দীর্ঘদিনের বন্ধু আর থাকলো না বিপদের দিনে। পাশে দাঁড়ালো সেই শাঁখা সিঁদুর। এদিন সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হতেই আর তার পাশে দেখা যায়নি তাঁর জীবনের বিশেষ বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে। নিজাম প্যালেসের ধারে কাছে দেখা যায়নি এই বিতর্কিত মহিলাটিকে। পরিবর্তে নিজাম প্যালেসে কিন্তু ছুটে এসেছেন শোভনের স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়। তবে তিনি জানিয়েছেন, ‘দেখা করতে আসিনি। আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে এসেছি। কী হয়েছে, কিছুই জানি না।’ আর এখানেই অনেকে মনে করছেন শোভনের ভবিষ্যত যাই হোক না কেন রত্না তাঁকে চট করে ছেড়ে দেবেন না। হয়তো শোভনের জীবনে এই গ্রেফতারিই হয়তো টার্নিং পয়েন্ট হয়ে যাবে।

রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কের ঘটনা নতুন কিছু নয়। কার্যত এই মহিলার জন্যই শোভন ঘরবাড়ি, সংসার, পরিবার, তৃণমূল, মন্ত্রীত্ব, মেয়র সব ছেড়ে দিয়েছেন। শোভন বা বৈশাখী তাঁদের সম্পর্ককেও বরাবরই বন্ধুত্বের সম্পর্ক হিসাবেই দেখে এসেছেন ও সেটাই তাঁরা বার বার বলে এসেছেন। এমনকি রাজ্য বিজেপি সূত্রে এটাও জানা গিয়েছে, গেরুয়া শিবিরের কেউই বৈশাখীকে পছন্দ করেন না। তাঁকে নিয়ে তীব্র আপত্তি রয়েছে সঙ্ঘেরও। কার্যত শোভনের জেদের জন্যই বৈশাখীকে পদ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই বৈশাখীকে ভোটে লড়াই করার টিকিট দেওয়া হয়নি বলে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থীই হলেন না শোভন। এই ঘটনা গেরুয়া শিবির ভালো ভাবে নেয়নি। এরপরেই এদিনের গ্রেফতারি যা নিয়ে বিজেপি অন্তত শোভনের পাশে দাঁড়ায়নি।

বস্তুত অনেকেই মনে করছেন , বৈশাখী বেশ ঠান্ডা মাথায় মেপে পা ফেলেছেন। তিনি শোভনকে কার্যত তাঁর হাতের মুঠোয় এনে তাঁকে নিজের রাজনৈতিক কেরিয়ার ও উত্থানের সোপান হিসাবে ব্যবহার করেছেন। চেয়েছিলেন শোভনকে আঁকড়ে ধরে কোনও দলের নেতানেত্রীর পদ পেয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিধায়ক বা সাংসদ কিংবা মন্ত্রীত্ব বাগিয়ে নেওয়া।

তৃণমূলের অন্দরে বৈশাখী বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারেন নি। বিজেপিতে গিয়ে পদ পেয়ে গিয়েছিলেন। যদিও সেই পদ তাঁরা কেউই ধরে রাখতে পারেননি।

আসলে শোভনের থেকে এখন ক্রমশই দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বৈশাখী। তবে শোভনের সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়া শাঁখা সিঁদুর পড়া রত্না কিন্তু বুঝে গিয়েছেন স্বামীকে ফিরে পাওয়ার এটাই মোক্ষম সময়। তাই তিনি এবার ঝাঁপ দিয়েছেন শোভনকে ফেরাতে। হয়তো তাতে সফলও হবেন।
