নৈতিক কারণে ইস্তফা দিন ধনকড়’, ফেসবুকে দাবি সেই বিনীত নারায়ণের

কণাদ দাশগুপ্ত

জৈন-হাওলা মামলার প্রসঙ্গ সামনে এনে এবার সরাসরি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের পদত্যাগ চাইলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক বিনীত নারায়ণ। প্রসঙ্গত, এই বিনীত নারায়ণই প্রথম জৈন হাওয়ালা কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশ্যে আনেন। শীর্ষ আদালতে মামলাও করেন৷

সাংবাদিক বিনীত নারায়ণ

সাংবাদিক তথা সমাজকর্মী বিনীত নারায়ণ এক ফেসবুক পোস্টে দাবি করেছেন, কুখ্যাত জৈন হাওলা ডায়েরিতে জগদীপ ধনকড়ের নাম রয়েছে। তিনি ৫ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার দুর্নীতিতে জড়িত৷

বিনীত নারায়ণের টুইট

বিনীত নারায়ণ দাবি করেছেন, “১৯৯৩ সাল থেকে আমি এই দুর্নীতি এবং এই মামলা নিয়ে লড়ে যাচ্ছি৷ কারণ একটাই, এই কেলেঙ্কারি সন্ত্রাসবাদ, দুর্নীতি ও হাওলা লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত। দুর্ভাগ্যবশত, আজ পর্যন্ত কোনও রাজনীতিক, রাজনৈতিক দল বা সামাজিক সংগঠন হাওলা- দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়নি”। জৈন-হাওলা কাণ্ড ফের সামনে আনার জন্য বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদও জানান তিনি।

গত সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, “জৈন- হাওলা মামলার চার্জশিটে নাম রয়েছে জগদীপ ধনকড়ের। এই রাজ্যপাল দুর্নীতিগ্রস্ত।” মমতা বলেন, “সেই সময়ের এক সাংবাদিক আমাকে সব রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। সেখানেই দেখেছি, জৈন-হাওলা মামলায় বাংলার বর্তমান রাজ্যপালের নামও ছিল। আদালতে গিয়ে নিজের নাম সরিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও একটি রিট পিটিশন পড়ে রয়েছে। তাতে ওঁর নাম রয়েছে।” কিছুক্ষণের মধ্যেই এই অভিযোগের উত্তর দিয়ে রাজ্যপাল পাল্টা বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর কথার কোনও ভিত্তি নেই’।

ওদিকে জৈন-হাওলা কাণ্ড প্রকাশ্যে যিনি এনেছিলেন, সেই সাংবাদিক বিনীত নারায়ণ এদিন জোরালো দাবি করেছেন, “এই হাওলা কাণ্ডে জগদীপ ধনকড় যুক্ত৷ এখনই ধনকড়ের রাজ্যপাল পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া উচিত৷”

সুরেন্দ্র জৈন ও জগদীপ ধনকড়

প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালে কাশ্মীরের জঙ্গি আসফাক হুসেন লোন-কে গ্রেফতার করার পরেই জৈন-হাওলা দুর্নীতি সামনে আসে। আসফাক ছিলেন হিজবুল মুজাহিদিনের সদস্য। দিল্লিতে তাঁকে টানা জেরা করে জানা যায়, ব্যবসায়ী সুরেন্দ্র কুমার জৈন এবং তার পরিবার মারফত হিজবুলের কাছে নিয়মিত অর্থ সাহায্য যেত। আসফাকের এই চাঞ্চল্যকর বয়ানের ভিত্তিতে সুরেন্দ্র জৈনের বাড়ি, দফতর এবং আত্মীয়দের বাড়িতে CBI তল্লাশি চালায়৷ ওই তল্লাশিতে বিপুল বিদেশি টাকা, দুটি ডায়েরি, একাধিক নোটবুক উদ্ধার হয়। ডায়েরিতে বেশ কিছু প্রভাবশালী রাজনীতিক এবং আমলার নামের আদ্যক্ষর পাওয়া যায়৷ এরা প্রত্যেকেই হাওলা-কাণ্ডে জড়িত বলে দাবি করেন বিনীত নারায়ণ৷ শীর্ষ আদালতে মামলা করে তথ্যপ্রমাণও পেশ করেন তিনি৷ সেই তালিকাতেই বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের নাম ছিলো বলেও দাবি করেন বিনীত নারায়ণ৷
সেই কারণেই এবার ধনকড়ের ইস্তফা চাইলেন তিনি৷

