৯/১১ হামলা: পেরল দু’দশক! টাটকা রয়েছে স্মৃতি, কীভাবে ঘটেছিল আমেরিকার জঙ্গি হামলা?

৯/১১ হামলার পর পেরল দু’দশক। আজও সেই ঘটনা টাটকা। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকায় সন্ত্রাসের গভীর দাগ কেটে দেয় জঙ্গি হামলা। নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ারকে মুহূর্তে ধ্বংস করে দিয়েছিল সন্ত্রাসবাদ৷ শিশু বৃদ্ধ, মহিলা-সহ বেঘোরে প্রাণ যায় তিন হাজারের বেশি মানুষের৷

আরও পড়ুন: ৩৩ ঘণ্টা লড়াই শেষে মৃত্যুর কাছে হার মানল মুম্বইয়ের নির্যাতিতা

এক নজরে দেখে নেওয়া যায় ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার জঙ্গি হামলা…

সমস্ত নিরাপত্তা পেরিয়ে বস্টনগমী বিমানে ওঠে দুই হাইজ্যাকার৷ এর ২ ঘণ্টার মধ্যেই ৫৪ জন অপহরণকারী আমেরিকান এয়ারলাইন্সের বিমান ১১ হাইজ্যাক করার ছক কষে। তাদের ভিডিয়ো টেপ প্রকাশ্যে আসে৷ ততক্ষণে ওয়াশিংটন ডিউলস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পশ্চিম দিকের চেকপয়েন্টে নিরাপত্তা কর্মীদের নজর এড়িয়ে ঢুকে পড়েছিল সন্ত্রাসবাদীরা৷

এরপর লস অ্যাঞ্জেলেসমুখী আমেরিকান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ১১ টেক অফ করে বস্টন থেকে৷ সেই বিমানে ছিলেন ১১ জন ক্রু সদস্য, ৭৬ জন যাত্রী ও ৫ জন হাইজ্যাকার৷ অন্যদিকে বস্টন থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসগামী ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ১৭৫ টেক অফ করে কিছুক্ষনের মধ্যেই ৷ তার মধ্যে ছিলেন ৯ জন ক্রু এবং ৫১ জন যাত্রী। এবং ৫ জন হাইজ্যাকার। ফ্লাইট ১১-এর ক্রুরা বিমানবন্দরের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁদের বিমান অপহরণ করা হয়েছে৷ সকাল ৮.২০ লস অ্যাঞ্জেলেসগামী আমেরিকান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৭৭ ভার্জিনিয়ার ওয়াশিংটন ডিউলস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছাড়ে৷ সেই বিমানে ছিলেন ৬ জন ক্রু, ৫৩ জন যাত্রী ও ৫ জন অপহরণকারী। এরপর হাইজ্যাকার মহম্মদ আট্টা ফ্লাইট ১১ থেকে বিমানের কেবিনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। সকাল ৮.৩৭ ফ্লাইট ১১ থেকে হাইজ্যাকারের ট্রান্সমিশন পেয়ে বস্টন এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল মার্কিন বায়ুসেনার উত্তর-পূর্ব এয়ার ডিফেন্স সেক্টরকে সতর্ক করে৷ অন্যদিকে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৯৩ সান ফ্রান্সিসকোতে নেওয়ার্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে টেক অফ করে৷ ওই বিমানে ছিলেন ৭ জন ক্রু, ৩৩ জন যাত্রী ও ৪ জন হাইজ্যাকার। পাশাপাশি আমেরিকান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ১১ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ওয়ানের ঢুকে পড়ে৷ নর্থ টাওয়ারের ৯৩ তলা থেকে ৯৯ তলার মধ্যে আঘাত হানে ওই বিমান৷ ৯১ তলার উপরে আটকে পড়েন শতাধিক মানুষ৷ আর বিমানে থাকা সবাই ঘটনাস্থলেই মারা যান ৷

এরপর যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয় উদ্ধারকাজ৷ নর্থ টাওয়ারে পাঠানো হয় পুলিশ, দমকল ও ডাক্তারদের। খবর পান তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ৷ সেই সময় সারাসোটায় একটি স্কুল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন তিনি। এরপর পোর্ট অথরিটি ফায়ার সেফটি বিভাগ সাউথ টাওয়ারকে নিরাপদ  ঘোষণা করে। পোস্ট অথরিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট দুটি টাওয়ারই খালি করে দেওয়ার নির্দেশ জারি করে ৷। এর মধ্যে ফ্লাইট ১৭৫-এর কর্মীরা সান ফ্রান্সিসকোয় ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স অপারেটরকে সতর্ক করে জানান, তাঁদের বিমান অপহরণ করা হয়েছে ৷ বহু যাত্রী তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও করেন৷

অন্যদিকে ফ্লাইট ১৭৫ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার টু-তে সজোরে আঘাত হানে৷ সাউথ টাওয়ারের ৭৭ থেকে ৮৫ তলার মধ্যে বিল্ডিংকে এফোঁড় ওফোঁড় করে বেরিয়ে যায় বিমান৷ বিমানে উপস্থিত যাত্রীদের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়৷ সাউথ টাওয়ারেরও বহু মানুষ প্রাণ হারান৷ ভিতরে আটকে পড়েন শয়ে শয়ে মানুষ ৷

তারপরেই জর্জ বুশকে দ্বিতীয় হামলার কথা জানানো হয়৷ একে জাতীয় ট্র্যাজেডি বলে ঘোষণা করেন তিনি। এরপর ফ্লাইট ৭৭ আঘাত হানে পেন্টাগনে, মৃত্যু হয় বিমানে থাকা যাত্রীদের৷ এ ছাড়া একশোর বেশি সাধারণ মানুষ ও সেনাকর্মীও মারা যান৷ তারপরই ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রিশেন মার্কিন এয়ারস্পেস থেকে সমস্ত বিমান অবতরণ করানোর নির্দেশ দেয়৷ টানা ৫৬ মিনিট ধরে দাউ দাউ করে জ্বলার পর হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে সাউথ টাওয়ার।  বহুতলের ভেতরের ও তার আশপাশের প্রায় ৮০০ জনেরও বেশি মানুষ বেঘোরে প্রাণ হারান ৷

আরও পড়ুন: ৯/১১-তে তালিবান সরকারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাতিল, কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা

ওয়াশিংটন ডিসি থেকে মাত্র ২০ মিনিটের দূরত্বে পেনসিলভেনিয়ার কাছে একটি মাঠে আছড়ে পড়ে ফ্লাইট ৯৩৷ সেই বিমানের সব যাত্রী ও ক্রু মেম্বারদেরও মৃত্যু হয়৷ পেন্টাগনের পশ্চিম দিকের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ ধসে পড়ে। টানা ১০২ মিনিট ধরে জ্বলার পর নর্থ টাওয়ার হুরমুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। মারা যান ১৬০০-রও বেশি মানুষ৷ একই সঙ্গে ভেঙে পড়ে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ৭১। সেখানে কোনও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। কারণ ৪৭ তলা বিল্ডিং টি হামলা হওয়ার সম্ভাবনার কথা জেনে আগেই খালি করা হয়েছিল।
advt 19

 

Previous articleভবানীপুরে মুখ্যমন্ত্রীর রেকর্ড মার্জিনের প্রার্থনায় নন্দীগ্রামে মন্দির-মসজিদে প্রার্থনা
Next articleস্লোভেনিয়ার আমির ডেরভিসেভিচকে সই করালো ইস্টবেঙ্গল, ডার্বি খেলতে মুখিয়ে এই বিদেশি