মেখলা পরে শ্বশুরকে পিঠে নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পথে নীহারিকা

পরনে গোলাপি মেখলা, আঁচল কোমরে আঁটা। পিঠে ঝুলছেন এক বৃদ্ধ। আর তাঁকে নিয়েই অবলীলায় হেঁটে চলেছেন এক মহিলা। করোনা আক্রান্ত শ্বশুরকে পিঠে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া নীহারিকা দাসের এই ছবি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। অসমের নামীদামী শিল্পী থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ কুর্নিশ জানাচ্ছেনঅসমের নঁগাও জেলার নীহারিকাকে। তবে, এসবে ধ্যান দেওয়ার মতো সময় এখন তাঁর নেই। কারণ তিনি নিজেও কোভিডে আক্রান্ত। তাই এখন তাঁর একটাই চিন্তা, একা হাতে নিজেকে এবং তাঁর শ্বশুরকে কী করে একা হাতে সামলাবেন!

কর্মসূত্রে রাজ্যের বাইরে থাকেন নীহারিকার স্বামী। বাড়ির যাবতীয় কাজ একাহাতে করেন নীহারিকা নিজে। ৭৫ বছর বয়সি শ্বশুরের জ্বর ও কোভিডের উপসর্গ দেখা দেওয়ায় নীহারিকা তাঁর শ্বশুড়ের পরীক্ষা করাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেকের কাছে সাহায্যের হাত পেতেছিলেন। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেননি। তাই শেষমেশ শ্বশুরকে পিঠে নিয়ে রওনা দেন নিকটবর্তী রহা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখানে পরীক্ষা করতেই শ্বশুড়-বৌমা, দুজনেরই কোভিড ধরা পড়ে। এরপর স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে শ্বশুড় থুলেশ্বরবাবুকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এবং নীহারিকাকে পাঠানো হয় হোম আইসোলেশনে। কিন্তু অসুস্থ শ্বশুড়কে ছেড়ে একা বাড়ি আসতে রাজি হননি নীহারিকা। শেষমেশ চিকিৎসকেরা দু’জনকেই অ্যাম্বুলেন্সে ভোগেশ্বর ফুকনানি হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

হাসপাতালে জেনারেল ওয়ার্ড থেকে নিয়ম করে এসে আইসিইউতে ভর্তি শ্বশুরের সেবা করছিলেন নীহারিকা। সেই ভিডিয়োও ছড়িয়ে পড়েছে। কখনও বউমা শ্বশুরের কপালে চুমু খেয়ে সাহস দেন। কখনও মজা করেন। কখনও বলেন, “এটা আইসিইউ দেউতা (বাবা), ভয় পাবেন না। বুড়ো হয়ে ঢুকেছেন, ডেকা (যুবক) হয়ে বেরোবেন।” কখনও তাঁকে বলতে শোনা যায়, “দেউতা আপনার কোনও চিন্তা নেই। কাঁদবেন না একদম। আমি তো আছি আপনার ভরসা। আর আমার আছেন আপনি।”

কিন্তু থুলেশ্বরবাবুর অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় গতকাল তাঁকে গুয়াহাটি মেডিকাল কলেজে পাঠানো হয়েছে। যদিও সেখানে আসতে পারেননি নীহারিকা। তাই অসহায় নীহারিকা ভিডিয়ো বার্তায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, “শ্বশুড়ের রক্ত লাগবে শুনেছি। তা৬র পাশে কেউ নেই। আমার নিজের শরীর ক্রমশ খারাপ হওয়ায় গতকাল তাঁকে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে। আসতে পারেননি নীহারিকা। তিনি ভিডিয়ো বার্তায় হাতজোড় করে স্বাস্থ্যামন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, ” “শ্বশুরের রক্ত লাগবে শুনছি। তাঁর পাশে কেউ নেই। আমার নিজের শরীর ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। শক্তি শেষ হয়ে আসছে। দয়া করে আমায় গুয়াহাটির একই হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। না হলে শ্বশুরমশায়কে সাহায্যের কেউ থাকবে না।”

নীহারিকার ভাইরাল ভিডিয়ো দেখে মুগ্ধ অভিনেত্রী আইমি বরুয়া বলেন,” নারীশক্তির অনন্য চেহারা নীহারিকা।” অবশ্য অনেকেই মন্তব্য করছেন, পিঠে করে শ্বশুরকে বয়ে যাওয়ার বিষয়টির পিছনে যে পরিকাঠামোর অভাব, সরকারি সদিচ্ছার অভাব, দারিদ্রের যন্ত্রণা লুকিয়ে রয়েছে- তার সমালোচনা ও সংশোধন হওয়া বেশি প্রয়োজন।

Advt

Previous articleবিজেপির অন্দরেই ষড়যন্ত্র! হুগলিতে ছক কষেই দিলীপের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, প্রকাশ্যে অডিও টেপ
Next articleবিশ্ব টেস্ট চ‍্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে এগিয়ে বিরাট বাহিনী, বলছেন লক্ষণ, দিলীপ বেঙ্গসরকর