জৈন-ডায়েরির পাতা

*জৈন-হাওলা-কাণ্ড*

◾১৯৯১ সালে কাশ্মীরি জঙ্গি আসফাক হুসেন লোনের গ্রেফতারির পর এই জৈন হাওলা- কাণ্ড সামনে আসে।

◾তদন্তে জানা যায়, আসফাক হিজবুল মুজাহিদিনের সদস্য।

◾দিল্লিতে এনে আসফাক হুসেন লোন’কে জেরা করে জানা যায়, ব্যবসায়ী সুরেন্দ্রকুমার জৈন এবং তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মাধ্যমে হিজবুলের কাছে অর্থ সাহায্য যেত।

◾আসফাকের বয়ানে ভিত্তি করে সুরেন্দ্র জৈন, তাঁর দফতর এবং আত্মীয়দের বাড়িতে CBI তল্লাশি চালায়৷

◾ ওই তল্লাশিতে বিদেশি মুদ্রা, দু’টি ডায়েরি, একগুচ্ছ নোটবুক উদ্ধার হয়।

◾ডায়েরিতে জাতীয়স্তরের বেশ কিছু প্রভাবশালী রাজনীতিক এবং শীর্ষস্তরের কিছু আমলার নামের আদ্যাক্ষর পাওয়া যায়, যাঁদের কাছ থেকে সুরেন্দ্র মারফত হিজবুলের কাছে টাকা যায়।

◾এই অভিযোগের ভিত্তিতে CBI চার্জশিট দায়ের করে৷

◾কিন্তু কিছুদিন পরই সেই তদন্ত থেমে যায়।

◾ডায়েরিতে নাম থাকা ব্যক্তিদের পাশাপাশি জৈনদের বিরুদ্ধেও তদন্ত থেমে যায় মাঝপথে।

◾তদন্ত থমকে যাওয়ার পাশাপাশি ওই মামলার তদন্তকারী CBI অফিসারদেরই এক এক করে বদলি করা হয়।

◾কিন্তু ১৯৯৩ সালে জনস্বার্থ আইন মেনে সুপ্রিম কোর্টে ফের এ নিয়ে মামলা রুজু হয়৷

◾এই মামলার হলফনামায় তদন্তকারী সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তোলা হয়৷

◾১৯৯৭ সালে এই অভিযোগের ভিত্তিতেই CBI ডিরেক্টরকে ২ বছরের আগে পদ থেকে সরানো যাবে না বলে রায় ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট।

◾তবে বাস্তব এটাই, এই ২০২১ সালেও হাওলা-কাণ্ডের নিষ্পত্তি হয়নি।

◾সেই মামলায় বার বার ধনকড়ের নাম উঠেছে।

◾সেই সময় জনতা দলের সাংসদ ছিলেন জগদীপ ধনকড়।

◾বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং যখন প্রধানমন্ত্রী হন, সেই সময় কেন্দ্রে সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীও হন এই ধনকড়৷ যদিও সেই সরকার ক্ষমতায় ছিলো ৭ মাস৷

◾পরবর্তী কালে বিজেপি-তে যোগ দেন জগদীপ ধনকড়।

◾গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, সুরেন্দ্রর বাড়িতে উদ্ধার হওয়া নোটবুকে’ ধনকড়’ বলে একজনের নাম ছিল।

◾ সেই ধনকড় এই ধনকড় কি না, তা বলতে পারেন খোদ জগদীপ ধনকড় এবং মামলাকারী সাংবাদিক বিনীত নারায়ণ৷

◾বিনীত নারায়ণ আজও দাবি করছেন, সুরেন্দ্র জৈনের ডায়েরিতে থাকা ধনকড়-ই এখন বাংলার রাজ্যপাল ৷

⬛ আর সে কারণেই এবার ‘নৈতিক কারণে’ বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের ইস্তফা দাবি করেছেন সাংবাদিক বিনীত নারায়ণ৷

আরও পড়ুন- ‘রাজ্যপালের ভাষণ সম্প্রচার বন্ধ হওয়া জরুরি অবস্থা শামিল’, স্পিকারকে চিঠি ধনকড়ের

Previous articleসিকিম ও ভুটানে প্রবল বৃষ্টি, তিস্তা-জলঢাকায় হলুদ সর্তকতা জারি
Next articleকোউইনের মাধ্যমেই টিকা কিনতে হবে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে, নির্দেশিকা কেন্দ্রের