হেলিপ্যাড জলের তলায়, মুখ্যমন্ত্রীর সফর বাতিলে হতাশ খানাকুল

সোমনাথ বিশ্বাস, খানাকুল: ঠিক ছিল আকাশ পথে হুগলির খানাকুলে বন্যা বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করবেন। এবং বন্যা কবলিত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেবেন। হুগলি জেলা প্রশাসন আগে থেকেই খানাকুল-১ অঞ্চলের ঘোষপুর বিবেকানন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠে অস্থায়ী হেলিপ্যাড তৈরি করেছিল। সমস্ত রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু বরুনদেবের বদান্যতায় যা বাতিল হয়ে যায়। একটানা বর্ষণে তাঁর হেলিপ্যাড সম্পূর্ণভাবে জলের নিচে চলে যায়। অগত্যা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খানাকুল-সহ হুগলির বন্যাকবলিত বিস্তীর্ণ অঞ্চল পরিদর্শন বাতিল করা হয়।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই মুখভার আকাশের। ফের নিম্মচাপের ভ্রুকুটি। ডিভিসি-সহ জেলায় বিভিন্ন বাঁধ থেকে জল ছাড়ায় অবস্থা শোচনীয়। হাওড়া, হুগলি ও পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো জেলাগুলিতে বন্যা পরিস্থিতি। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা খানাকুল, গোঘাট ও আরামবাগ মহকুমা অঞ্চলের বহু গ্রাম প্লাবিত। এই এলাকাগুলোর জল যন্ত্রণায় গ্রামের পর গ্রাম। বাড়ি, দোকান, অফিস, স্কুল বাড়িও ডুবে গিয়েছে। রাস্তার উপর এসে উঠেছেন গ্রামের মানুষ। গবাদিপশুদের জায়গাও রাস্তা। চাষের জমি জলের নিচে। বিপদসীমা ছাড়িয়ে বইছে এলাকার নদীগুলিও। চরম ভোগান্তিতে বাসিন্দারা।

হুগলির খানাকুল ও আরামবাগ মহকুমা অঞ্চলের পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক। জলের তলায় প্রায় ৬৫টি গ্রাম। নতুন করে জল বাড়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন গ্রামবাসীরা। যেদিকে চোখ যায়, সেদিকে শুধুই জল থৈথৈ অবস্থা। বিদ্যুৎহীন এলাকায় বানভাসী মানুষ। মোবাইলের নেটওয়ার্ক না থাকায় বাইরের জগৎ থেকেও বিচ্ছিন্ন। নেই পানীয় জল। কোনও কোনও এলাকায় সম্পূর্ণ ডুবে গিয়েছে একতলা বাড়ি। ফলে ছাদ হারিয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন রাস্তায়। ত্রিপল খাঁটিয়ে চলছে বসবাস।

এদিন মুখ্যমন্ত্রী আসবেন জেনে দুর্গত মানুষ বিশেষ করে বাড়ির মহিলারা ভিড় জমিয়েছিলেন ঘোষপুর হেলিপ্যাড-এর চারপাশে। মুখ্যমন্ত্রী আসার খবরে নতুন করে তারা বাঁচার স্বপ্ন দেখছিল। কিন্তু আবহাওয়ার প্রতিকূলতায় মুখ্যমন্ত্রীর সফর বাতিল হওয়ায় তাঁরা হতাশ মুখে বাড়ি ফেরেন। আবার আরামবাগের মায়াপুরের একটি আস্ত মার্কেট জলের তলায়। সেখানে কমপক্ষে ৪০ জন দোকানদারের বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। সবমিলিয়ে জল যন্ত্রণায় খানাকুল-গোঘাট-আরামবাগ-সহ হুগলি জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ।

হুগলি জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, দুর্গত এলাকায় ৮০টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। সেখানে কয়েক হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

 

Previous articleবৃষ্টি মাথায় হাঁটু জলে দাঁড়িয়ে দুর্গতদের কথা শুনলেন মুখ্যমন্ত্রী, দিলেন আশ্বাস
Next articleঅতি সক্রিয় মৌসুমী অক্ষরেখা, ৬ আগস্ট পর্যন্ত ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি কলকাতায়