নারদ- ত্রিপল চুরি- প্রতারণা: শুভেন্দুকে দিল্লি-তলবের প্রকৃত কারণ অনেক গভীরে

এদিকে যখন মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে রাজ্য সরকারের ‘দুয়ারে দুয়ারে সরকার’৷

ওদিকে তখন আত্মরক্ষায় দিল্লিতে ‘দুয়ারে দুয়ারে বিরোধীনেতা!’

দিল্লিতে জরুরি তলব করা হয়েছে বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। শুভেন্দু- ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, মঙ্গলবার অমিত শাহ নিজের বাসভবনে ডেকে পাঠিয়েছেন শুভেন্দুকে৷ দেখা করতে বলেছেন দলের সভাপতি নাড্ডাও৷ হয়তো অন্য কোনও শীর্ষ নেতার সঙ্গেও কথা হতে পারে তাঁর৷

তবে, স্পষ্টভাবে কেউই বলতে পারছে না এই দিল্লি-তলবের কারণ কী? শুভেন্দু- অনুগামীদের বক্তব্য, সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে কথা হবে৷ এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে, তাই যদি হবে, তাহলে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে ডাকা হয়নি কেন? দলের সভাপতিকে অন্ধকারে রেখে বাংলার সংগঠন নিয়ে শুভেন্দুর সঙ্গে আলোচনা কেন করবেন শীর্ষনেতারা?
সুতরাং এই বক্তব্য সঠিক নয় বলেই মনে করছে বঙ্গ-বিজেপির নেতারা৷

ওদিকে মঙ্গলবারই রাজ্র বিজেপি নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ খুঁজতে এবং পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করতে জরুরি বৈঠক ডেকেছে৷ ওই বৈঠক থাকা সত্ত্বেও একইদিনে এই শুভেন্দু-তলব কেন এত জরুরি হলো, তা নিয়ে চর্চা চলছে রাজনৈতিক মহলে৷

নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর, নারদ-মামলায় নিজেদের ভাবমূর্তি এবং নিরপেক্ষতা
বজায় রাখতে কেন্দ্রের কাছে CBI এখনই মুকুল রায় এবং শুভেন্দু অধিকারীকে গ্রেফতার করতে চাইছে৷ নাহলে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে৷ কেন্দ্রও এ বিষয়ে সহমত প্রকাশ করেছে৷ দিল্লি বিজেপি সূত্রের খবর, এই কথাই জানানো হবে শুভেন্দুকে৷ পাশাপাশি পরামর্শ দেওয়া হবে, হাইকোর্টে দ্রুত আগাম জামিনের আবেদন করার৷সওয়ালে বলা হবে যে মামলায় চার অভিযুক্ত ইতিমধ্যেই জামিন পেয়েছে, সেখানে একই মামলায় আগাম জামিনে আপত্তি কোথায় ? আগাম জামিনে তেমন আপত্তি CBI জানাবে না৷ এই আবেদন মঞ্জুর হলেই শুভেন্দুদের CBI-এর কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে৷ এ কথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতেই দিল্লিতে ডাকা হয়েছে শুভেন্দুকে৷

ওদিকে দিল্লির কানে পৌঁছে গিয়েছে কাঁথি পুরসভার গোডাউন থেকে রাজ্য সরকারের পাঠানো ত্রাণের ত্রিপল-চুরির ঘটনায় শুভেন্দু এবং তাঁর ভাইয়ের নামে FIR হয়েছে৷ বিরোধী দলনেতার এহেন কীর্তি বরদাস্ত করতে রাজি নয় দিল্লি৷ পাশাপাশি দুই শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠ চাকরি দেওয়ার নামে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে৷ এই ঘটনাও কানে গিয়েছে দিল্লির৷ সব বিষয়েই তাঁকে এদিন সতর্ক করতেই দিল্লিতে এই জরুরি তলব৷

অন্যদিকে, শুভেন্দুকে নিয়ে দলের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে। ভোটে ভাল ফল না হওয়ায় শুভেন্দুকে দায়ি করেছেন রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ। তার পরেও শুভেন্দুকে বিরোধী নেতা করায় ক্ষুব্ধ আদি বিজেপি৷ দলের একাংশ শুভেন্দু অধিকারীর ওপর অসন্তুষ্ট। কারণ একের পর এক চুরি, প্রতারণার মামলায় ইতিমধ্যেই নাম জড়িয়েছে তাঁর। যাঁকে রাজ্যের প্রধান বিরোধী মুখ হিসাবে তুলে ধরতে চাইছে গেরুয়া শিবির, তাঁর নামেই চুরির অভিযোগ আসায় দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে৷ সেক্ষেত্রে বিরোধী দলনেতার পদ থেকে আপাতত শুভেন্দুকে সরানোর প্রস্তাবও দলকে দিয়েছে এই অংশ৷

সব মিলিয়ে দিল্লি-সফর নিয়ে শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠ শিবির যে কথাই বলার চেষ্টা করুক, প্রকৃত কারণ আরও গভীরে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷

Advt