বিজেপি কর্মীরাই এখন নেতাদের শোনাচ্ছেন ‘খেলা হবে’, কণাদ দাশগুপ্তর কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

প্রার্থী ঘোষণার আগে বিজেপির রাজ্য নেতারা বার বার বলেছেন, “বিজেপি ‘অন্যরকম’ দল৷ দুম করে প্রার্থী ঘোষণা হয়না৷ সব কিছু দফায় দফায় খতিয়ে দেখে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রার্থী চূড়ান্ত করে এবং ঘোষণা করে”৷

বিজেপি আপাতত দু’দফায় বঙ্গ-ভোটের প্রার্থী ঘোষণা করেছে৷ আরও হয়তো একাধিক দফায় ঘোষণা হবে৷

বিজেপি যেহেতু ‘অন্যরকম’ দল, তাই ওই দু’দফা প্রার্থী ঘোষণার আগে, আমরা দেখেছি, দফায় দফায় দলের রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরে বৈঠক হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী, অমিত শাহ, জেপি নাড্ডা’র মতো শীর্ষ নেতারা ‘সবকিছু’ দেখেশুনে বাংলার প্রার্থী বাছাই করেছেন৷ বাংলার সব উল্লেখযোগ্য নেতারাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন৷

আরও পড়ুন : সংবিধান লঙ্ঘিত হয়েছে, স্বপন দাশগুপ্তের সাংসদপদ খারিজ হোক, টুইটে দাবি মহুয়া মৈত্রের

রাজ্য বিজেপির সব ক’টি জেলা কমিটি উপযুক্ত প্রার্থীর নাম সুপারিশ করেছে৷ সেই তালিকা গিয়েছে শাহ-নাড্ডার টেবিলে৷ শোনা গিয়েছে, জেলা বা রাজ্য কমিটির সুপারিশ করা প্রার্থী- তালিকা দিল্লি চোখ বন্ধ করে সিলমোহর দেয়নি৷
শোনা গিয়েছে, অমিত শাহ না’কি পুরোপুরি নিজস্ব টিম নামিয়ে কারা দলের প্রার্থী হলে ‘সর্বোত্তম’ হয়, তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করেছেন৷ শাহ তালিকা তৈরি করেছেন তাঁর নিজস্ব এজেন্সি৷ রাজ্য কমিটিকে ভরসা না করে, কার্যত উপেক্ষা করে শাহি- তালিকা তৈরি হয়েছে৷ শাহ-নিযুক্ত এজেন্সির তৈরি প্রার্থী -তালিকা, রাজ্য কমিটির সুপারিশ এবং পর্যবেক্ষকদের রিপোর্ট, সব কিছু বিবেচনা করেই নাকি বিজেপির প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে বা হবে৷ বেশ ক’টি ধাপ পেরিয়ে, এবং স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর ছাড়পত্র পাওয়ার পরেই না’কি বঙ্গ-ভোটে বিজেপি প্রার্থীদের ‘ফুলপ্রুফ’ প্রার্থী তালিকা তৈরি হয়েছে৷

◾তাহলে, এই ‘অন্যরকম’ দলের জামাকাপড় এভাবে খুলে পড়লো কেন ?

◾দিল্লি থেকে দু’দফায় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হওয়ার পর বঙ্গ-বিজেপি এভাবে আড়াআড়ি ভেঙ্গে পড়লো কেন ?

◾যে ক’টি জেলায় পদ্ম- প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়েছে, প্রতিটি জেলায় নিচুতলার ‘আদি’-কর্মীরা ইতিহাস তৈরি করে এভাবে মারমুখী হয়ে উঠলেন কেন ?

◾দলীয় কর্মীদের ক্ষোভ ‘ফেস’ করতে অক্ষম ভিনরাজ্য থেকে আসা বিজেপি’র হেভিওয়েট পর্যবেক্ষকদের লুকিয়ে হেস্টিংস দফতরে ঢুকতে হচ্ছে কেন ? মার খাওয়ার ভয়ে ?

◾কেন হাওড়ার এক তথাকথিত ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থীকে বলতে হচ্ছে, “আমি খেলবো না! ন্যূনতম কথাটুকুও না বলে আমাকে ওই কেন্দ্রে প্রার্থী করা হলো কেন ? আমি তো কলকাতায় দাঁড়াতে চেয়েছিলাম !”

◾কেন দক্ষিণ ২৪ পরগণায় এমন একজনকে প্রার্থী করা হলো, যিনি দলের প্রাথমিক সদস্যও নন ?

◾ ওই জেলারই এক নব্য বিজেপি নেতা, যাকে বড়সড় দায়িত্ব দিয়েছিলো দল, তালিকা ঘোষণা হওয়ার পরমুহুর্তেই কেন তিনি দল ছাড়লেন ?

◾বাঁকুড়ার এক নব্য বিজেপি নেতা কেন বললেন, ” সাড়ে ৩ কোটি টাকার বিনিময়ে প্রার্থী পদ বিক্রি করেছে জেলা নেতৃত্ব ?”

আরও অজস্র দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছে গত ২৪ ঘন্টায়৷

◾তাহলে কোথায় গেলো নরেন্দ্র মোদির বিশাল অভিজ্ঞতা ?

◾কোথায় গেলো অমিত শাহের নিজস্ব এজেন্সির রিপোর্ট ? সবই ফক্কা ছিলো ?

◾কোথায় গেলো ‘অন্যরকম’ দল বিজেপির সোনার পাথরবাটি শৃঙ্খলা ?

◾কেন সোমবার অমিত শাহের মহা-সভা এভাবে ফ্লপ করলো ?

◾কর্মী-বিক্ষোভের ঠেলায় কেনই বা ‘অন্যরকম’ দলের নেতাদের আজ বলতে হচ্ছে, “ভুল করেছি, মাপ চাইছি, প্রার্থী বদলে দিচ্ছি !”

◾এবং কেন ব্যস্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সব কর্মসূচি বাতিল করে সোমবার রাতে কলকাতায় ছুটে আসতে হলো ?

◾এবারের বঙ্গ-ভোটে ২০০ আসন দখল করার ঘোষণা গলা তুলে যারা করেছিলো, তারাই এখন ‘পিছনের দিকে এগিয়ে’ গিয়ে ভাবছেন, “এখনও বহু আসনে প্রার্থী ঘোষণা হয়নি৷ কলকাতার প্রার্থীই বাকি৷ বিক্ষোভহীন ভাবে রাজ্যে ২০০ আসনে প্রার্থী দেওয়া যাবে তো ?”

◾ভোট- রাজনীতিতে নিতান্তই অপরিপক্ক বঙ্গ-গেরুয়া ব্রিগেড ভাবতেই পারেননি, প্রার্থী ঘোষণার পর দলের দফতরে ঢুকে দলের কর্মীরাই হুমকির সুরে “খেলা হবে” স্লোগান তুলবেন৷

Advt

Previous articleসংবিধান লঙ্ঘিত হয়েছে, স্বপন দাশগুপ্তের সাংসদপদ খারিজ হোক, টুইটে দাবি মহুয়া মৈত্রের
Next articleব্রেকফাস্ট নিউজ