বাঙালিকে অসম্মান করে নিজেদের পায়ে কুড়ুল মারছে বিজেপি

স্বপন দাশ( লেখক রাজনৈতিকভাবে আর এস এস সদস্য ও পুরনো বিজেপি সংগঠক)

বাঙালিকে ভারতীয় হইতে হইবে তাহা বাঙালির বাধ্যবাধকতা। বাঙালি ব্যতিত সবারই প্রাদেশিক জাতি হিসাবে অধিকার অর্জনের অধিকার আছে।
বিজেপি সর্ব ভারতীয় স্তরে বাঙালি প্রেমিক হিসাবে পরিচিত। কেমন তার কিছু নমুনা দেওয়া যেতেই পারে।ঝাড়খন্ড এ ১৮% বাঙালি কিন্তু মাত্র ১ জন বাঙালি বিধায়ক, কোন বাঙালিকে বিশেষ গুরুত্ব নৈব নৈব চ ।

আসাম এ বাঙালি হিন্দুরা ঢেলে ভোট দেয় বিজেপিকে বিনিময়ে ডিটেনশন ক্যাম্প ।
বিহারে বেশীরভাগ ডাক্তার উকিল অধ্যাপক বাঙালি কোন বাঙালি বিজেপির এম এল এ নেই, দু একজন কে হারার জন্য দাঁড় করানো হয়, রাজ্য কমিটির অফিস বেয়ারার? ছেলের হাতের মোয়া নাকি? দয়ায় আছো যেমন চাইবো তেমনি চলতে হবে।

উ: প: এ বেনারস এলাহাবাদ সহ সর্বত্র ভালো শিক্ষিত বাঙালিরা শুধু বিজেপিকে ভোট দেবে, কোন কমিটিতে যেন ঢোকার কথা না ভাবে।
দিল্লির বেশী বুদ্ধিজীবি বাঙালি কিন্তু দিল্লির কোন বিজেপির কমিটিতে বাঙালি? আছে তো, অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় আর স্বপন দাশগুপ্ত ।
অন্য রাজ্যের কথা বলে লজ্জা দেওয়ার ইচ্ছা নেই।
বাঙলাতে ১৭ শতাংশ অবাঙালির ৭ শতাংশ মুসলমান, ১০ শতাংশ অবাঙালি হিন্দুই বাঙালির ভূত ভবিষ্যত, বিহার ও উ: প: এর ঠাকুর বামুনরাই শেষ কথা বলে এখন, আগে বড়বাজারের যুগল জৈথালিয়া, জালুকা, বেরিওয়ালারা শেষ কথা বলতো কারণ এরাই টাকা তুলতেন, (বিশেষ করে যুগলজী তো সংঘের মুখ হিসাবে দলকে তার অংগুলি হেলনে চালনা করতেন, এই লবিই তপন শিকদারকে দল থেকে সরিয়েছিলেন)তার থেকে কিছু দিয়ে কিছু বাঙালি পুশতেন। এখনো কোষাধক্ষ পদ দুটির কোনটিতেই বাঙালিরা যোগ্য বিবেচিত হন না, কারন বাঙালিরা বিশ্বাস যোগ্য নন।

প্রিয়াংকা টিবরেওয়ালের ভবানীপুর এ বিজেপির প্রাথী হওয়াতে অবাক হইনি, স্বাভাবিক, বাঙালি হিন্দুর দায়বদ্ধতা তাদের বিজেপিকে সমর্থন করতে হবে। দক্ষিন কলকাতায় বিজেপির সব থেকে দুর্বল সংগঠন, ২ মের পর রক্তক্ষরণ হয়ে চলেছে, থামার লক্ষন নেই, যেমন দিলীপ ঘোষের বাক্য বর্ষন থামার লক্ষন নেই, বাংলায় বিজেপিকে হিমঘরে পাঠানোর জন্য তিনি বদ্ধ পরিকর। ভবানীপুর এ ৯০ শতাংশ বুথে বুথ এজেন্টই দেওয়া অসম্ভব। কাউনটিং এজেন্ট দিতেই কালঘাম ছুটবে।
ব্যারাকপুর এ বাঙালি হিন্দুরা মূখ ফেরানোর মূল হোতা যিনি সেই অর্জুন সিং এই শিক্ষিত বনেদী বাঙালি অধ্যুষিত ভবানীপুরে বিজেপির নির্বাচনী প্রমূখ সাথে সঞ্জয় সিং, গৌতম চৌধুরী, আরো কয়েকজন আছেন। বাঙালি অসহায়।

