বাঁধের টাকা নয়-ছয়ে রেয়াত নয়: দুর্নীতির অভিযোগে শুভেন্দু-শিশিরকে ধুয়ে দিলেন অভিষেক

মানুষের টাকা নিয়ে যারা নয়-ছয় করেছেন, তাঁদের রেয়াত করা হবে না- তাজপুর-শঙ্করপুর দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে অধিকারী পরিবারকে ধুয়ে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Benarjee)। বৃহস্পতিবার, ইয়াস (Yaas) দুর্গত পূর্ব মেদিনীপুরে পৌঁছন অভিষেক। রামনগরে নেমে সেখান থেকে সমুদ্র উপকূল বরাবর রাস্তা ধরে হেঁটে যান তিনি। যদিও সেখানে রাস্তা বলে আর কিছু অবশিষ্ট নেই। যথেষ্ট বিপদসংকুল জায়গার উপর দিয়ে হেঁটে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে প্রথমে পৌঁছন তৃণমূল সাংসদ। সেখানে তাঁকে দেখেই নিজেদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন দুর্গতরা। অভিষেক তাঁদের আশ্বাস দেন, “চিন্তা করবেন না। ক্ষতিপূরণের টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাবে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সুস্থ থাকুন। বাচ্চাদের দিকে নজর রাখুন। জীবন থাকলে ঘর-বাড়ি সবকিছুই হবে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে বিষয়টি তদারকি করছেন। সবাই ক্ষতিপূরণ পাবেন”। তিনি জানান, দুয়ারে ত্রাণ চালু হয়েছে। সুতরাং লিখিত ভাবে তার জন্য আবেদন করতে হবে।

এরপরেই সমুদ্রপাড় বরাবর হাঁটতে শুরু করেন অভিষেক। যতই এগিয়ে গিয়েছেন তিনি ততই চোখে পড়েছে ধ্বংসস্তূপের চেহারা। 4 মাস আগে তৈরি করা বাঁধ ধুলিস্যাৎ হয়ে গিয়েছে। রাস্তার পিচের তলায় শুধুই বালি। যা দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান অভিষেক। যে কোনো মুহূর্তে বিপদের সম্ভাবনা। তাও সেই রাস্তা ধরে হেঁটে যান অভিষেক। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি উপস্থিত বিডিও-র থেকে খবর নেন, কারা ছিল এই রাস্তা এবং বাঁধ তৈরির দায়িত্ব? তাঁকে জানানো হয়, দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ এবং সেচ দফতরের দায়িত্বে ছিল এইসব। অভিষেকের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী অখিল গিরি (Akhil Giri)।

এরপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ক্ষোভ উগরে দেন অভিষেক। তিনি স্পষ্ট বলেন, মেদিনীপুরের একটি পরিবারকে বাঁচাতে গিয়ে পুরো জেলার সর্বনাশ হয়েছে। তিনি স্পষ্ট জানান, যাঁরা মানুষের টাকা নিয়ে নয়-ছয় করেছেন, বাঁধ মেরামত না করে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছেন, তাঁদের রেয়াত করা হবে না। শিশির অধিকারী-শুভেন্দু অধিকারীদের (Sisir Adhikari- Shuvendu Adhikari) নাম না করে অভিষেক বলেন, “কারা এই উন্নয়ন পর্ষদের দায়িত্বে ছিলেন আর ত্রাণ দফতের মন্ত্রীই বা কে ছিলেন সবটাই আপনাদের জানা। আমি তাঁদের নাম করতে চাই না। কিন্তু এই দুর্নীতি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সামনে চলে আসবে বুঝতে পেরেই ভোটের আগে মেরুদন্ড বিক্রি করে বিজেপিতে চলে গিয়েছেন তাঁরা”। স্পষ্ট ইঙ্গিত শিশির-শুভেন্দুর দিকে।

তৃণমূল সাংসদ বলেন, বালি মাটির অবস্থা ভূমিপুত্ররা ভালো বুঝতে পারবেন বলেই তাঁদেরকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু মানুষের টাকা নিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়েছে একটা পরিবার- তীব্র প্রতিক্রিয়া অভিষেকের।

বারবার ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন অভিষেক। তাঁদের আশ্বাস দেন। পাশে থাকার বার্তা দেন। তিনি জানান, প্রয়োজনে আরো অনেকবার তিনি সেখানে যাবেন। তিনি যে পরিস্থিতি দেখে গেলেন সেটা মুখ্যমন্ত্রীকে জানাবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

অভিষেকের এদিনের ভূমিকায় আপ্লুত স্থানীয় বাসিন্দারা। সংবাদ মাধ্যমকে তাঁরা জানান, এর আগে কোনও নেতা এই পরিস্থিতিতে তাঁদের পাশে এসে দাঁড়াননি। ইয়াসের পরেই সেই সন্ধেতে ডায়মন্ড হারবারের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে ত্রাণ শিবিরে থাকা বিপর্যস্তদের সঙ্গে কথা বলেন যুব তৃণমূল সভাপতি। এরপরে যান দক্ষিণ 24 পরগনার বিস্তীর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে। বুধবার তিনি যান পাথরপ্রতিমা অঞ্চলে। সেখানেও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের দ্রুত পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়েছিলেন অভিষেক। আর এদিন বিপদের ঝুঁকি নিয়ে দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে সাধারণ মানুষকে পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন তৃণমূল (Tmc) সাংসদ। একই সঙ্গে যাঁরা এই অন্যায়ের জন্য দায়ী, তাদের যে বিন্দুমাত্র রেয়াত করা হবে না তারও প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন:প্রদেশ কমিটি এখনই ভেঙে দিন, অধীরের বিরুদ্ধে তোপ দেগে সোনিয়াকে চিঠি মান্নানের

Advt

Previous articleপ্রদেশ কমিটি এখনই ভেঙে দিন, অধীরের বিরুদ্ধে তোপ দেগে সোনিয়াকে চিঠি মান্নানের
Next articleযোগী আদিত্যনাথ ও রামদেবের লেখা বই এবার উত্তরপ্রদেশের কলেজে পাঠ্য হলো