দেশে যে আইনই নেই, সেই আইনে কীভাবে FIR ? কেন্দ্রকে নোটিশ ক্ষুব্ধ সুপ্রিম কোর্টের

কেন্দ্রের একটি আইনমন্ত্রক আছে, আইনমন্ত্রী আছেন, অ্যাটর্নি জেনারেল, সলিসিটর জেনারেল আছেন৷ তবুও কেন্দ্র জানেনা, দেশের কোন কোন আইন খারিজ হয়েছে, কোন আইনের ভিত্তিতে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা বেআইনি৷

কিন্তু এমনই হয়েছে৷ বেশ কয়েক বছর আগেই খারিজ হয়ে গিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬- এ ধারা। কিন্তু তারপরও ওই ধারা ব্যবহার করে, প্রয়োগ করে কেন্দ্র ১১টি রাজ্যে ৭৪৫ টি মামলা চালিয়ে যাচ্ছে৷ বাতিল হওয়া এই ধারার ব্যবহার নিয়ে এবার ক্ষোভ প্রকাশ করলো সুপ্রিম কোর্ট। শুধু ক্ষোভপ্রকাশ করাই নয়, কেন্দ্রকে নোটিশ দিয়ে এ বিষয়ে বক্তব্য তলব করেছে সুপ্রিম কোর্ট। বাতিল হওয়া আইনি ধারা খারিজের পরও এর প্রয়োগ খুবই বিরক্তিকর বলে মন্তব্য করেছে শীর্ষ আদালত।

পিইউসিএলের বেশ কয়েক বছর আগেই খারিজ হয়ে গিয়েছিল তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬ এ ধারা। কিন্তু তারপরও ওই ধারার ব্যবহার নিয়ে কেন্দ্রকে নোটিশ সুপ্রিম কোর্টের। ওই ধারার ব্যবহার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। ওই ধারা খারিজের রায়ের পরও এর প্রয়োগ খুবই বিরক্তিকর বলে মন্তব্য আদালতের।

মানবাধিকার সংগঠন PUCL বা People’s Union for Civil Liberties- এর দায়ের করা মামলার হলফনামায় এই বেআইনি কার্যধারার উল্লেখ করে বলা হয়, ৭ বছর আগে খারিজ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও দেশের ১১ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা আদালতে ২০২১-র মার্চ মাস পর্যন্ত এমন ৭৪৫-টি মামলা চলছে, যেখানে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬- এ ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে এবং সেই বাতিল হওয়া ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আর্জিতে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে শ্রেয়া সিঙ্ঘলের মামলায় ৬৬-এ ধারা বাতিল হওয়ার পরও দেশে এখনও ১,৩০৭ টি মামলা এই আইনে দায়ের করা হয়েছে৷ কীভাবে এই সব মামলা হয়েছে? কীভাবে এই সব মামলা এখনও চলছে? ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী এই আর্জি দায়ের করা হয়।
অ্যাটর্নি জেনারেল কেকে বেণুগোপাল সোমবার সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছেন, এই ধারা অসাংবিধানিক বলে খারিজ করে দেওয়ার পরেও আইনের বইয়ে আইটি আইনের ৬৬-এ ধারা এখনও রয়ে গিয়েছে। বেণুগোপাল বলেন, আইটি আইনের বইয়ে একটা ছোট তারা চিহ্নিত আকারে ও ‘ফুটনৈট’-এ বা পাদটিকায় উল্লেখ করে এই ধারা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে খারিজ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ওই পাদটিকা কেউ পড়ে না। তিনি আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনটি খারিজ করে দিয়েছে, এভাবেই বইয়ে থাকা উচিত৷ পুরানো আইন পাদটিকায় রাখা যেতে পারে।

বিচারপতি আরএফ নরিম্যানের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ বলেছে, এই ঘটনায় দেশের শীর্ষ আদালত স্তম্ভিত। ২০১৫-র ২৪ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইটি আইনের ৬৬-এ ধারা খারিজ করে দিয়েছে। ওই রায়ে এই ধারাকে অস্পষ্ট ও একতরফা বলে উল্লেখ করে হয়েছে।

আইটি আইন ২০০০-এর ৬৬-এ ধারা অনুযায়ী, অনলাইনে আক্রমণাত্মক মন্তব্যপূর্ণ পোস্টকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গন্য করা হয়েছিল এবং এক্ষেত্রে সাজার মেয়াদ নির্দিষ্ট ছিলো ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড।
PUCL-এর হলফনামায় বলা হয়েছ, ২০১৫-র পর থেকে এই ধারায় মহারাষ্ট্রে ৩৮১, ঝাড়খণ্ডে ২৯৫ ও উত্তরপ্রদেশে ২৪৫ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই সব মামলা কীভাবে চলছে ? দেশে যে আইন-ই নেই, সেই আইনে বিচার চলতে পারেনা৷এরপরই শীর্ষ আদালত বিরক্ত হয়ে এ বিষয়ে কেন্দ্রের বক্তব্য তলব করেছে৷

Previous articleমহামারি আবহে এবারও তৃণমূলের সবচেয়ে বড় সমাবেশ ২১ জুলাই হবে ভার্চুয়ালি
Next articleদেবাঞ্জন কাণ্ডের জের! বিধায়কদের সতর্কতার পাঠ দিল তৃণমূল