মমতা’র জনপ্রিয়তার সঙ্গে এঁটে উঠতে পারেননি মোদি-শাহ, ময়নাতদন্ত RSS-এর

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তার সঙ্গে বাংলায় এঁটে উঠতে পারেননি বিজেপির শীর্ষনেতৃত্ব৷ ভোটপ্রচারে ‘বাঙালিয়ানা’ তুলে ধরতেও ব্যর্থ বিজেপি৷

বাংলায় বিজেপির নির্বাচনী বিপর্যয়ের কারন হিসাবে এই বিশ্লেষণই উঠে এলো RSS-এর মুখপত্র ‘অর্গানাইজার’-এর ১৬ মে’র সংখ্যায়। এই ব্যাখ্যা ঘিরে জোর চর্চাও শুরু হয়েছে বিজেপি-অন্দরে৷

RSS-এর ‘ময়না তদন্ত’ রিপোর্টের প্রেক্ষিতে রাজ্য বিজেপি’র একাধিক নেতার বক্তব্য, বাংলায় নির্বাচন পরিচালনা করেছেন দলের শীর্ষ নেতারা৷ মূল দায়িত্বে ছিলেন স্বয়ং অমিত শাহ, রাজনৈতিক মহলে যিনি ‘চাণক্য’ হিসাবে পরিচিত৷ RSS-এর এই বিশ্লেষণ আজ মানতে হলে, এটাও তো মেনে নিতে হবে দলের সর্বোচ্চস্তরই তাহলে সঠিক সময়ে এই খামতি অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছেন৷ তাই এখন আর এসব ব্যাখ্যায় লাভ কী?

RSS-এর মুখপত্র ‘অর্গানাইজার’- এর সাম্প্রতিক সংখ্যার প্রচ্ছদে ‘Save Bengal’ কথাটি রাখা হলেও ভিতরে একাধিক নিবন্ধে কার্যত একের পর এক বিজেপির ব্যর্থতা, অদক্ষতা, পেশাদারিত্বের অভাব এবং পরিস্থিতি বোঝার অক্ষমতার কথাই তুলে ধরা হয়েছে৷ বিশদ ব্যাখ্যা করা হয়েছে, দিল্লির নেতৃত্ব এতখানি সক্রিয়তা দেখিয়েও কেন বাংলায় ব্যর্থ হলো বিজেপি৷

A lot to Learn and Unlearn- প্রতিবেদনের শুরুতেই স্পষ্ট বলা হয়েছে, বাংলার নির্বাচনে বিজেপি’র কোনও কৌশলই কাজ করেনি৷ কারন, এই নির্বাচন স্রেফ কিছু আবেগ দিয়ে জেতার চেষ্টা হয়েছিলো৷ অথচ বিজেপির সামনে দারুণ সুযোগ ছিলো৷ ভোটের এই ফল হয়তো পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনে সাফল্য পেতে দলকে সাহায্য করবে৷ বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের নেতারা টানা প্রচার করলেও কাজের কাজ হয়নি৷ বিজেপির কেন্দ্রীয় বা রাজ্য নেতৃত্ব এমন ফল আশাও করেননি৷ অথচ তেমনই হয়েছে৷

পরাজয়ের কারন হিসাবে এর পরেই মূলত ৬ টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে RSS-এর মুখপত্রে৷ সেগুলি হলো :
(১) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা

(২) বাঙালিয়ানা তুলে ধরতে বিজেপি’র ব্যর্থতা

(৩) মহিলা ভোটার টানতে না পারা

(৪) হিন্দু ভোট ভাগ হওয়া

(৫) বঙ্গ-বিজেপিতে দক্ষ ও কুশলী কর্মীর অভাব

(৬) এলাকায় প্রভাবশালী লোক না থাকা৷

বলা হয়েছে, দিল্লি থেকে নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহেরা বারংবার বাংলায় প্রচার করেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তায় চিড় ধরাতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ মমতার জনপ্রিয়তার সঙ্গেও এঁটে উঠতে পারেননি। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ সমীক্ষা চালিয়ে বুঝতে পেরেছে, রাজনৈতিক জনপ্রিয়তায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম-যোগ্যতাসম্পন্ন কোনও মুখ বিজেপির শীর্ষমহল তুলেই ধরতে পারেনি। তুমুল জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে বাজিমাৎ করেছেন মমতা৷

RSS- এর বিশ্লেষণ, নরেন্দ্র মোদি বা শাহ’র মতো নেতারা বাংলায় গিয়ে সেভাবে ‘বাঙালিয়ানা’ও তুলে ধরতে পারেননি। কৌশলে কিছু ফাঁক ছিলো, সেই ফাঁক কাজে লাগিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ তৃণমূলের মহিলা ভোটব্যাঙ্কেও ন্যূনতম ফাটল ধরানো যায়নি৷ তেমন কোনও কৌশলও বিজেপি’র তরফে দেখা যায়নি৷ RSS বেশ স্পষ্টভাবেই বলেছে, বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে প্রায় সব কেন্দ্রেই দেখা গিয়েছে, বঙ্গ- বিজেপিতে দক্ষ ও কুশলী কর্মীর চরম অভাব রয়েছে৷ সিংহভাগ স্থানীয় নেতা বা কর্মীদের ভোট করানো সম্পর্কে অভিজ্ঞতা প্রায় ছিলো না বললেই চলে৷ তাছাড়া এলাকায় এলাকায় প্রভাবশালী লোকদের দলে টানার চেষ্টাই হয়নি৷

RSS-এর ময়না তদন্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব, কৃতিত্ব এবং জনপ্রিয়তাকে স্বীকার করা হয়েছে৷ নিজেদের মুখপত্রে RSS অনেকটাই প্রশংসা করেছে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷ বলা হয়েছে, ‘মমতার রাজনৈতিক ক্যারিশ্মার সঙ্গে বিজেপির রাজ্যনেতারা নিজেদের একদমই মেলাতে পারেননি, খাপ খাওয়াতেও পারেননি’। ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে, মানুষের মনে ভোটের আগে থেকেই একটি ধারনা ছিলো, তৃণমূল কংগ্রেস খারাপ লোকেদের দল হলেও এই দলের মাথায় একজন ভালো নেত্রী আছেন৷ এই ধারণার বদল ঘটাতে পারেনি বিজেপি৷ আর সেই কারনেই বাংলায় মমতার নেতৃত্ব দেওয়ার স্টাইল এবং জনপ্রিয়তার সঙ্গে পাল্লা দেওয়া যায়নি। নরেন্দ্র মোদি বা অমিত শাহেরা যথেষ্ট জনপ্রিয় হলেও, বাংলায় সেই মাপকাঠি ছাপিয়ে যেতে পারেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে৷

আরও পড়ুন- হামলার মুখে বিজেপি সাংসদ, গাড়ি লক্ষ্য করে ছোড়া হল ইট

Previous articleঅনাস্থা আনার প্রস্তুতি শুরু হতেই ইস্তফা দাসপুরের ‘শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ’ উপপ্রধানের
Next articleছেলে নিয়ে যান: রাস্তায় শিশু ফেলে হাঁক বাবার, শেষে কোল পেল একরত্তি