বাড়ির ৪ জনকে খুনের পরে পিকনিক করেছিল আসিফ! তদন্তে উঠে আসছে রোমহর্ষক তথ্য

মালদহ কালিয়াচকের একই পরিবারের চার সদস্যকে খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে মূল অভিযুক্ত মহম্মদ আসিফ সম্পর্কে রোমহর্ষক সব তথ্য পাচ্ছে পুলিশ। তাতে আসিফ কৈশোর থেকেই অপরাধপ্রবণ বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অপহরণের নাটক সহ নানা কাণ্ড ঘটিয়ে টাকা আদায় করার ঘটনাও সামনে আসছে। দীর্ঘ সময় বেঙ্গালুরুতে গিয়ে কোথায় গা ঢাকা দিয়ে আসিফ ছিল সেটাও পুলিশ খতিয়ে দেখছে। বেআইনি অস্ত্রের কারবারের দুনিয়ায় আসিফের পা ফেলার বিষয়টিও পুলিশকে ভাবাচ্ছে। এমনকী, আসিফ জঙ্গিদলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে যুক্ত কি না সেটাও তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রয়োজনে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি আসিফকে জেরা করতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে।

শনিবার আসিফকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযোগ, সে তার বাবা-মা-বোন ও দিদাকে হত্যা করে দেহ গুম করেছিল। পরে তার দুই বন্ধুর কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। দুই বন্ধুও গ্রেফতার হয়েছে। পুলিশ আসিফকে ১২ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। তার দুই বন্ধুকে পাঁচদদিনের জন্য হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ। কীভাবে চারজনকে মেরেছিল আসিফ! দাদাই বা বাঁচল কীভাবে!

এক সপ্তাহ আগে বাড়িতে পিকনিক করেছিল আসিফ এবং তার দুই বন্ধু। যাদের ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের নাম হল সাবির আলি এবং মহম্মদ মাফুজ। দুজনের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে মোট ৫টি সেভেন এম এম পিস্তল, ৮০ রাউন্ড কার্তুজ ও ১০টি ম্যাগাজিন। দুজনকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, দিন সাতেক আগে আসিফ পিকনিক করেছিল বাড়িতে। গভীর রাত অবধি খাওয়াদাওয়া চলে। তার দুদিন পরে আসিফ দুই বন্ধুকে ডেকে পিস্তল, গুলি দিয়ে কয়েকদিন রাখার জন্য বলে। দুই বন্ধুর দাবি, তাঁদের পিস্তল দেওয়া হলে সেটা তারা এক আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে দেয়। যা পুলিশ উদ্ধার করেছে। কিন্তু, পিস্তল দেওয়া সত্ত্বেও তারা নিল কেন কিংবা বাড়ির লোককে না জানিয়ে অতবা পুলিশকে কেন বলেনি সেটাও স্পষ্ট নয়। এরা সকলে মিলে কোনও গ্যাং তৈরি করতে সক্রিয় ছিল কি না সেটা পুলিশ দেখছে।

ফেব্রুয়ারি মাসে আসিফ বাড়ির চারজনকে কীভাবে হত্যা করেছিল তা ইতিমধ্যেই পুলিশ জেনেছে। ঠান্ডা পানীয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে সকলকে আচ্ছন্ন করে ডিজিটাল ফটোগ্রাফির কথা বলে সকলকে গ্যারাজ ঘরে নিয়ে আগে থেকে তৈরি করে রাখা চৌবাচ্চায় ডুবিয়ে মেরেছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সেই সময়ে আসিফের দাদা আরিফকেও ডুবিয়ে মারার চেষ্টা হলেও শারীরিকভাবে বেশি শক্তসমর্থ হওয়ায় তিনি কোনমতে পালিয়ে যান বলে দাবি করেছেন পুলিশের কাছে। পরে আসিফ তাঁকে খুনের হুমকি দেওয়ায় তিনি দীর্ঘ সময় চুপ করেছিলেন বলে দাবি করেছেন পুলিশের সামনে। তবে তার দাবি পুলিশ পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেনি। সে জন্য তাঁকেও জেরা হচ্ছে।

তিন বছর আগে আসিফ নিজেকে অপহরণের নাটক ফেঁদে বাবার থেকে ৪ লক্ষ টাকা হাতিয়েছিল তদন্ত করতে নেমে পুলিশ এমন তথ্য পেয়েছে। পুলিশ জেনেছে, বছর তিনেক আগে আসিফ কয়েক বন্ধুকে সামিল করে নিজে গা ঢাকা দেয়। তার পরে সে বাবার কাছে ফোন করিয়ে তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে নাটক করে। মুক্তিপণ হিসেবে বাবার থেকে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় বলে পুলিশের সন্দেহ। সে যাত্রায় পুলিশের সন্দেহ হলেও আসিফের বিরুদ্ধে প্রমাণ এককাট্টা করতে পারেনি পুলিশ।

আরও পড়ুন-মিলখা সিং এর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসল পাকিস্তানেও

প্রতিবেশীদের জেরা করে পুলিশ জেনেছে, মাধ্যমিকের পরে আসিফ আচমকা এলাকা ছেড়ে চলে যায়। সে সময়ে দীর্ঘ কয়েক মাস আসিফ বেঙ্গালুরুতে ছিল। কোথায়, কী করছিল সে তা এখনও স্পষ্ট নয়। আসিফ কোনও অসামাজিক নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়েছিল বলে পুলিশের সন্দেহ। বাবা-মা-বোন-ঠাকুমাকে খুনের পরে বন্ধুদের নিজের ঘরে ঢুকতে দিত না আসিফ। চারজনকে খুনের তদন্তে নেমে পুলিশকে এটা খুব ভাচ্ছে যে আসিফের দাদা আরিফ কলকাতায় চুপ করে বসে থাকল কেন! যে বুঝতে পেরেছে আসিফ বাড়ির সকলকে খুন করেছে সে হুমকির ভয়ে চার মসের বেশি সময় ধরে চুপ করে থাকবে কেন? সেটাই পুলিশ বুঝতে পারছে না। আরিফ অবশ্য দাবি করেছে, সে ভয় পেয়েই এমন কাণ্ড করেছে। আরিফ চার মাসের মাথায় বাড়ি বিক্রি হবে খবর পেয়ে কেন পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাল সেই রহস্যও উন্মোচন হওয়া দরকার।

 

Previous articleবাবা-সন্তানের ভালোবাসার সম্পর্ক ফুটে উঠল গুগল ডুডলে
Next articleসিঙ্গুরে মন্ত্রী-বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে বজ্রাঘাতে ওলট-পালট পরিবারের পাশে “Safecon India”