দলীয় নির্দেশ উড়িয়ে বাবুল জানালেন, বিজেপির হয়ে প্রচার করব না

বিজেপির অন্দরে কার্যত কাছাখোলা পরিস্থিতি৷ স্পষ্ট হচ্ছে দলে ন্যূনতম কো-অর্ডিনেশনও নেই৷ সীমাহীন কোন্দলও ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে৷ ঘটনাপ্রবাহ বলছে, এই কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছে গেরুয়া শিবিরের শীর্ষস্তরও৷ গুটিকয়েক লোক দলের বৃহত্তর অংশকে আমল না দিয়েই নিজেদের ভাবনাচিন্তা দলের ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে৷

রাজ্যের আসন্ন নির্বাচনে বিজেপির তরফে শুক্রবারই ঘোষণা করা হয়েছে তারকা প্রচারকদের তালিকা৷ সেই তালিকায় আছে আসানসোলের দলীয় সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় নাম৷ আর নাম ঘোষণার পরই বাবুল প্রকাশ্যে জানিয়েছেন,বিজেপির হয়ে তিনি প্রচার করবেন না। এই ঘটনায় আরও একবার স্পষ্ট হয়েছে, দলের মধ্যে সমন্বয় না থাকার ঘটনা৷ প্রকাশ্যে এসেছে, গেরুয়া শিবিরের নেতারা কেউ কাউকে মানেন না, আমলও দেননা৷ যাকে স্টার-প্রচারক করা হয়েছে, তালিকা প্রকাশের আগে সেই প্রচারকও সম্ভবত কিছুই জানতেন না৷ হয়তো আর পাঁচজনের মতো তিনিও তাঁর এই পদপ্রাপ্তির কথা জেনেছেন তালিকা প্রকাশের পর৷

বাবুল গত ২ আগস্ট ঘোষণা করেছিলেন, সাংসদ পদে থাকলেও রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নিচ্ছেন৷ বিজেপির শীর্ষমহল সেই বাবুলকেই ভবানীপুরের উপনির্বাচনে তারকা প্রচারকের তালিকায় রেখেছে৷ ওই তালিকা প্রকাশের পরই তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কুনাল ঘোষ এক ট্যুইট বার্তায় বলেন, “বাবুল নাকি প্রত্যক্ষ রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছিলেন? তখনই বলেছিলাম নাটক। নাকি এখানে বিশেষ কোনো কারণ?”

আর এরপরই বাবুল ফের নিজের নাটক নিয়ে মঞ্চে অবতীর্ণ হন৷ এক সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে গেরুয়া-সাংসদ স্পষ্ট জানান,নাম থাকলেও ভবানীপুর বিধানসভা উপনির্বাচনে বিজেপির হয়ে প্রচার করবেন না। বাবুল বলেছেন, “রাজনৈতিক সন্ন্যাস থেকে সরে আসার প্রশ্ন নেই৷ দল আমাকে তারকা প্রচারকের তালিকায় রেখেছে, সেজন্য বিজেপিকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি৷”
আর এরপরই বিজেপির কেন্দ্রীয়স্তরের সিদ্ধান্ত উড়িয়ে দিয়ে জানান, “পরিষ্কার করে বলেছিলাম, রাজনৈতিক মঞ্চে দেখা যাবেনা৷ আমি কোনও প্রচারে থাকব না৷ আমাকে দেখতে পাবেন ন৷ আমার অগ্রাধিকার এখন আসানসোলের মানুষ”৷

বাবুল একথা জানালেও বিজেপি রাজ্য সভাপতি স্পষ্ট জানিয়েছেন, বাবুল প্রচারে থাকবেন৷ বাবুলকে একজন ‘সুপারস্টার’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷ দিলীপ ঘোষের মন্তব্য নিয়েও মুখ খুলেছেন বাবুল৷ বলেছেন, “আমাকে সুপারস্টার প্রচারক বলার জন্য ধন্যবাদ৷ তবে ব্যক্তিগতভাবে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তা থেকে সরবো না৷ অকস্মাৎ বা আবেগের বশে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এটা ভুল ধারণা ৷ সক্রিয় রাজনীতিতে দেখা যাবে না আমায়৷ আমি কোনও প্রচারে থাকবো না”৷

প্রসঙ্গত, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি বাবুল সুপ্রিয়কে টালিগঞ্জ কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থী করেছিল৷ ওই কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের অরূপ বিশ্বাসের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন বাবুল। ফলপ্রকাশের কিছুদিনের মধ্যেই মন্ত্রিত্বও খোয়াতে হয় তাঁকে। আর এর পরই রাজনৈতিক সন্ন্যাসের কথা ঘোষণা করেন বাবুল। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বারবার বোঝানোর চেষ্টা করলেও সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরতে চাননি আসানসোলের সাংসদ। শুক্রবার বিজেপির তারকা প্রচারকের তালিকায় বাবুলের নাম ঘোষণার পর রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছিল, তবে কি সন্ন্যাস ভুলে ফের সক্রিয় হবেন বাবুল? সেই জল্পনার উত্তর দিয়ে ফের একবার ঘরের ঝগড়া বাইরে টেনে আনলেন বাবুল সুপ্রিয় ৷ দলের শীর্ষস্তরের সিদ্ধান্ত এভাবে সরাসরি উড়িয়ে বুঝিয়ে দিলেন, বিজেপির সংসারে এখন আর সুখ নেই৷ রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, দলের নির্দেশ এভাবে প্রত্যাখান করার পর গেরুয়া-নেতৃত্ব কী সিদ্ধান্ত নেয়৷

advt 19

 

Previous articleবাঙালিকে অসম্মান করে নিজেদের পায়ে কুড়ুল মারছে বিজেপি
Next articleবঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ, দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস