Monday, May 19, 2025

চোলি কে পিছে কেয়া হ্যায়? কণাদ দাশগুপ্তর কলম

Date:

Share post:

কণাদ দাশগুপ্ত

জগদীপ ধনকড়ের আস্তিনে সম্ভবত বড় একটি ‘স্বপ্নের তাস’ লুকানো আছে৷ ওই তাস’ই স্টেরয়েডের মতো কাজ করছে৷ আর সেই গরমেই তিনি ক্লান্তিহীনভাবে এই ডাল-সেই ডাল করে বেড়াচ্ছেন৷

দিল্লি থেকে ফিরেই ‘বিশেষ কোনও মহলের’ নির্দেশে সোমবার ফের উত্তরবঙ্গ যাচ্ছেন৷ এই মুহুর্তে শিরোনামে আসা কাশ্মীরের রাজ্যপালও ধনকড়ের মতো এত ব্যস্ত নন৷ কিসের এত ব্যস্ততা? ‘চোলি কি পিছে কেয়া হ্যায়?’

বঙ্গ-বিজেপির ‘ডি-ফ্যাক্টো’ সভাপতি জগদীপ ধনকড় ১৯৮৯ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত লোকসভার সদস্য ছিলেন। বিশ্বনাথপ্রতাপ সিং প্রতিষ্ঠিত জনতা দলের টিকিটে তিনি রাজস্থানের ঝুনঝুনু কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন৷ চন্দ্রশেখর দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে ক্ষমতায় ছিলেন ১৯৯০ সালের ১০ নভেম্বর থেকে ১৯৯১ সালের ২১ জুন পর্যন্ত। তখনই ৭ মাস ১১দিনের জন্য কেন্দ্রের উপমন্ত্রী হন ধনকড়৷ ২০১৯ সালের ২০ জুলাই এই ধনকড়কেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসাবে নিয়োগ করা হয়৷ এই পদে তিনি শপথ নেন ওই বছরেরই ৩০ জুলাই৷

রাজ্যপালের মতো সাংবিধানিক পদে থাকলেও দিল্লি ও বাংলার শীর্ষ গেরুয়া নেতাদের মতো ধনকড়ও ১০০ শতাংশ নিশ্চিত ছিলেন, একুশের ভোটে বাংলার ক্ষমতা দখল করবে বিজেপি৷ প্রকাশ্যে এ ধরনের মন্তব্যও তিনি করেছিলেন৷ তবে গেরুয়া নেতাদের গর্জনের সঙ্গে ‘আসন-বর্ষণ’-এর তালমিল হয়নি৷ ফলে ভেঙে পড়েন ধনকড়৷ ‘স্বপ্ন’ প্রায় বিলীন হওয়ার মুখে৷ স্বপ্ন টিঁকিয়ে রাখতে অন্য স্কিম নিয়ে নেমে পড়লেন৷

সাধারণভাবে কোনও রাজ্যপালই নিজের সিদ্ধান্তে চলতে পারেন না৷ তাঁকে সংবিধান মানতে হয়, রাষ্ট্রপতির নির্দেশ মানতে হয়, কেন্দ্রীয় সরকারের, বিশেষত প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে চলতে হয়৷ কোনও রাজ্যপালকে যদি দেখা যায়, স্বাভাবিক ছন্দে কাজ করার পরিবর্তে অতি সক্রিয়তা প্রদর্শন করছেন, তাহলে বুঝতে অসুবিধা হয় না, এই তিন পক্ষের কোনও এক পক্ষ অথবা তিনপক্ষই ওই রাজ্যপালকে অতি-সক্রিয় হতে নির্দেশ বা সবুজ সংকেত দিয়েছে৷ ধনকড়ের অতি সক্রিয়তার ক্ষেত্রে এমন ধারনা তৈরি হওয়া অবাস্তব কিছু নয়৷

বাংলা থেকে উত্তরবঙ্গকে বাদ দেওয়ার দাবি তুলেছেন বিজেপি সাংসদ জন বার্লা৷ এই দাবি ওই সাংসদ নিজস্ব সিদ্ধান্তে করেছেন, এমন হতেই পারেনা৷ তাই যদি হতো, তাহলে বিজেপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এতদিনে তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে সতর্ক করতো৷ রাজ্য বিজেপির নেতারা দায় এড়িয়ে শুধু বলছেন, ‘এটা বিজেপির কথা নয়, ওই সাংসদ নিজের কথা বলেছেন৷’ রাজ্য ভাগ করার মতো দাবি তুলেছেন দলের এক সাংসদ, আর গোটা দল তা ‘এনজয়’ করছে, এমন ছবি কেন স্পষ্ট হচ্ছে ? বিজেপি-শাসিত কোনও রাজ্যে বিরোধী পক্ষের কোনও সাংসদ সেই রাজ্য ভাগের দাবি তুললে তো তাঁর গায়ে ‘দেশদ্রোহী’ তকমা সাঁটিয়ে এতক্ষণে ফাটকে পুরতো সরকার৷ আর এখানে কী হচ্ছে ? যখন উত্তরবঙ্গকে আলাদা করার ধুয়ো তোলা হচ্ছে, এই আওয়াজ ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে, পক্ষে-বিপক্ষে বাকযুদ্ধ চলছে, যে কোনও মুহুর্তে সাংসদের এই আওয়াজ উত্তরবঙ্গকে অগ্নিগর্ভ করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, তখনই রাজ্যপাল জানালেন, তিনি উত্তরবঙ্গ যাবেন৷ দুই আর দুই-এ চার-এর অঙ্ক এটা নয়৷ ‘বিশেষ’ নির্দেশপ্রাপ্ত হয়েই এই সফর, রাজনৈতিক মহলে এমনই কিছু গুঞ্জন ভেসে বেড়াচ্ছে৷ প্রশ্ন উঠছেই, এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ ধনকড়ের এই ‘মিশন-উত্তরবঙ্গ’ কেন?

