বিজেপি যুবনেতা রাজুর “অস্বাভাবিক” মৃত্যু নিয়ে ঘনীভূত রহস্য, উঁকি দিচ্ছে কিছু প্রশ্ন

বিজেপি যুবমোর্চার সহ-সভাপতি রাজু সরকারের মৃত্যুতে ইতিমধ্যেই স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছে কলকাতা পুলিশ। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে হাতে আসার পরই “অস্বাভাবিক” এই মৃত্যু অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলায় পর্যবসিত হতে পারে বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। মঙ্গলবার সকাল থেকেই জোর কদমে তদন্তে নেমে পড়েছে হেস্টিংস থানার পুলিশ। রহস্যের গভীরে পৌঁছতে বিজেপি যুবনেতা রাজুর মৃত্যুর ঘটনায় প্রায় ১০ জনের একটি তালিকা তৈরি করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে।

অসমর্থিত সূত্রের খবর সেই তালিকায় রাজুর ঘনিষ্ঠ নেতা প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়, যুব সভাপতি সৌমিত্র খাঁ-এর নাম রয়েছে। তাঁদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে কড়া পুলিশি জেরার মুখে পড়তে পারেন বিজেপির নেতারা। যেহেতু ঘটনার দিন এই নেতারা হেস্টিংস দফতরে ছিলেন, তাই এদের থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার গভীরে পৌঁছতে চাইছে পুলিশ।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার সাংগঠনিক বৈঠকে তুমুল উত্তেজনা, হাতাহাতি! বৈঠক থেকে বেরিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লেন যুবনেতা। এবং শেষপর্যন্ত মারা যান! মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে হেস্টিংসে বিজেপি কার্যালয়ে। সেখানেও তদন্তকারীরা যান। বিল্ডিং কেয়ারটেকার, নিরাপত্তা কর্মী থেকে শুরু করে অফিস স্টাফদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজে বচসার ছবি ধরা পড়লেও সেখানে হাতাহাতির কোনও প্রমাণ এখনও পর্যন্ত মেলেনি বলে জানা যাচ্ছে। যে ঘরের বৈঠক থেকে বাদানুবাদ বচসা ও মারামারির ঘটনা, সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ বা অন্য কারও মোবাইলে তোলা ফুটেজ হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ। বৈঠকে কারা কারা যোগ দিয়েছিলেন সেই পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করছে পুলিশ।

রাজু সরকারের “অস্বাভাবিক” মৃত্যু ঘিরে তদন্তকারীদের সামনে উঁকি মারছে যে প্রশ্নগুলি:

(১) রাজুর সঙ্গে কাদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ও হাতাহাতি হয়েছিল। সেই সূত্র ধরে তদন্তের দিক নির্দেশ করতে চাইছে পুলিশ।

(২) হেস্টিংস অফিসের পূর্ণাঙ্গ সিসি টিভি ফুটেজ কোথায় গেল? কারও নির্দেশে ইচ্ছা করে কি সিসিটিভি বন্ধ রাখা হয়েছিল?

(৩) একটি ডায়েরি নিয়ে বচসার সূত্রপাত। কী ছিল এই ডায়েরিতে? পুলিশ জানতে পেরেছে, সেই ডায়েরিতে নাকি নির্বাচনের সময় অনুদান তোলা ও তার খরচ লেখা ছিল।

(৪) কেন রাজুর পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশে অভিযোগ জানানো হলো না? কোনও প্রভানশালীর প্রচ্ছন্ন হুমকি ছিল কি?

(৫) বচসা ও হাতাহাতির ঠিক আগেই কেন ঘটনাস্থল ছাড়েন যুবমোর্চা সভাপতি সৌমিত্র খাঁ, ওই সময় প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় কোথায় ছিলেন? যদি তিনি তখন হেস্টিংস দপ্তরে থেকে থাকেন তাহলে ঘটনাস্থলে এলেন না কেন?

(৬) রাজু বেশ কয়েকবার সিঁড়ি দিয়ে চারতলায় ছুটে ছুটে ওঠানামা করেছে বলে জানা গিয়েছে। কেন সে লিফট ব্যবহার করল না? লিফট খারাপ ছিল, নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল?

(৭) অসুস্থ হয়ে পড়ার আগে উত্তেজিত হয়ে রাজু বেশ কয়েকবার ফোন করছিলেন। জোরে জোরে কথা বলছিলেন। কার কাছে তিনি ফোন করছিলেন? কী বলছিলেন?

সবমিলিয়ে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট-এর অপেক্ষায় পুলিশ। এই রিপোর্ট হাতে পেলে রহস্যের জট ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করবে বলেই মনে করছে তদন্তকারীরা। অন্যদিকে, বিজেপি নেতৃত্ব রাজুর মৃত্যু ঘটনা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ দিল্লি থেকে রাজুর মৃত্যুর প্রসঙ্গে ঘুরিয়ে যুবনেতার ভারী চেহারা এবং শারীরিক সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। যদিও ঘটনার আগে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল রাজু। বৈঠক শুরুর আগে সহকর্মীদের সঙ্গে সে হাসিঠাট্টাও করেছে। ফলে ঘটনার দিন সম্পূর্ণ শারীরিকভাবে সুস্থ ছিলেন রাজু।

আরও পড়ুন- বিজেপি শাসিত রাজ্য হরিয়ানাতে পিটিয়ে মারা হলো বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিককে

Previous articleচুঁচুড়ায় মদ্যপ স্বামীর কুড়ুলের কোপ স্ত্রীকে!
Next articleবিশ্ববাংলা সংবাদের সাংবাদিক-চিত্র সাংবাদিককে হেনস্থা বিজেপি সমর্থকের