ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে চিনুন, জেনে নিন কী করবেন, কী করবেন না

করোনা পরিস্থিতি দেশজুড়ে ভয়াবহ আকার নিয়েছে। এরই মাঝে গোদের ওপর বিষফোঁড়া মত ভয় ধরিয়েছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস(black fungus)। বিজ্ঞানের ভাষায় যার নাম মিউকরমাইকোসিস(miukarmaikosis)। ইতিমধ্যেই দেশের একাধিক রাজ্যের পাশাপাশি কলকাতাতেও এই সংক্রমণের জেরে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিষয়টিকে মোটেই অবহেলার বিষয় নয় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন ইতিমধ্যেই তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। মূলত করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর মানুষের শরীরে হানা দিচ্ছে এই সংক্রমণ। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন দেশের চিকিৎসক মহল। জেনে নেওয়া যাক এই ছত্রাক? কীভাবে মানুষের শরীরে সংক্রমণ ছড়ায় এটি? এবং কী কী সর্তকতা অবলম্বন করলে মুক্তি পাওয়া যাবে বিপদজনক এই সংক্রমণ থেকে?

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কী

এই সংক্রমণটি সাধারণত মাটি, গাছপালা, সার বা পচনশীল ফল ও সব্জির মধ্যে যে শ্লেষ্মা থাকে, তার থেকেই ছড়ায়। চিকিৎসকদের অনুমান, গুরুতর অসুস্থ কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় যে স্টেরয়েড ব্যবহার করা হচ্ছে, সম্ভবত তা থেকেই ছড়াচ্ছে এই সংক্রমণ। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকরমাইকোসিস সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই সংক্রমণ মানব দেহের সাইনাস, মস্তিষ্ক ও ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ডায়বেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি বা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত কম অথবা ক্যান্সার কিংবা এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণ প্রাণহানিকর হয়ে উঠতে পারে।

রোগের লক্ষণ

১. সাইনাসাইটিস বা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া বা নাকে সর্দি জমা, কালচে অথবা রক্তসহ নাক দিয়ে সর্দি বের হওয়া।

২. মুখের এক দিকে ব্যথা, অসাড় হয়ে আসা বা জ্বালা করা।

৩. নাকের সামনের অংশ বা চার পাশে কালচে হয়ে গিয়ে ত্বকের রং বদলে যাওয়া।

৪. দাঁতে ব্যথা, দাঁত আলগা হয়ে আসা, চোয়াল আটকে যাওয়া, চোয়ালের হাড়ে ব্যথা।

৫. চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া বা দুটো করে দেখা ও চোখে ব্যথা, জ্বর, ত্বকে জ্বালা, থ্রম্বোসিস ও নেক্রোসিস।

৬. বুকে ব্যথা ও শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা বাড়তে থাকা।

সংক্রমণ এড়াতে কী করবেন

১. নির্মাণস্থানের ধুলোবালি বা জনাকীর্ণ স্থান পরিদর্শন করার সময় অবশ্যই জুতা, লম্বা ট্রাউজার, লম্বা হাতা শার্ট এবং গ্লাভসের পাশাপাশি মাস্ক পরতে হবে।

২. বাগানের মাটি, সার নিয়ে ঘাঁটার সময় বা যে কোনরকম বাগান পরিচর্যার সময় জুতো, লম্বা প্যান্ট, লম্বা হাতা জামা পরুন।

৩ ব্যক্তিগত পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার নিয়ম মেনে চলুন, নিয়মিত স্নান করুন।

৪. হাইপারগ্লাইসেমিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

৫. কোভিডের চিকিৎসার পর ছাড়া পেয়ে ও ডায়াবেটিসে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দেখে নিয়ন্ত্রণ করুন।

৬. সঠিক ভাবে স্টেরয়েড ব্যবহার করতে হবে – সঠিক সময়, সঠিক ডোজ ও কোর্স পূর্ণ করুন।

৭.অক্সিজেন থেরাপির সময় পরিস্কার ও ফোটানো জল ব্যবহার করুন।

৮.সঠিক ভাবে জেনে তারপর অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খান।

কী করবেন না

১. এই সংক্রমণের উপসর্গ অবহেলা করবেন না।

২. নাক বন্ধ হওয়ার ঘটনাকে ব্যাকটেরিয়াজনিত সাইনোসাইটিস বলে অবহেলা করবেন না, বিশেষত যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।

৩. ছত্রাক সংক্রমণ হচ্ছে কি না, জানতে বিশদে পরীক্ষা করাতে দ্বিধা করবেন না (কেওএইচ স্টেইনিং ও মাইক্রোস্কোপি, কালচার, এমএএলডিআইটিওএফ)।

৪. মিউকরমাইকোসিসের চিকিৎসা শুরু করার ক্ষেত্রে একটুও সময় নষ্ট করবেন না।

Advt

Previous articleডিএলএফ ঘুষ মামলায় লালুপ্রসাদ যাদবকে ক্লিনচিট দিল সিবিআই
Next articleঝাড় উপড়ে বাঁশ নামিয়ে ল্যাজে গোবরে আলিমুদ্দিন