Saturday, November 15, 2025

যুক্তির ঝড়ে সব অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপিকে তুলোধোনা অভিষেকের

Date:

Share post:

ভিনি-ভিডি-ভিসি- এই কায়দাতেই সমস্ত বিতর্কিত প্রশ্নের জবাব স্ট্রেট ব্যাটে খেলে বল মাঠের বাইরে পাঠালেন তৃণমূল (Tmc) সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Benarjee)। পয়েলা বৈশাখের সন্ধেয় একটি বেসরকারি নিউজ চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দেন অভিষেক। সেখানেই ‘তোলাবাজ ভাইপো’ থেকে শুরু করে আর্থিক দুর্নীতি, তুষ্টিকরণ অথবা পরিবারতন্ত্র- সব কিছু নেই তীক্ষ্ণ প্রশ্নবাণ ছোড়া হয় অভিষেকের দিকে। আর সেইসব কথারই জবাব দেন তৃণমূল সাংসদ। তাঁর কাছে প্রশ্ন আসে মুকুল রায় (Mukul Roy) থেকে শুভেন্দু অধিকারী (Shubhendu Adhikari) দল ছাড়ার পর প্রত্যেকেই অভিষেকের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। এর উত্তরে প্রত্যয়ী অভিষেক পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, এই অভিযোগগুলি দলে থেকে তোলেননি কেন? তখন কেন মনে হয়নি তৃণমূল একটি ‘প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি’? দল থেকে বেরিয়ে গিয়ে অভিযোগ কেন? তিনি বলেন, যা অভিযোগ আছে, তথ্য-প্রমাণসহ তা সবার সামনে আনা হোক।

কথা বলতে গিয়ে কিছুটা পিছনের দিকে তাকান অভিষেক। মনে করান সেই সব দিনের কথা যখন বাড়িতে দেখতেন, প্রতিদিন আক্রান্ত হয়ে ফিরছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Bandopadhyay)। সিপিআইএমের (Cpim) উপর সেই সময় থেকেই ক্ষোভ জন্মায়। তাঁর মনে হয়, যে সরকার সবাইকে সমান রাজনৈতিক অধিকার দেয় না, তাদের পরিবর্তন দরকার। 2011 রাজনীতিতে আসা। কিন্তু সেই সময়ে সহজ দক্ষিণ কলকাতার আসন ছেড়ে তিনি তাঁকে দেওয়া হয় ডায়মন্ড হারবার (Diamond Harbour)। সেখানে আগের সাংসদের অকর্মন্যতার দায় গিয়ে পড়ে অভিষেকের উপর। নিজের ক্যারিশমার জোরে ধীরে ধীরে ডায়মন্ড হারবারের মানুষের কাছের লোক হয়ে ওঠেন তৃণমূলের যুব সভাপতি। এখন ডায়মন্ডহারবার তাঁর গড় বলতে আপত্তি নেই।

তাঁর ফিটনেস নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সাংবাদিক। অভিষেক কৌতুক করে বলেন, রোজ কিলো-কিলো গালাগালি দেন নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi), অমিত শাহ (Amit Shah) থেকে দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)- সেটাই কাজে অনুপ্রেরণা দেয়।

প্রশ্ন তোলা হয়, যে যুবর সভাপতি তিনি, সেই যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক বিনয় মিশ্রের (Binay Mishra) নাম গরু পাচারের জড়িয়েছে। তবু, বিনয় পদে কেন? এর উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন অভিষেক। বলেন, সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেনের লেখা চিঠিতে মুকুল রায়ের টাকা নেওয়ার কথা আছে। কথা আছে শুভেন্দু অধিকারীর টাকা নেওয়ার। অভিযুক্ত হলেও তাঁদের পদ থেকে কেন সরাচ্ছে না বিজেপি? এরপর তীব্র আক্রমণ করেন তৃণমূল সাংসদ। স্পষ্ট বলেন, “যা অভিযোগ, তা সামনে আনা হোক। তথ্য-প্রমাণসহ সেগুলি প্রমাণ করা হোক”।

বারবার ‘ভাইপো’ বলে আক্রমণ করা হয় অভিষেককে। তিনি বলেন, একজন সামাজিক মানুষ হিসেবে তিনি কারও ছেলে, কারও স্বামী, কারও বাবা, কারও ভাইপো। সুতরাং সম্পর্ক নয়, সাহস থাকলে সরাসরি তাঁর নাম নিয়ে কথা বলুন মোদি-শাহরা।

বারবার ঘুরে ফিরে আসে দল দলবদলুদের কথা। আর সেখানেই আসে শুভেন্দু অধিকারী নাম। অভিষেক বলেন, শুভেন্দু নিজেই স্বীকার করেছেন 2014 থেকে তিনি বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। দল ছাড়ার প্রায় এক বছর আগে থেকে তিনি প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিলেন। অভিষেকের মতে, এঁদের মুখোশের আড়ালে একটা চেহারা আছে। তাঁর কাছে প্রশ্ন আসে, তিনি কি শুভেন্দুকে হিংসা করেন? স্মিত হেসে অভিষেক উত্তর দেন, “যদি হিংসা করব, যদি তাঁর প্রতি আমার রাগ থাকবে, তাহলে দল ছাড়ার আগে তাঁকে ডেকে বৈঠক করেছিলাম কেন”।