তথাগতদার অনেক কিছুই আমার পছন্দের নয় তবুও ভবানীপুরে সুবোধকে দাঁড় করানোর কথা বলে ভুল বলেননি। প্রিয়াঙ্কার চাইতে দলের জন্য হয়তো ভালো হতো। এমনি বিজেপি ৫০০০০ এর বেশী ভোটে হারবে তবুও বাঙালী সেন্টিমেন্ট তো সারা বাংলাতে বিজেপির সংগে থাকতো।
দিলীপবাবুর অসংলগ্ন কথা বার্তা, মহিলাদের অসন্মান করার জন্য ৩-৪ শতাংশ ভোট বিজেপি হারিয়েছিল, ৪-৫ শতাংশ মানুষ বিজেপিকে বাঙালী বিরোধী দল মনে করে ভোট দেয়নি অনেকে ভোট দিতে যাননি কারন কিছু অবাঙালী বিজেপি নেতার বাঙালি বহুল এলাকায় দাপাদাপি মেনে নেওয়া কঠিন ছিল।ভবানীপুরের বাঙালিরা মাটি হারানোর ভয়ে তো সিঁটিয়ে থাকেন, বিজেপিকে ভোট দিলে ভিটে মাটি হারাতে হবে ভাবেন।

ভুল থেকে শুধরানোর কোন চেষ্টা করা হলো না, একই ভুল ১৯৯৫ সালে তপন শিকদার, রাহুল সিনহা এবং পরশ দওর প্ররোচনায় করেছিলেন Bishnu Kant Shastri কে সভাপতি করে, আমরা কয়েকজন পই পই করে বলেছিলাম Vishnuji নিশ্চয় যোগ্য, বহু বাঙালি অন্য রাজ্যে অনেক বেশী যোগ্য কিন্তু সংঘ বিজেপির বাইরে থাকা বাঙালির ধারনা বিজেপি বাঙালির দল নয়। তপন শিকদারের ধারনা ছিল ১৯৯১ তে ১৩ শতাংশ ভোট ১৯৯৩ র পঞ্চায়েত নির্বাচনে ২২ শতাংশে পৌঁছে গেছে ওনার কল্যানে, তাই বকলমে উনি রাহুল পরশকে দিয়ে আর কিছু ঝড়তি পড়তি মাল দিয়ে চালাবেন, সারা বাংলাতে ভাষন দিয়ে ঘুরবেন, দল ক্ষমতায় আসবে। ১৯৯৬ এ বিজেপি পুনরায় ৫ শতাংশে ফিরে আসে।

আবার সেই ভুল, অযোগ্যদের দিয়ে দল চালনা, টাকা পয়সা দিয়ে গরু ছাগল কেনা যায়, কিছু বাঙালিকে কেনা যায় কিন্তু সব বাঙালীতো গরু ছাগল নয় যে কিনবেন? হাজার হাজার বিজেপি কর্মী মুখ বুজে কাজ করেন, এরা যে কোন দলের সম্পদ, এরাই বিজেপিতে বিপদে আছেন, এরাই জীবন মন দিয়ে করে বিজেপি করেন, এরা কিছু পান না, যে মহিলারা বিজেপিতে দিন রাত অতীতে কাজ করতেন তাদের বর্তমানে কারোরই কোন জায়গা নেই কারন এখন দরকার আগে দর্শনধারী পরে গুন বিচারী, কয়েকমাস আগে কৈলাশ আর শিব প্রকাশকে খুশি করলেই নাকি অনেকে পদ পেয়েছেন গল্প শোনা যায় বিভিন্ন জেলাতে বা রাজ্যে। জাগো বাঙালি জাগো।

আমার প্রিয়াংকা টিবরেওয়ালের প্রতি কোন রাগ নেই, আমার পরিচয়ই নেই, ওনার সম্পর্কে জানতাম উনি বাবুল সুপ্রিয়র বাংলাতে কাছের লোক, একজন বাঙালি হিসাবে সমস্ত বাঙালি বিজেপিকে কিভাবে দেখছে ভাবছে সেটাই বললাম।

ভবানীপুর বিজেপির নন্দীগ্রাম হয় কিনা দেখার, হবে না সবাই জানে, কত বেশী ভোটে বিজেপি হারবে সেটাই দেখার, হার কার প্রাথী’ না দলের সেটাই দেখার, হারের পর হারের দায় নিয়ে কারা পদ থেকে সরেন সেটাই দেখার।

পুনশ্চ: আমি মনে প্রাণে ভারতীয়, বাঙালি হিন্দু, কিছু মানুষের লোভ আত্মঅহংকার সমগ্র বাঙালী সমাজকে খাদের কিনারায় দাঁড় করিয়েছে, কে বাঁচাবে বাঙলাকে?
মানুষ গত নির্বাচনে বিজেপিকে চেয়েছিলেন, TMC কে নয়, গরীব মানুষরা জানে ধর্মের আগুনে রুটি সেঁকা যায় না, তাদের লড়াই ছিল তাদের হকের টাকা যারা চুরি করেছে তাদের বিরুদ্ধে, বিজেপি মমতার সংগে লড়তে চেয়েছিল ঐসব চোরদের কাছে টেনে নিয়ে। মমতা বন্দোপাধ্যায়কে আমরাই বিশ্ব বাঙালির দরবারে বাঙালির মুখ করে তুললাম।

advt 19

 

Previous articleমন্ত্রী-বিধায়কদের নামে চার্জশিট দেওয়ায় “আইনি গলদ”, এবার সিবিআই-ইডিকে তলব স্পিকারের
Next articleদলীয় নির্দেশ উড়িয়ে বাবুল জানালেন, বিজেপির হয়ে প্রচার করব না