“কান্ডারী অভিষেক” “দিদি PM হবে”, CPM মুখ্যমন্ত্রীর নাতির কণ্ঠে নিপীড়িত মানুষের গান

১৯৭৮ থেকে ‘৮৮ সাল পর্যন্ত ত্রিপুরার (Tripura) মুখ্যমন্ত্রী (Ex CM) ছিলেন সিপিএমের (CPIM) নৃপেন চক্রবর্তী (Nripen Chakraborty)। যিনি ত্রিপুরাবাসীর কাছে কাজের কাছের মানুষ বলেই পরিচিত ছিলেন। প্রকৃত বামপন্থী বলতে যা বোঝায় তার ষোলোআনা সত্ত্বাই বজায় ছিল প্রয়াত নৃপেনবাবুর মধ্যে। রাজনীতির মধ্যে দিয়ে মানব সেবায় ব্রতী হওয়ার জন্য অকৃতদার ছিলেন তিনি। ত্রিপুরার পঞ্চম মুখ্যমন্ত্রী সেই নৃপেন চক্রবর্তীর নাতি (নৃপেনবাবুর বড় দাদার ছেলের পুত্র) সন্দীপ চক্রবর্তী (Sandip Chakraborty) একের পর এক গান বাঁধছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee), অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhisek Banerjee) ও সর্বোপরি তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) ও দলের বিভিন্ন শাখা সংগঠনের হয়ে গান বাঁধছেন, সুর করেছেন, গলা দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি ত্রিপুরার নিপীড়িত মানুষকে নিয়েও গান তৈরি করেছেন এ রাজ্যের সরকারি কর্মচারী সন্দীপ চক্রবর্তী।

একুশে বাংলার ভোটে অভূতপূর্ব ফলাফল করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। সন্দীপবাবুর দাবি, এবার তেইশে ত্রিপুরায় তৃণমূলকে চাইছেন সে রাজ্যের নির্যাতিত, নিপীড়িত, অসহায়, অবহেলিত, দরিদ্র, বঞ্চিত মানুষ। ত্রিপুরায় সরকার গঠনের জন্য একমাত্র ও যোগ্য বিকল্প তৃণমূল।

সন্দীপ চক্রবর্তীর কথায়, “ত্রিপুরার মানুষ, কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপিকে দেখে নিয়েছে। কেউ রাজ্যের উন্নয়ন করতে পারেনি। কিন্তু পাশের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে উন্নয়নের জোয়ার বইয়েছেন, তাতে ত্রিপুরাবাসী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, পরের বার ত্রিপুরাতে মমতা সরকার। রাজ্যের বর্তমান শাসক দল বিজেপি ও মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব যে রাজ্য পরিচালনায় ডাহা ফেল, তা ত্রিপুরার পাহাড়ি অঞ্চলে উপজাতি নির্বাচনে মানুষ স্পষ্ট করে দিয়েছে। আর বাঙালি অধ্যুষিত সমতলে বাংলার মেয়েকেই চাইছে ত্রিপুরাবাসী।”

দাদু নৃপেন চক্রবর্তী সিপিএম জমানার দু’বারের মুখ্যমন্ত্রী। আদ্যপ্রান্ত বামপন্থী পরিবার থেকে তাঁর বড় হয়ে ওঠা। অথচ গান লিখছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলকে নিয়ে! বরাহনগরের বাসিন্দা সন্দীপবাবুর স্পষ্ট কথা, “আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভক্ত। আমি তাঁর সমর্থক। আমি দিদিকে শ্রদ্ধা করি। আমি বিশ্বাস করি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একমাত্র পারেন ত্রিপুরার মানুষকে বিপ্লব দেবের অন্ধকারময় জঙ্গল রাজত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে নতুন সূর্য দেখাতে। আমি মনে করি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে নৃপেন চক্রবর্তীর ছায়া রয়েছে। যে নৃপেন চক্রবর্তী ত্রিপুরার মানুষের কাছে মাটির মানুষ ছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বাংলার মা-মাটি-মানুষের মুখ্যমন্ত্রী। আমার কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজন প্রকৃত বামপন্থী। তাঁর কর্মকাণ্ডের মধ্যে প্রতিটি পরতে পরতে বামপন্থার নিদর্শন রয়েছে।”

ইতিমধ্যেই সন্দীপবাবু মমতা, অভিষেক ও তৃণমূলের গান গেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছেন। যা ত্রিপুরাতেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। একুশের সাফল্যের পর সর্বভারতীয় মঞ্চে ‘অভিষেক’ হয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বাংলা জয়ের পর এবার অন্য রাজ্য তৃণমূলকে নিয়ে যেতে চান দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। আর এই প্রেক্ষাপটে অভিষেককে ‘’আগামীর কান্ডারি’’ হিসেবে গানের ভাষায় তুলে ধরেছেন সিপিএমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের সদস্য। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বিপুল সাফল্যের পিছনে অভিষেকের অবদান প্রশ্নাতীত। দায়িত্বভার কাঁধে নিয়েই দলের সংগঠনকে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে ছড়িয়ে দিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তিনি। ত্রিপুরা তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কর্মীরা আওয়াজ তুলেছেন, ‘খেলা হবে ত্রিপুরাতও’। আর এই আবর্তেই ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যও গলা মেলালেন—‘ধরো হাল শক্ত হাতে, অভিষেকের সাথে ভারত জয় হবে রে…..’।

চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে গোটা দেশ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখতে চান। সেই ভাবনা সন্দীপ চক্রবর্তীর গানের কথায় ধরা পড়েছে —‘’দিকে দিকে উঠেছে আওয়াজ, দিদি এবার পিএম হবে, যুবরাজ সেনাপতি, ছাত্র-যুব সঙ্গে রবে…।’’ শুধু গান লেখা, সুর করা কিংবা গলা দেওয়া নয়, ত্রিপুরার প্রাক্তন বামপন্থী মুখ্যমন্ত্রী নৃপেন চক্রবর্তীর নাতি সন্দীপবাবু আগামী দিনে ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে প্রচারও করতে চান।

advt 19

 

Previous articleপ্রয়াত কিংবদন্তি ড্রামার চার্লি ওয়াটস
Next articleপ্রয়াত কিংবদন্তী ফুটবলার চন্দ্রশেখর