“মোদিবাবু, পেট্রোল বেকাবু”! জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে সরব কুণাল থেকে পার্থ-ব্রাত্য

টিম ইন্ডিয়ার বিভিন্ন কোচের আমলে সচিন-সৌরভ-ধোনি-কোহলিদের সেঞ্চুরি দেখতে অভ্যস্ত দেশবাসী। এবং তা সকলের কাছেই খুব সুখের অনুভূতি।

এবার পেট্রোলের দামের সেঞ্চুরি দেখছেন প্রতিটি ভারতবাসী। মুম্বই, দিল্লি থেকে শুরু করে একের পর এক শহর ও রাজ্যে সেঞ্চুরি হাঁকছে পেট্রোল। বাংলার বুকেও সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছে মহার্ঘ্য পেট্রোল। যোগ্য পার্টনার হিসেবে ঠিক পিছনেই রয়েছে ডিজেল। হেঁসেলে আগুন ধরিয়ে বাড়ছে গ্যাসের দামও। তবে এই অনুভূতি দেশবাসীর কাছে একেবারেই সচিন-কোহলিদের সেঞ্চুরির মতো নয়, বরং তার ঠিক উল্টো। নেটিজেনরা বলছেন, যেভাবে একের পর এক রাজ্য ও শহরে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে চলেছে পেট্রোল, তাতে “কোচ” হিসেবে নরেন্দ্র মোদির একশো শতাংশ সফল।

করোনা মোকাবিলায় লকডাউন ও বিধি-নিষেধের জেরে কর্মহীন বহু মানুষ। কেউ চাকরি হারিয়েছেন তো কারও ব্যবসা বন্ধ হয়েছে। একদিকে জ্বালানির দাম, অন্যদিকে গ্যাসের দাম এভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় শাকসবজি থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। যার জেরে সমস্যায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ। বাজারে গেলেই হাতে ছ্যাকা লাগছে সাধারণ মধ্যবিত্তর। লাগাতার জ্বালানির দাম বৃদ্ধি নিয়ে কেন্দ্রকে নিশানা করেছে তৃণমূল-সহ সমস্ত বিরোধী দল। তবে দাম কবে কমবে তার কোনও নিশ্চিত উত্তর নেই। আদৌ জ্বালানির দামে লাগাম পড়বে কিনা, তা নিয়েও সংশয়।

সব মিলিয়ে পেট্রোল-ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে ত্রাহি ত্রাহি রব মধ্যবিত্তের। কয়েক সপ্তাহ আগেই বাণিজ্যনগরী মুম্বই, ভোপালের মতো শহরে পেট্রলের দাম ছুঁয়েছিল ১০০ টাকা প্রতি লিটার। বেশিদিন অপেক্ষা করতে হল না, এবার শহর কলকাতাতেও পেট্রোলের দাম প্রবল বেগে চড়তে শুরু করে পৌঁছে গেল একদম সেঞ্চুরির দোরগোড়ায়। ইতিমধ্যেই বাংলার বেশকিছু জেলায় পেট্রলের দাম সেঞ্চুরি পেরিয়েও গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারকে বিঁধছেন বিরোধী নেতারা। তৃণমূল নেতৃত্বই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি সরব। শুধু তাই নয়, এবার তৃণমূল নেতৃত্ব নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণের জন্য বেছে নিলেন অদ্ভূত এক ট্যাগলাইনও।

তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ তাঁর টুইটে কটাক্ষর সুরে লেখেন, “বাংলা ও বাঙালি বিরোধী কাজকর্ম থেকে এবার একটু বিরতি নিন। বরং, গোলাপ হাতে পেট্রোল পাম্পগুলিতে যান এবং ক্রেতা-উপভোক্তাদের হাতে সেগুলি তুলে দিয়ে দামবৃদ্ধির জন্য সেলিব্রেট করুন। এরপর ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়া সহকারে সেগুলি নিজেরা টুইট করুন।” এই টুইট রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষকে ট্যাগ করেন কুণাল। একইসঙ্গে তিনিও লেখেন, “হ্যাজ ট্যাগ মোদি বাবু, পেট্রল বেকাবু”। কুণাল ঘোষ জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে তাঁর অপর একটি টুইটে কেন্দ্রের জনবিরোধী কাজকর্মের কড়া সমালোচনাও করেন। বিজেপি নেতাদের উদ্ভট বিবৃতি ও কুৎসিত রাজনীতি নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলে দেন। কেন্দ্রের সরকারের কাছ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত আর কী কী বিস্ময়কর ব্যাপার -স্যাপার দেখতে হবে দেশবাসীকে, তা নিয়েও কটাক্ষ ছুঁড়ে দেন তৃণমূল রাজ্য সাধারণ সম্পাদক।

এদিকে, ট্যুইটারে রবিবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় গত বছর পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে করা তাঁর একটি পুরনো ট্যুইটকে এনে লিখেছেন, ”বিজেপি সরকারের আমলে ঐতিহাসিকভাবে বেড়েছে জ্বালানির দাম। কিন্তু তাঁরা অদম্য চেষ্টা করে তাঁরা মানুষের উপর বোঝাও বাড়িয়ে চলেছেন। ২০২০ সালের থেকে কিছু পরিবর্তন হয়নি। মানুষ যখন এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চাইছে, বিজেপি তখন সেই অন্যকে দোষারোপ করার খেলায় মেতে আছে।” এরপরই ট্যাগলাইনে অভিষেকও লেখেন, ”মোদি বাবু, পেট্রল বেকাবু”।

প্রসঙ্গত, তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের অধিকাংশই এই ট্যাগেই ট্যুইটে আক্রমণ শানাচ্ছেন বিজেপির উদ্দেশ্যে। তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় লেখেন, ”নরেন্দ্র মোদির নাটক দেখতে দেখতে মানুষ ক্লান্ত। এখন আকাশছোঁয়া পেট্রলের দাম, কিন্তু তিনি এখন লুকিয়ে আছেন। হয়ত আরেকটা বড় মিথ্যের ভাষণ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।”

একই পথে হেঁটে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জ্বালানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির জন্য মোদি সরকারের নিন্দা করে টুইট করেন। মহামারি আবহে পেট্রোল-ডিজেলের লাগাতার মূল্যবৃদ্ধির জন্য দেশের গরিব মানুষের অবস্থা আরও দুর্গতির দিয়ে এগোচ্ছে বলেই মনে করেন ব্রাত্য বসু।

প্রসঙ্গত, আজ, রবিবার কলকাতায় পেট্রোলের দাম বেড়েছে ৪১ পয়সা। ফলে ১ লিটার পেট্রোলের দাম শহরে ৯৯ টাকা ৪৫ পয়সা। অর্থাৎ, তিলোত্তমায় সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৫৫ পয়সা দূরে পেট্রোল। ডিজেলের দাম লিটার প্রতি শহরে বেড়েছে ২৪ পয়সা। ফলে কলকাতায় ১ লিটার ডিজেলের দাম হয়েছে ৯২ টাকা ২৭ পয়সা। ইতিমধ্যে অবশ্য কলকাতাকে পিছনে ফেলে রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায় সেঞ্চুরি পার করে ফেলেছে পেট্রোল। গতকাল, দার্জিলিঙে পেট্রোলের দাম ছিল লিটারপ্রতি ১০০ টাকা ৪৮ পয়সা। আলিপুরদুয়ারে সেই দাম ছিল ১০০ টাকা ১০ পয়সা। কোচবিহার, পুরুলিয়া, নদীয়ার মতো একাধিক জায়গাতেও পেট্রল শতাধিক মূল্যে বিক্রি হয়েছে।

আরও পড়ুন:প্রয়াত প্রাক্তন বিধায়ক সুলতান সিং, শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর

 

Previous articleকুমোরটুলি থেকে জার্মানি ও আমেরিকায় পাড়ি দিল দুর্গা প্রতিমা
Next articleদেশের অংশ বাদ দিয়ে ভারতের ম্যাপ! মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগেই বিতর্কে পুষ্কর