করোনা- চিকিৎসায় সংকট নিয়ে যোগী সরকারকে ধুইয়ে দিলো এলাহাবাদ হাইকোর্ট

ভয়াবহ করোনা সংক্রমণ এবং চিকিৎসা পরিষেবায় ঢালাও অপ্রতুলতা নিয়ে উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকারকে কার্যত ধুইয়ে দিয়েছে এলাহাবাদ হাইকোর্ট৷

এক জনস্বার্থ মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি সিদ্ধার্থ বর্মা ও বিচারপতি অজিত কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ উত্তরপ্রদেশ সরকার ও ওই রাজ্যের নির্বাচন কমিশনকে সরাসরি শো-কজ করে তাদের বক্তব্যও তলব করেছে৷

উত্তর প্রদেশে পঞ্চায়েত নির্বাচনের কাজে নিযুক্ত ১৩৫ জন শিক্ষক, শিক্ষামিত্রের করোনা- আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু- সংক্রান্ত এক জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে উত্তরপ্রদেশ সরকারকে তুলোধনা করে বিচারপতি সিদ্ধার্থ বর্মা ও বিচারপতি অজিত কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ তাঁদের কঠোর পর্যবেক্ষণে বলেছেন :-

◾আমরা এটা পরিষ্কার বলছি, সম্ভবত সরকার আত্মতুষ্ট হয়ে গিয়েছে৷ রাজ্য সরকার সজাগ ও সক্রিয় থাকলে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গের আক্রমণের মুখোমুখি হওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে তুলতো৷

◾করোনা-চিকিৎসা সংক্রান্ত পদক্ষেপ এবং এর পর্যাপ্ততার হিসাব দেখানোর জন্য আমরা আর স্রেফ কাগজপত্র বা প্রকাশ্য ঘোষণাগুলি সহ্য করব না। বাস্তব পরিস্থিতি সবাই দেখছে৷

◾আমরা জেনেছি, পঞ্চায়েত নির্বাচনের সাম্প্রতিক পর্যায়ের সময়ে কোভিডের নির্দেশিকা লঙ্ঘন করা হয়েছে। প্রশাসন, পুলিশ বা রাজ্য নির্বাচন কমিশন কেউই নির্বাচনের কাজে যুক্ত কর্মীদের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য কিছুই করেনি৷

আরও পড়ুন-করোনা মৃত্যুসংখ্যায় কারচুপি, ভারুচে ৪৮ জনের মৃত্যুকে ৮ বলে চালাল গুজরাট সরকার!

◾অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুর বিষয়ে আদালত পর্যবেক্ষণ করে বলেছে, “যদি এত ধরনের শিল্প-কারখানা থাকা সত্ত্বেও স্বাধীনতা অর্জনের সাত দশক পরেও আমরা আমাদের নাগরিকদের অক্সিজেন সরবরাহ করতে অক্ষম হয়ে থাকি, তবে তা লজ্জার বিষয়।

◾সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে ব্যর্থ উত্তরপ্রদেশ সরকার৷

◾লখনউ, প্রয়াগরাজ, বারাণসী, আগ্রা, কানপুর, গোরক্ষপুর এবং ঝাঁসির সরকারি হাসপাতালগুলিকে দিনে দুবার স্বাস্থ্য বুলেটিন প্রকাশ করতে হবে৷

◾ অক্সিজেনের সরবরাহ অক্ষুন্ন রাখতে হবে৷

ডিভিশন বেঞ্চ সরকারকে জরুরি প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে স্পষ্টভাবে বলেছে, “করোনার কারনে উত্তরপ্রদেশের প্রধান শহরগুলির পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল। অতীতের মহামারীর ইতিহাস বলেছে, যারা সম্পদশালী তারা বেঁচে থাকবে এবং অন্যরা সঠিক স্বাস্থ্য পরিষেবার অভাবে মারা যাবে৷ এভাবে চলতে দেওয়া যায়না”৷

প্রসঙ্গত, উত্তর প্রদেশে পঞ্চায়েত নির্বাচনের কাজে নিযুক্ত ১৩৫ জন শিক্ষক, শিক্ষামিত্রের করোনা- আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় উত্তরপ্রদেশ সরকার ও উত্তরপ্রদেশ রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে নোটিশ দিয়েছে এলাহাবাদ হাইকোর্ট৷ পঞ্চায়েত নির্বাচন চলাকালীন পর্যায়ক্রমে জারি করা একাধিক ‘কোভিড-নির্দেশিকা’ পালন করা হয়েছে কি’না, উত্তরপ্রদেশ সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে হলফনামার মাধ্যমে জানতে চেয়েছে আদালত৷ ‘কোভিড-বিধি’ ঢালাওভাবে অমান্য করার কারনও একইসঙ্গে জানতে চাওয়া হয়েছে৷
উত্তরপ্রদেশ সরকার ও ওই রাজ্যের নির্বাচন কমিশনের কাছে আদালত জানতে চায়, এমন পরিস্থিতি কেন তৈরি হয়েছিলো এবং এই মৃত্যুর ঘটনার জন্য সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কেন নেওয়া হবে না ? আদালতের প্রশ্ন, কোভিড-বিধি লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কেন মামলা করা হবে না? আদালত তো রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে আগেই নির্দেশ দিয়েছিল, কোভিডের নির্দেশিকাগুলি মানতে হবে৷ এরপরই ডিভিশন বেঞ্চ শো-কজ করেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার ও ওই রাজ্যের নির্বাচন কমিশনকে৷

দুই বিচারপতি বলেছেন, আমরা যদি জনস্বাস্থ্যের প্রকৃত সমস্যাগুলি এড়িয়ে থাকি এবং পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনে মানুষকে মরতে দিই, তবে ভবিষ্যৎ আমাদের কখনই ক্ষমা করতে পারে না৷ ”

Advt

Previous articleকরোনা মৃত্যুসংখ্যায় কারচুপি, ভারুচে ৪৮ জনের মৃত্যুকে ৮ বলে চালাল গুজরাট সরকার!
Next article‘দলের পারফরমেন্সই এই জয় এনে দিয়েছে’, বললেন বিরাট