‘ফাটাকেষ্ট’র কায়দায় জনসভায় মিঠুনের দেদার প্রতিশ্রুতি, খালি নিজের রান্নাঘরে নজর নেই!

পর্দায় যেভাবে নিজের ভোল বদলান তারকা। ঠিক সেইভাবেই রিল থেকে রিয়েল লাইফে নেমে অনেকটা ‘ফাটাকেষ্ট’র ঢঙে ব্যাটিং করতে চাইছেন মিঠুন চক্রবর্তী। ‘জাত গোখরো’ ডায়লগ দেওয়া যায়, কিন্তু তাতে যে ভবি ভোলার নয়, তা রবিবার রায়নার জনসভায় প্রমাণ রেখে গেলেন মহাগুরু।

শীতলকুচির ‘গণহত্যা’ নিয়ে রাজনৈতিক মহল সরব, কমিশন সহ কেন্দ্রের শাসক দলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে সব রাজনৈতিক দল। আর মিঠুন বলছেন, এটা নাকি দাঙ্গা, সন্ত্রাস আর হিংসার নিট ফল! শনিবার কোথায়, কখন, কীভাবে হামলা, সন্ত্রাস হয়েছে, তার কোনও প্রমাণ এখনও কমিশন দিতে পারেনি। একটাও ভিডিও ফুটেজ নেই। আছে শুধু লাশের হিসাব। আর ‘মুম্বই কা বাবু’ কিনা আসল রহস্য জেনে গেলেন! রায়নার মঞ্চে দাঁড়িয়ে মিঠুন বলেছেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে ৬ মাসে সব বন্ধ হয়ে যাবে? রাজনৈতিকমহল প্রশ্ন তুলেছে, তাহলে উত্তরপ্রদেশে কেন গণহত্যা হয়? হাতরসের মতো ঘটনা হয়? আখলাখের মতো বৃদ্ধকে কেন মরতে হয়?আর বাংলায় এসে ‘সোনার বাংলা’র গল্প শোনাচ্ছেন? বিরোধীরা বলছেন, বহিরাগতদের ঘরে টেনে আনছেন কিছু ‘বিশ্বাসঘাতক’, যারা শুধু গিরগিটির মতো রঙ বদলান ব্যক্তিগত স্বার্থে।

আরও পড়ুন-গণতন্ত্রের উৎসবে অংশ নিতে গিয়ে গণহত্যার বলি! বিচার চাইছে কোচবিহার

মিঠুনের দাবি, কিছু লোক বিগত কয়েক বছরে ঝান্ডা হাতে টাকা কামিয়েছে। তাদের পাখনা কাটব। মিঠুন আসলে গল্পের সেই একচোখো হরিণের মতো। কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে বারবার বাংলার শাসক দলকে কায়দা করতে চেয়েছে কেন্দ্র। হাজার ক্যানেস্তারা বাজিয়েও একজনকেও কাঠগড়ায় তুলতে পারেনি মোদি সরকার। কিন্তু মিঠুন যদি জানাতেন কোন জাদুবলে অমিত-পুত্র জয় শাহর ব্যবসা এক লাফে কয়েক লাখ থেকে ১০০ কোটির ঘরে পৌঁছে যায়, তার রহস্যটা! কিংবা যে ব্যবসায়ীকে দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হতো, সেই আদানি গোষ্ঠী কিনা আজ আম্বানি গোষ্ঠীর পর দেশের দ্বিতীয় ধনশালী গোষ্ঠী? মাত্র ৮ বছরে? কোন জাদুদণ্ডে?

মিঠুন রায়নার জনসভায় বলছেন তিনি কথা দিচ্ছেন, বিজেপি রাজ্য বদলে দেবে ক্ষমতায় এলে? এতটাই যদি তাঁর আত্মবিশ্বাস হয়, তাহলে কেন কেন্দ্রের সরকারের কাছে তিনি প্রশ্ন করছেন না… বছরে ২ কোটি চাকরি কোথায় গেল? বিদেশ থেকে কালো টাকা এনে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের অ্যাকাউন্টে ১৫ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি এখনও কেন পালন করা হলো না? লকডাউনের পর ৩০ কোটি বেকারের রুজি রোজগারের ব্যবস্থা, লাফিয়ে বেড়ে যাওয়া গ্যাসের হাজার টাকা ছুঁয়ে ফেলা, পেট্রল-ডিজেলের দাম সেঞ্চুরির কাছাকাছি ঘোরাফেরা করা, সবজির আকাশ ছোঁওয়া দাম, এগুলোর কেন সমাধান হলো না?

মিঠুন ফিল্মের স্টাইলে অন্যকে চোর বলছেন, অথচ তিনি নিজে সারদা চিটফান্ডের সঙ্গে জড়িয়ে প্যাঁচে পড়ে তদন্তের ভয়ে টাকা ফেরত দিয়েছেন। যেটা বলছেন না, তিনি আর একটি চিটফান্ড অ্যালকেমিস্টের ব্র‍্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর ছিলেন। কেন সেদিন লোক ঠকানো চিটফান্ডে যুক্ত হয়ে আজ অন্যের দিকে আঙুল তুলছেন?

আরও পড়ুন-শোকস্তব্ধ শীতলকুচি, কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে নিহতদের শেষকৃত্য সম্পন্ন

স্বাস্থ্যসাথী আর দুয়ারে সরকারের সাফল্যে বিজেপি যে বেকায়দায় তা মিঠুনের কথাতেও পরিষ্কার। তাই তাঁকে আয়ুষ্মান ভারতের কথা তুলতে হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রশ্ন, যদি রাজ্য সরকার সব মানুষের স্বাস্থ্যের গ্যারান্টি নেয়, তাহলে কেন আর একটি প্রকল্প?

বাংলা এক অন্য মিঠুনকে দেখছে, যিনি ৭০ পেরিয়েও রাজনৈতিক উচ্চাকাঙখায় পরিপূর্ণ। কিন্তু হঠাৎ এতটা উগ্র কেন? চলচ্চিত্রে সমসাময়িক মিঠুনের এক বন্ধু বলেছেন, ব্যবসা আর ছেলেকে বাঁচাতে মিঠুন এখন মরিয়া। ‘ফাটা কেষ্ট’র ঢঙে যতই ডায়ালগ দিন, ওর নিজের রান্নাঘরেই নজর নেই। যদিও ‘এখন বিশ্ববাংলা সংবাদ’ এসব কথায় মোটেই কান দেয় না।

Advt

Previous articleভয়াবহ আগুনে মৃত্যু ২ শিশুর, পুড়ে ছাই ১৫০ টি ঝুপড়ি
Next articleটানা ৬ দিন বন্ধ থাকছে ব্যাঙ্ক পরিষেবা! কবে কবে জেনে নিন