এক্সিট পোলের থেকেও বেশি আসন কেন পাবে তৃণমূল ! কণাদ দাশগুপ্তর কলম

 

কণাদ দাশগুপ্ত

একাধিক বুথ ফেরত সমীক্ষা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, নবান্ন এবারও থাকবে তৃণমূলের দখলেই৷

একইসঙ্গে এক্সিট-পোলে এমন ইঙ্গিতও মিলেছে, বাংলায় এবার অনেকটাই বাড়বে বিজেপি৷ আর কংগ্রেস-বাম-আইএসএফের সংযুক্ত মোর্চা খুব বেশি হলে মোট আসনের ৫-৬ শতাংশ পেতে পারে৷ আর কয়েকঘন্টার অপেক্ষা, রবিবার দুপুরের মধ্যেই অবসান হবে সব জল্পনার৷ পরবর্তী ৫ বছরের জন্য ‘শাসক’ পেয়ে যাবেন বঙ্গবাসী ৷

এটা ঠিকই বুথ ফেরত সমীক্ষা কখনওই ভোটের প্রামাণ্য ফল নয়। অতীতে কিছু ক্ষেত্রে এ ধরনের সমীক্ষা যেমন মিলেছে, তেমনই অসংখ্যবার পূর্বাভাসের কাছাকাছিও থাকেনি চূড়ান্ত ফল৷ সেই কারনেই এক্সিট পোল-এর রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরেও তৃণমূল দাবি করেছে, চূড়ান্ত ফলে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা মিলবে শাসক দলের৷ ওদিকে বিজেপি বলেছে, ‘এক্সিট নয়, একজ্যাক্ট পোল-এ আমরা বিশ্বাসী’৷ তবে ভোটের সঙ্গেই যেহেতু সেঁটে রয়েছে এক্সিট পোল, তাই এ ধরনের সমীক্ষা নিশ্চিতভাবেই কৌতূহল বৃদ্ধি করে৷

◾এক্সিট-পোল-এ একটা বিষয় বেশ স্পষ্টভাবেই ধরা পড়েছে, যতই প্রচার হোক, ‘প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা’ এবার কাজ করেনি৷ Anti-Establishment তত্ত্ব কখনই এলাকা বা জেলা হিসাবে কাজ করেনা৷ রাজ্যজুড়েই সরকার বিরোধী হাওয়া ওঠে৷ বুথ ফেরত সমীক্ষা যত আসন তৃণমূলকে দিয়েছে, Anti- Establishment হাওয়া থাকলে, এই আসন কিছুতেই পেত না শাসক দল৷ চূড়ান্ত ফল যাই হোক, সমীক্ষা প্রমান করেছে বিরোধী-প্রচারে বোঝানোর চেষ্টা হলেও, বাস্তব বলছে একুশের ভোটে

প্রতিষ্ঠান-বিরোধী ‘ওয়েভ’ বলে কিছুই ছিলো না৷ ফলে চূড়ান্ত ফলে তৃণমূলের আসনবৃদ্ধির সম্ভাবনা প্রবল৷

◾ভোটের মুখে দলে দলে নেতা- বিধায়ক তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে পাড়ি দিয়েছিলেন৷ দলবদল করা এই নেতাদের বেশিরভাগই এবার পদ্ম-প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন৷ এক্সিট পোল বিজেপি’কে যে আসন দিয়েছে, তাতে অনুমান করা যায়, এই দলবদলে তৃণমূলের খুব একটা ক্ষতি হয়নি৷ সমীক্ষায় দলবদল করা নেতা বা বিধায়কদের প্রায় সবাইকে যদি ‘জয়ী’ বলে মনে করা হতো, তাহলে বিজেপির আসন সংখ্যা কমপক্ষে ২০-২৫টি বাড়তো৷ সেক্ষেত্রে অন্তত ৫০ শতাংশ বুথ-ফেরত সমীক্ষায় বিজেপি’কে তৃণমূলের আগে রাখা হতো৷ তা হয়নি৷ বিচ্ছিন্নভাবে দলবদল করা কয়েকজন জয়ী হতে পারেন অবশ্যই, কিন্তু এই ‘দলবদল’-এর সামগ্রিক ‘সুফল’ বিজেপি পায়নি৷

এক্ষেত্রেও চূড়ান্ত ফলে তৃণমূলের আসন বৃদ্ধির সম্ভাবনা প্রবল৷

 

◾এই ব্যাখ্যায় অনেকে আপত্তি করতে পারেন৷ এই বিতর্কের আগে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে৷ যদি ধরে নেওয়া যায়, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে বিধানসভার ভোট হয়ে থাকে, তাহলে ধরে নেওয়া যায়, উত্তরবঙ্গে এবং জঙ্গলমহল অঞ্চলে বিজেপি ভালো আসন দখল করে ফেলেছে৷ তার সঙ্গে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার ঢেউ এবং দলবদলের এফেক্ট যদি বিজেপির পালে লাগতো, তাহলে সব ক’টি বুথ ফেরত সমীক্ষা রিপোর্ট জানাতে বাধ্য হতো, বিজেপির আসনসংখ্যা ২০০ অতিক্রম করার সম্ভাবনা পুরোমাত্রায়৷ তেমন প্রতিফলন হলো কোথায় ?

 

◾ তৃণমূলের আসনবৃদ্ধির আর একটি ক্ষেত্র মালদহ এবং মুর্শিদাবাদ জেলা৷ এই দুই জেলা মিলিয়ে মোট আসন ৩৪টি৷ এই ৩৪ আসনের মধ্যে এবার তৃণমূল পেতে পারে কমপক্ষে ১২-১৪ আসন৷ ফলে চূড়ান্ত ফলে এর প্রতিফলন দেখার সম্ভাবনা প্রবল৷

 

◾ বুথ ফেরত সমীক্ষা বলছে, তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে লড়াই এবার হাড্ডাহাড্ডি৷ ফলে এটা নিশ্চিত, সরকার যে দলই গঠন করুক, প্রায় পাঁচ দশক পর একটা

শক্তিশালী বিরোধী দলকে অপর দিকে দেখতে হবে৷ সংসদীয় গণতন্ত্রে এটা নিঃসন্দেহে বিশাল ব্যাপার৷ ইদানিংকালে ২০০১ সালে বিরোধী আসনে ছিলেন ৮৯ জন, ১৯৯৬ সালে ছিলেন ৮২ জন, ২০১৬ সালে সম্মিলিত বিরোধীর সংখ্যা ৭৩ জন৷ ২০০১ সালেই ছিলো সর্বোচ্চ ৷ এক্সিট পোল বলছে ২০২১-এ বিরোধী বেঞ্চে দেখা যেতে পারে শতাধিক বিধায়ককে৷ পাঁচ দশকে এটা রেকর্ড৷

Previous articleভারতের সঙ্গে বিমান সংযোগ বিচ্ছিন্ন করল আমেরিকার বাইডেন সরকার
Next articleসেলেবদের দেখে হতাশার বহিঃপ্রকাশ বন্ধ করুন