কেন এত দৌড়ঝাঁপ করছেন ধনকড়? এমন প্রশ্ন এখন বড় ভাবেই দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক মহলে৷ অনেকের মতে, বাংলায় রাষ্ট্রপতি-শাসন জারি করে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিতে চান ধনকড়৷ এটাই তাঁর স্বপ্ন৷ প্রশাসনিক ক্ষমতা বলতে জীবনে একবারই ৭ মাস ১১ দিনের জন্য মন্ত্রী হয়েছিলেন৷ একটা খিদে রয়ে গিয়েছে৷ আমন্ত্রিত হয়ে গট গট করে সামনে দরজা দিয়ে ঢুকে নেমন্তন্ন খাওয়ার সুযোগ এ জীবনে আর পাবেন কি’না সন্দেহ৷ তাই খিদে মেটাতে বাড়ির পিছনের পাঁচিল টপকে জানালা দিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে ভালোমন্দ খাওয়ার ইচ্ছা হয়েছে ওনার৷ তাই এতো উচাটন চিত্তে ডিউটি করছেন তিনি৷

এই ব্যাখ্যা উড়িয়ে দেওয়া যায়না ঠিকই, তবে ‘এইটুকু’-র জন্য এই বয়সে এত খাটা-খাটনি তিনি করছেন বলে মনে হয়না৷ ধনকড়ের স্বপ্ন আরও চওড়া বলেই মনে হয়৷

রামনাথ কোবিন্দ দেশের ১৪-তম রাষ্ট্রপতি’র দায়িত্ব নিয়েছেন ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই৷ তাঁর মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২২-এর জুলাই-এ৷ মাত্র বছরখানেক পর৷ রাজনীতিতে ‘অখ্যাত’ রামনাথ কোবিন্দকে যদি বিজেপি’র শীর্ষমহল রাষ্ট্রপতি পদে আনতে পারে, তাহলে ধনকড় সাহেবও এই চান্স নিতে পারেন৷

আর যদি উপ-রাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডুকে রাষ্ট্রপতি পদে বিজেপি নিজেদের ক্যাণ্ডিডেট করে, তাহলে উপ- রাষ্ট্রপতি পদেও আপত্তি নেই ধনকড়ের৷ বেঙ্কাইয়ার মেয়াদ শেষ হবে ২০২২- এর ১০ আগস্ট৷ তাহলেও বেশি সময় নেই ওনার হাতে৷

এখনও যদি শাসক দলের কথায় ধনকড়সাহেব ওঠাবসা না করেন, তাহলে রাইসিনা পাহাড়ে ওঠার স্বপ্ন পূরণ হবে কীভাবে ?

কে জানে, চোলির পিছনে এমন তাস -ই পুঁটুলিতে রেখেছেন কি’না !!

আরও পড়ুন- সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে না গণটিকাকরণ, জানিয়ে দিল রাজ্য

 

spot_img

Related articles

ভারতীয় সেনার তৎপরতা – সাহসিকতা! ভেস্তে গেল স্বর্ণমন্দিরে পাকিস্তানের হামলার চক্রান্ত

ভারতীয় সেনার তৎপরতা ও সাহসিকতায় রক্ষা পেল পবিত্র ধর্মস্থান স্বর্ণমন্দির। স্বর্ণমন্দিরকে লক্ষ্য করে পাকিস্তানের ছোড়া একের পর এক...

ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে জটিলতা! যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আপাতত স্থগিত ভর্তিপ্রক্রিয়া

ওবিসি সংরক্ষণ সংক্রান্ত মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন থাকায় চলতি শিক্ষাবর্ষে উচ্চশিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে নানা জটিলতা। সেই...

রানিগঞ্জ কয়লাখনি অঞ্চলে পুনর্বাসন প্রকল্পে জোরদার অগ্রগতি, ৫০% ফ্ল্যাট নির্মাণ সম্পূর্ণ

রানিগঞ্জ কয়লাখনি অঞ্চলে আগুন ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে গৃহায়ন দফতরের বিশাল আবাসন প্রকল্প জোরকদমে এগোচ্ছে। ২০২৪-২৫...

নিরাপত্তারক্ষী পুলিশের কনস্টেবলকে লক্ষ্য করে গুলি! নদিয়ায় ৩টি আগ্নেয়াস্ত্র-সহ ধৃত তৃণমূল নেতা

ঘুমোতে যাওয়া নিয়ে বচসা। তার জেরে নিজেরই নিরাপত্তারক্ষীকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল নেতা সেজাজুল হক...