এরপরে প্রশ্ন করা হয় শিশির অধিকারীকে নিয়ে। তিনি বলেন, একজন তৃণমূল সাংসদ মোদির সভায় যাচ্ছেন। এটা কতটা সমর্থন যোগ্য? শুধু তাই নয়, অভিষেকের কাঁথির যে বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে বিজেপি ক্রমাগত শিষ্টাচারের প্রশ্ন তোলে। তার স্পষ্ট জবাব দেন অভিষেক। তিনি জানান, ওই কথাটা তিনি শিশির অধিকারীকে উদ্দেশ্য করে বলেননি। বলেছিলেন শুভেন্দুকে উদ্দেশ্য করে এবং বলেছিলেন কনিষ্ক পান্ডার উদ্দেশ্যে। কারণ, কনিষ্ক গডফাদার মনে করে শুভেন্দুকে।

বারবার বিজেপি (Bjp)-সহ বিরোধী দলের নিশানায় আসেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বাড়ি ফিরে স্ত্রী-কন্যা সামনে কী মনে হয় তাঁর? এর উত্তরে দৃঢ় কণ্ঠে অভিষেক বলেন, সমালোচনামূলক রাজনীতির মানেটা এখন বাড়ির লোক বোঝে। তিনি তাঁর মেয়ে ছোট্ট আজানিয়াকেও বলে দিয়েছেন, “বড় হলে তোমাকেও এসব শুনতে হবে”।

স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে প্রশান্ত কিশোরকে (Prashant Kishor) নিয়ে। সে বিষয়ে অভিষেকের সাফ জবাব দল বা সংগঠনের ব্যাপারে মোটেই নাক গলান না পিকে। তাঁর আওতাধীন বিষয়ে আলাদা। অভিষেক জানান, পিকের মাধ্যমেই দল জানতে পারে কোথায় কোথায় বিশ্বাসঘাতকতা হয়েছে।

আরও পড়ুন- ধরণা দিয়ে বিধি লঙ্ঘন করেননি মমতা, শীতলকুচির ভাইরাল ভিডিও নিয়ে ধন্দে কমিশন

2021-এর বিধানসভা নির্বাচনের ফল কী হবে? দ্বিধাহীন কণ্ঠে অভিষেক জানান, দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসবে তৃণমূল। তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাহলে কি তিনি উপমুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন? স্মিত হাসি অভিযোগের মুখে। স্পষ্ট জানান, “আমি একেবারেই চাই না। দল চাইলেও আমি চাই না। আমি চাই তৃণমূলকে তৃণমূলের সংগঠন আরো মজবুত করতে। শক্তিশালী তৃণমূল গঠন করতে। আমি যে অঞ্চলে সাংসদ। সেই অঞ্চলের আরও উন্নতি ঘটাতে”।

কোনও লুকোছাপা নয়। কোনও প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া নয়। যত বিতর্কিত আক্রমণাত্মক প্রশ্নই আসুক না কেন, স্পষ্ট ভাষায় দৃঢ়ভাবে সব কথার জবাব দিয়েছেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। বুঝিয়ে দিয়েছেন, রোদে পুড়ে জলে ভিজে নিজেকে দক্ষ রাজনৈতিক তৈরি করার রাস্তায় অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন- কোভিড পরিস্থিতিতে বাকি দফার ভোট একদিনে করার প্রস্তাব দিয়ে টুইট মমতার

 

spot_img

Related articles

রবীন্দ্র সরোবরের ছয় ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি: সম্পূর্ণ আইনি পথে কর্পোরেশন

প্রায় পাঁচ দশক পর রাবীন্দ্র সরোবর চত্বরে অবস্থিত ছ’টি ক্লাবের সঙ্গে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক ভাড়ার চুক্তি করল কলকাতা...

বিহারে কমিশনের কারচুপি, তোপ অখিলেশের: ঘুরিয়ে কংগ্রেসকে কটাক্ষ ওমরের

বিহারে এসআইআর প্রয়োগ করে ভোটারদের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কংগ্রেস-আরজেডির (RJD) মহাজোটের এটাই ছিল বিহার নির্বাচনের মূল...

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী কে: ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট JD(U)-এর!

বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ২৪৩ টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৮৯ আসনে জয়ী। নীতীশ কুমারের জেডিইউ জিতেছে ৮৫ টি আসন।...

জাদুসম্রাটের বাড়িতে বিয়ের আসর! বিজ্ঞাপন দেখে পাত্র পছন্দ মৌবনীর

জিনা বন্দ্যোপাধ্যায় জনে জনে বার্তা রুটি গেল ক্রমে, বিয়ে করছেন মৌবনী শীতের মরশুমে! মেয়ের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন পিসি সরকার, সেখান থেকেই পাত্র...