লড়াইও হবে জোরদার৷

ওদিকে তৃতীয় অংশের দাবি বৈশাখীকে কসবা কেন্দ্রে প্রার্থী করা হোক৷ মিল্লি কলেজের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত থাকার কারনে এই কেন্দ্র তিনি অনেকটাই পরিচিত৷

◾কসবা কেন্দ্রের জন্য বিজেপির সুপারিশ তালিকায় অবশ্য এক নম্বরে নাম আছে অভিনেত্রী তথা রাজ্য যুব মোর্চার সম্পাদক রিমঝিম মিত্র-র।

◾কাশীপুর-বেলগাছিয়া কেন্দ্রে বিজেপি নেতা রীতেশ তিওয়ারির নাম দিল্লিতে পাঠানো বঙ্গ- বিজেপির তালিকায় আছে৷

◾ টালিগঞ্জ কেন্দ্রের জন্য এক নম্বরে অভিনেত্রী অঞ্জনা বসু’র নাম রয়েছে৷ সাম্প্রতিক জোয়ারে নয়, অঞ্জনা ঝুঁকি নিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন কয়েক বছর আগেই৷ তাই বিজেপি তাঁকে ‘ভালো’ আসন দিতে চায়৷ উত্তর ২৪ পরগণার দু’টি কেন্দ্রে প্রাথমিকভাবে তাঁর নাম বিচেচনা করা হলেও, শেষপর্যন্ত টালিগঞ্জ কেন্দ্রের জন্যই অঞ্জনা বসুর নাম দিল্লি গিয়েছে৷ তবে এই কেন্দ্রে মিঠুন চক্রবর্তীর নামও সম্প্রতি ভেসে উঠেছে৷ এই জল্পনা সত্যি হলে সরতে হতে পারে অঞ্জনা বসুকে৷

◾রাসবিহারী কেন্দ্রে পদ্ম-প্রার্থী হিসাবে বিজেপির যুবমোর্চার প্রাক্তন সভাপতি তুষারকান্তি ঘোষের নাম গিয়েছে দিল্লিতে৷

◾মানিকতলা কেন্দ্রের জন্য দিল্লিতে যে নামের তালিকা গিয়েছে সেখানে প্রথম নামই রয়েছে বিজেপির উত্তর কলকাতা সভাপতি শিবাজী সিংহ রায়-এর৷ তবে এই কেন্দ্রে স্থানীয় এক চিকিৎসকের নামও বিবেচনায় আছে৷

◾বেলেঘাটা কেন্দ্রের জন্য জোরকদমে নেমেছেন বিজেপির অন্যতম এক শীর্ষ নেতা৷ ওই নেতা দরবার করছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ ডাঃ অর্চনা মজুমদারের নাম নিয়ে৷ ২০১৯-এর লোকসভা ভোটেও ওই নেতা অর্চনাদেবীকে প্রার্থী করার জন্য তৎপর ছিলেন৷ কিন্তু দিল্লি ওই নাম খারিজ করে দেয়৷

 

◾ এন্টালি কেন্দ্রের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে আইনজীবী তথা যুব মোর্চা নেত্রী প্রিয়ঙ্কা তিবরেওয়ালের নাম৷ তবে উত্তর কলকাতার এক যুব মোর্চা নেতার নামও রয়েছে৷

  1. Advt
Previous articleদমদমে প্রচারে বেরিয়ে বিজেপিকে তুলোধোনা করলেন ব্রাত্য
Next articleবিরল রোগের ইনজেকশনের দাম ২২ কোটি টাকা, কী সেই রোগ?