আলাদা রাজ্যের দাবি তোলা কি অপরাধ? সংবিধান কী বলছে!

আইন অনুযায়ী, আলাদা রাজ্যের দাবি তোলাটা সংবিধান বিরোধী নয়। দেশে এখন আরও ২০টি রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন চলছে।

বর্তমানে দেশের নানা এলাকায় নতুন রাজ্য গঠনের দাবিতে আন্দোলন চলছে। যেমন, মহারাষ্ট্র ভেঙে বিদর্ভ গঠনের দাবি উঠেছে। গুজরাত ভেঙে সৌরাষ্ট্রের মতো রাজ্য গড়ার দাবিতেও আন্দোলন চলছে। আলাদা কার্বিল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলন চলছে কার্বি আংলংয়ে। পশ্চিমবঙ্গে নতুন তিনটি রাজ্য গঠনের দাবি রয়েছে।
একদিকে গোর্খাল্যান্ড ও অন্যদিকে ঝাড়খণ্ড লাগোয়া এলাকায় জঙ্গলমহল গঠনের দাবি উঠেছে (ঝাড়খণ্ডে অন্তর্ভুক্তির দাবি অবশ্য অনেক আগেই পুরুলিয়া-বাঁকুড়ায় উঠেছে)। সংযোজিত হয়েছে আলাদা উত্তরবঙ্গের দাবি। বিহার ও ঝাড়খণ্ডের বাছাই এলাকা নিয়ে মিথিলাঞ্চল গড়ার দাবিতেও আন্দোলন চলছে। বিহার-উত্তরপ্রদেশ-ছত্তিশগড়ের এলাকা নিয়ে ভোজপুর রাজ্য তৈরির দাবিও রয়েছে। ওড়িশা-ঝাড়খণ্ড-ছত্তিশগড়ের বাছাই এলাকা নিয়ে কোশল রাজ্য গড়ার দাবিতেও আন্দোলন চলছে। অসমের কিছু অংশ নিয়ে বড়োল্যান্ড গড়ার দাবি রয়েছে। রয়েছে কার্বিল্যান্ড, পূর্ব নাগাল্যান্ড, কুকিল্যান্ডের মতো রাজ্য গড়ার দাবিও।

তামিলনাড়ু-কেরল-কর্নাটকের এলাকা নিয়ে কঙ্গুনাড়ু নামে একটি রাজ্যের দাবিতে জনমত দানা বাঁধছে। কর্নাটক-কেরলের এলাকা নিয়ে তুলুনাড়ু তৈরির দাবি উঠেছে। কর্নাটক ভেঙে আলাদা কুর্গ রাজ্যের দাবিও রয়েছে। উত্তরপ্রদেশ-মধ্যপ্রদেশ-রাজস্থানের এলাকা নিয়ে ব্রজপ্রদেশ গঠনের দাবিতেও আন্দোলন চলছে।
এই সব দাবি মানা হলে মোট কত রাজ্য হতে পারে! এখন ভারতে রাজ্যের যা সংখ্যা তাতে নতুন দাবি মেনে রাজ্যগুলি তৈরি হলে গোটা দেশে রাজ্যের সংখ্যা ৫০টি ছাড়িয়ে যাবে।

কীভাবে নতুন রাজ্য গঠন হয়!

ভারতীয় সংবিধানে ৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, নতুন রাজ্য গঠনের ক্ষেত্রে, কোনও রাজ্যের সীমানা বাড়ানো, কমানোর ক্ষেত্রে কিংবা নাম বদলানোর ক্ষেত্রে দেশের পার্লামেন্ট মানে সংসদই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকারী। একটি রাজ্যের সঙ্গে আরেকটি রাজ্যের অংশ জুড়ে দেওয়া বা নতুন রাজ্য গঠন কিংবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরির ক্ষেত্রেও সংসদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

কীভাবে পার্লামেন্ট বা সংসদ তা করতে পারেঃ

ক) একটি রাজ্যকে ভেঙে দুটি রাজ্য গড়তে পারে অথবা দুটি বা তিনটি রাজ্যের অংশ নিয়ে আরেকটি রাজ্য গড়তে পারে অথবা দুটি রাজ্যকে জুড়তে পারে।
খ) কোনও রাজ্যের সীমানা বাড়াতে পারে
গ) কোনও রাজ্যের এলাকা কমিয়ে দিতে পারে
ঘ) যে কোনও রাজ্যের চৌহদ্দি পাল্টাতে পারে
ঙ) কোনও রাজ্যের নাম পাল্টাতে পারে

নতুন রাজ্য গঠনের ক্ষেত্রে কি রাজ্যের মতামত নিতে হবে?

