রাজধানীর রাজনীতিতে তুমুল জল্পনা, অপসারিত হচ্ছেন বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়৷

দিল্লির বিজেপি টের পাচ্ছে, ধনকড়ের কার্যকলাপে আখেরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলায় দলীয় সংগঠন৷ ধনকড়ের বাড়াবাড়িতে বিরোধী দলগুলিই শুধু নয়, পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষও তিতিবিরক্ত৷ ২০২৪-এ লোকসভা নির্বাচন৷ মোদির ভোট৷ বাংলায় বিজেপি একুশের ভোটের পর এমনিতেই কোনঠাসা হয়ে আছে৷ তার উপর রাজ্যপালের অতিসক্রিয়তার প্রভাব পড়ছে বিজেপির উপর৷ রাজ্যের মানুষ খোলাখুলি বলছেন, ‘রাজ্যপাল নন, ধনকড় বিজেপির রাজ্য সভাপতির আচরণ করছেন’৷ বিজেপি হাই কম্যাণ্ড লোকসভা ভোটের আগে এই ঝুঁকি নিতে নারাজ৷ এ সবের ভিত্তিতেই রাজধানীতে জোর জল্পনা, অপসারিত হচ্ছেন জগদীপ ধনকড়৷

ওদিকে ধনকড়ের বদলি কে হবেন, সেই নামও ভেসে উঠেছে৷ এখনও পর্যন্ত সবই জল্পনার স্তরে হলেও বিজেপি সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় সরকার সরাসরি মুখ না খুললেও সূত্রের খবর, পরিবর্ত তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান। আরিফ সংখ্যালঘু এবং নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে। আর সেই কারণেই বাংলা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে আরিফের মাধ্যমে বড় বার্তা দিতে চায় কেন্দ্র। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার দিক থেকেও ধনকড়ের তুলনায় অনেক বেশি দক্ষ আরিফ। রাজীব গান্ধীর আমলের এই কংগ্রেস নেতা শাহবানু-ইস্যুতে দল ছাড়েন৷ রাজনৈতিক জীবন
ভারতীয় ক্রান্তি দল থেকে শুরু করলেও এর পর একে একে জাতীয় কংগ্রেস, জনতা দল, বহুজন সমাজ পার্টি ঘুরে সবশেষে, ২০০৪ সালে বিজেপিতে যোগ দেন আরিফ মহম্মদ খান৷ কেন্দ্রীয় সরকারের পরামর্শে ২০১৯-এ তাঁকে কেরলের রাজ্যপাল করেন রাষ্ট্রপতি৷ জল্পনা চলছে, চরমপন্থী আরিফ মহম্মদ খান-ই না’কি ধনকড়ের স্থলাভিষিক্ত হবেন৷ গোটা বিষয়টি এখনও জল্পনার স্তরে থাকলেও দিল্লির ক্ষমতার করিডোরে জোর চর্চা চলছে বিষয়টি নিয়ে৷

এদিকে, তৃণমূল এতদিন যে সুরে রাজ্যপালকে ‘গেরুয়া-এজেন্ট’ বলতো, এখন সেই সুরে সুর মিলিয়েই একই মন্তব্য করেছেন
বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। বামফ্রন্টের বক্তব্য, ধনকড় ইচ্ছাকৃতভাবে লঙ্ঘন করছেন সাংবিধানিক সীমা৷ ফ্রন্ট শরিক সিপিআই আরও জোরালো ভাষায় বাংলার রাজ্যপালকে অপসারণ বা ‘Call Back’-এর দাবি তুলেছে। এই রাজ্যপালের ধারাবাহিক অসাংবিধানিক ভূমিকা নিয়ে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে৷ এই রাজ্যপালের অপসারণ চেয়ে বিধানসভায় প্রস্তাব আনার কথাও বিবেচনা করছে তৃণমূল৷ আর ঠিক তখনই বিমান বসুর এই মন্তব্য প্রতিবাদকে শক্তিশালী করেছে৷
বিজেপি বেশ বুঝতে পারছে, ধনকড়কে রাজ্যপাল পদে এর পরেও রাখা হলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্র ও রাজ্যের সম্পর্ক আরও খারাপ হবে এবং সব দায় কেন্দ্রের ঘাড়ে চাপবে৷ আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে এই ইস্যুতেই সব রহবিরোধী দল এককাট্টা হয়ে গেলে, গোটা দেশে বিজেপির ১০০ আসন পাওয়াও মুশকিল হবে৷

সে কারনেই ক্রমশ জোরদার হচ্ছে ধনকড়-অপসারণের জল্পনা৷