কোনও রাজ্য বিধানসভায় আলাদা রাজ্য গঠনের বিল পাস করে কেন্দ্রের কাছে পাঠালে কেন্দ্র তা নিয়ে পদক্ষেপ করবে। আবার কেন্দ্র কোনও রাজ্য গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। সে ক্ষেত্রে সংবিধানে স্পষ্ট বলা রয়েছে, নতুন রাজ্য গঠনের বিল রাষ্ট্রপতিকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মতামত নেওয়ার জন্য পাঠাতে হবে। রাষ্ট্রপতি বিলটি সংশ্লিষ্ট রাজ্যের কাছে পাঠানোর সময়ে কবের মধ্যে মতামত পাঠাতে হবে তা নির্দিষ্ট করে দেবেন। সেই সময়সীমা বাড়ানোর আর্জি পেলে তা মঞ্জুর করবেন কি না সেটা রাষ্ট্রপতির উপরে নির্ভর করবে।

রাজ্য যদি নির্দিষ্ট সময়ে মতামত না দেয় কী হবে

সংবিধানে বলা রয়েছে, রাজ্যের মতামত না পেলেও বিল কার্যকর করা যাবে। রাষ্ট্রপতির পাঠানো বিল পাওযার পরে রাজ্য আপত্তি জানিয়ে মতামত দিতে পারে। রাজ্য ভেঙে নতুন রাজ্য গঠনে আপত্তি করতে পারে। সে ক্ষেত্রে কী হবে! সংবিধানে অবশ্য সংশ্লিষ্ট রাজ্যের আপত্তি থাকলে নতুন রাজ্য তৈরির বিল বাতিল হবে বলে কোনও কিছু স্পষ্টভাবে লেখা নেই। বরং, সংবিধানে বলা হয়েছে, রাজ্য যা মতামত দিক, নতুন রাজ্য গঠনের ব্যাপারে সংসদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

একটা দৃষ্টান্ত দেওয়া যাকঃ

হরিদ্বারকে উত্তরপ্রদেশ থেকে আলাদা করে নবগঠিত উত্তরাখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করার বিল পেশ হয়েছিল সংসদে। বিধি মেনে সেই বিল রাষ্ট্রপতি উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন মতামত গ্রহণের জন্য। উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় হরিদ্বারকে উত্তরাখণ্ডে অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করা হয়। তার পরে সেই আপত্তির কথা জানিয়ে বিলটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়। সংসদে কিন্তু হরিদ্বারকে উত্তরাখণ্ডের অন্তর্ভুক্তির বিল পাশ হয়ে যায়।
এটা নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে মামলা হয়। উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে সর্বোচ্চ আদালত রায়ে যা বলেছে তার মর্মার্থ হল, নতুন রাজ্য গঠনের বিলের ক্ষেত্রে পার্লামেন্টের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তবে ওই বিলের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মতামত নেওয়াটা বাধ্যতামূলক হলেও সেই মতামত পালার্মেন্টকে মানতে হবে তা সংবিধানে বলা নেই।

আরও পড়ুন- প্রবল চাপে নার্ভ ফেল করে সাংবাদিকের চ্যানেলকে ‘চটি চাঁটা’ বলে ক্ষোভের মুখে শুভেন্দু

Previous articleপ্রবল চাপে নার্ভ ফেল করে সাংবাদিকের চ্যানেলকে ‘চটি চাঁটা’ বলে ক্ষোভের মুখে শুভেন্দু
Next articleব্রেকফাস্ট নিউজ